২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ১০:৪০:২৬ পূর্বাহ্ন


ঝুঁকিপুর্ণ মানুষের জেন্ডার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৫
ঝুঁকিপুর্ণ মানুষের জেন্ডার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে


জেন্ডার সহিংসতাকে সঠিক লেন্স দিয়ে দেখতে হবে যাতে করে নারী, তৃতীয় লিঙ্গ ও শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধীসহ সকল ঝুঁকিপুর্ণ মানুষকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। বর্তমানে জেন্ডার সহিংসতা বিষয়ে তথ্যের অপর্যাপ্ততার জন্যও বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ জন্য সরকারিভাবে ডাটাবেজ তৈরিসহ এ বিষয়ে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থাসমূহকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। ১৪টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারভিত্তিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ এর উদ্যোগে “কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় কাঠামো শক্তিশালীকরণ” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। গত ২১ অক্টোবর ২০২৫ (মঙ্গলবার) দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করে নিরাপদ ও সহিংসতামুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানওয়ার জাহান ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বিলসের নির্বাহী পরিচালক ও শ্রম সংস্কার কমিশন-২০২৪ এর প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ।

বৈঠকে জেন্ডার প্ল্যাটফর্মের পক্ষে মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন। বৈঠক সঞ্চালনা করেন বিএলএফ নির্বাহী পরিচালক এ. কে. এম. আশরাফ উদ্দিন। বৈঠকে আইএলও বাংলাদেশ এর পরিচালক ম্যাক্স টুনন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও অনুসন্ধান) বেগম মেহেরুন্নেসা, শ্রম অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহ আবদুল তারিক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক জুলিয়া জেসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. মোসাম্মৎ নুরজাহান খাতুন, গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ) এর যুগ্ম সমন্বয়কারী ও এনসিসিডব্লিউই এর সদস্য সচিব নাইমুল আহসান জুয়েল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি) সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহমেদ, শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর যুগ্ম সমন্বয়কারী, আহসান হাবিব বুলবুল, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার সহ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, শ্রম অধিদপ্তর, কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ব্র্যান্ডস, নিয়োগকর্তা সংগঠন, শ্রমিক অধিকার সংগঠন, সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন এবং শিক্ষাবিদবৃন্দ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

শ্রম সচিব বলেন, জেন্ডার সহিংসতাকে উপযুক্ত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে এবং সেভাবেই একে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি মন্তব্য করেন এ ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রক্রিয়া অবশ্যই নারীবান্ধব হতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে বিষয়টিকে সেভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, পরিবার থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত সর্বত্র সচেতনতা জোরদার করতে হবে। রাষ্ট্রের পাশাপাশি জনগণ সমানভাবে এগিয়ে এলে সমস্যা মোকাবেলা সহজ হবে।

ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা ও হয়রানি কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অগ্রগতি সত্ত্বেও, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী কর্মীরা হয়রানি, ভয় দেখানো এবং সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন যা তাদের অধিকার এবং তাদের উৎপাদনশীলতা উভয়কেই ক্ষুণ্ন করে। দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি কর্মক্ষেত্রে আপত্তিকর মন্তব্য এবং যৌনভাবে আপত্তিকর ভাষার মুখোমুখি হন (অ্যাকশন এইড, ২০১৫)। কর্মক্ষেত্রে কর্মরত নারীরা যখন জেন্ডার সহিংসতার শিকার হন তখন তাদের কাজের অধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে লঙ্ঘিত হয়। এই ধরনের সহিংসতা এবং হয়রানি কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক, কর্মচারিদের সাথে সম্পৃক্ততা এবং প্রতিষ্ঠানের সুনামকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে, যার ফলে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং আর্থিক ক্ষতি হয়।

বক্তারা ২০০৯ সালের হাইকোর্টের রায়- কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনাসমুহ বাস্তবায়ন, আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন পাস এবং নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও শ্রম সংস্কার কমিশন এর যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ক সুপারিশসমুহ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। তারা বলেন, যদিও বাংলাদেশ সরকার এই বছরের আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে আইএলও কনভেনশন-১৯০ অনুসমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবুও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোন ঘোষণা আসে নি। তারা আশা করেন, শীঘ্রই এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হবে। তারা উল্লেখ করেন, কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি গঠন এবং অভিযোগ বাক্স স্থাপনের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। সরকার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করলেও এই প্রক্রিয়ায় ধীরগতি রয়েছে এবং কার্যকর বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে, ১৪টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার সংস্থার জোট জেন্ডার প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ, সরকার, নিয়োগকর্তা, ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক সমাজ সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সম্পৃক্ত করে কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সহিংসতা নির্মূলের জন্য সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে আসছে।

শেয়ার করুন