২৬ ফেডারেল প্লাজায় অভিবাসীদের অমানবিকভাবে আটক
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে অবস্থিত ২৬ ফেডারেল প্লাজায় অভিবাসীদের অমানবিকভাবে আটক রাখার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক ফেডারেল জজ লুইস এ. কাপলান কঠোর সমালোচনা করেছেন। ডো বনাম আইস ক্লাস অ্যাকশন মামলায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর বিরুদ্ধে প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মামলাটি দায়ের করেছিল আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, নিউইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, মেক দ্য রোড নিউইয়র্ক এবং আইন সংস্থা ওয়াং হেকার এলএলপি। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আইসিই অভিবাসীদের এমন ভবনে আটকে রেখেছে, যা কখনোই রাতভর বা দীর্ঘমেয়াদি আবাসনের জন্য প্রস্তুত করা হয়নি।
জজ কাপলান তার রায়ে উল্লেখ করেন, আইস এসব মানুষকে এমন স্থানে রেখেছে যা সংখ্যা সামলানোর জন্য অত্যন্ত ছোট এবং যেখানে রাত কাটানোর কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, সঠিকভাবে খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এ ধরনের স্থাপনায় কাউকে মানবিকভাবে রাখা যায় না। আদালত আরো উল্লেখ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেককে অভিবাসীসহ সংবিধান ও আইনের অধীনে ন্যায্য ও মানবিক আচরণের অধিকার দেওয়া বাধ্যতামূলক। রায়ে আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে প্রতিটি আটক ব্যক্তির জন্য অন্তত ৫০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ করতে হবে। প্রতিদিন তিন বেলা খাবার সরবরাহ, স্যানিটারিসামগ্রী, ঘুমানোর ম্যাট ও নতুন বিছানা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে আটক ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোপনীয়ভাবে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দিতে হবে। এই রায়ের মাধ্যমে আগস্টে জারি করা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাটিকে আরো প্রসারিত করা হলো।
এএনসিএলইউর ন্যাশনাল প্রিজন প্রজেক্টের সিনিয়র কাউন্সেল ইউনিস চো আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আইসিইর কর্মকাণ্ড অমানবিক, বেআইনি এবং সংবিধানবিরোধী। তার মতে, কাউকে চিকিৎসা, আইনজীবীর সহায়তা কিংবা মৌলিক মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। একইভাবে মেক দ্য রোড নিউইয়র্কের কো-লিগ্যাল ডিরেক্টর হ্যারল্ড সোলিস মন্তব্য করেন, মানুষকে অবমাননাকর পরিবেশে আটকে রাখার নীতিকে আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে, যা অভিবাসীদের জন্য একটি বড় জয়। এনওয়াইসিএলইউর সহকারী আইনি পরিচালক ববি হজসন বলেন, আদালতের এই নির্দেশ সংবিধান রক্ষার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা আইসিইকে আর ২৬ ফেডারেল প্লাজায় অমানবিকভাবে মানুষ আটক রাখতে দেবে না।
অন্যদিকে আদালতের রায়ের পরপরই আইসিই ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য না আসলেও পরে এক বিবৃতিতে তারা অভিযোগ অস্বীকার করে জানায় যে ২৬ ফেডারেল প্লাজা কোনো ডিটেনশন সেন্টার নয়, বরং একটি প্রসেসিং সেন্টার। তাদের দাবি, সেখানে আটক ব্যক্তিদের খাবার, চিকিৎসা এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের যথাযথ সুযোগ দেওয়া হয়। তবে আদালতে উপস্থাপিত নথি ও সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখা যায়, গত মে থেকে জুলাই মাসে একসঙ্গে প্রায় ২০০ জন পর্যন্ত লোককে সেখানে রাতের পর রাত আটকে রাখা হয়েছিল। এমনকি এক ভিডিওতে আটক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কুকুরের মতো রাখা হয়েছে।
অভিবাসন অধিকারকর্মীরা আদালতের এই রায়কে বড় ধরনের বিজয় হিসেবে দেখছেন। তবে একই সপ্তাহে নিউইয়র্কের আরেক ফেডারেল জজ অভিবাসন আদালত প্রাঙ্গণে আইসিইর লোকজন গ্রেফতারের প্রথা বন্ধে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে আদালত চত্বরে মুখোশধারী ফেডারেল এজেন্টদের অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পথ আপাতত খোলা রইলো।
এ মামলার অগ্রগতিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল। গত ২ আগস্ট এএনসিএলইউ, এনওয়াইসিএলইউ, মেক দ্য রোড নিউইয়র্ক এবং ওয়াং হেকার এলএলপি ক্লাস অ্যাকশন মামলা দায়ের করে। ১২ আগস্ট আদালত একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে যেখানে প্রতিজনের জন্য ন্যূনতম ৫০ বর্গফুট জায়গা ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮ আগস্ট আইসিইর সহকারী ফিল্ড অফিস ডিরেক্টর ন্যান্সি জানেল্লো লিখিত জবানবন্দিতে দাবি করেন যে, বর্তমানে কেবল ৮ জন আটক রয়েছেন। তবে জজ কাপলান এ তথ্যকে অপর্যাপ্ত ও অবিশ্বাসযোগ্য বলে অভিহিত করেন। অবশেষে ১৭ সেপ্টেম্বর জজ কাপলান প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে অস্থায়ী আদেশকে আরো প্রসারিত করেন এবং স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দেন যে, আইসিই অভিবাসীদের অমানবিক পরিবেশে আটকে রাখতে পারে না।