ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস
২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ দূতাবাস থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য রেকর্ডসংখ্যক ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে মোট ৫২ হাজার ৬৬০টি ভিসা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭৭১টি অভিবাসী বা ইমিগ্র্যান্ট ভিসা এবং ৩৯ হাজার ৮৮৯টি অ-অভিবাসী বা নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা অন্তর্ভুক্ত। ২০২৩ সালের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি, যা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের আগ্রহের ধারাবাহিক বৃদ্ধি নির্দেশ করে। অ-অভিবাসী ভিসার মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশটি ছিল পর্যটন ও ব্যবসা বি -১/বি-২) ক্যাটাগরির, যার সংখ্যা ২৫ হাজার ৬৭৪টি। এরপর শিক্ষার্থী ভিসা (এফ-১) ক্যাটাগরিতে ৬ হাজার ৩৮২টি, কাজ বা বিনিময় কর্মসূচি (জে-১, এইচ-১ বি, এল-১) ক্যাটাগরিতে ৩ হাজার ৪১১টি, সরকারি ও কূটনৈতিক (এজি) ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৯০২টি এবং অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ভিসা যেমন ট্রানজিট ও চিকিৎসা উদ্দেশ্যে মোট ২ হাজার ৫২০টি ভিসা প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপীও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ইস্যু ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বৈশ্বিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ অর্থবছরে মোট ১১ দশমিক ৫৮২ মিলিয়ন ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ১২ হাজার ২৫৮টি অভিবাসী ভিসা এবং ১ কোটি ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৬টি অ-অভিবাসী ভিসা অন্তর্ভুক্ত। এটি ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ বৃদ্ধি। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও শিক্ষাখাতে চাহিদা পুনরুদ্ধারের কারণে এই প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।
বাংলাদেশে অ-অভিবাসী ভিসার মধ্যে শিক্ষার্থী ও পর্যটক ভিসায় বিশেষ প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরামর্শক সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, গত বছর ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভিসার ক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, এবং সাক্ষাৎকারের অপেক্ষার সময় কমাতে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি দূতাবাস অতিরিক্ত কনসুলার কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি, শিক্ষাগত সহযোগিতা, ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির ফলে ভিসা ইস্যুর হার ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্বাস্থ্যখাতে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার আশায় অনেক তরুণ যুক্তরাষ্ট্রমুখী হচ্ছেন।
তবে অনেক আবেদনকারী অভিযোগ করেন, ভিসা সাক্ষাৎকারের তারিখ পাওয়া এবং প্রশাসনিক যাচাই প্রক্রিয়ার বিলম্ব এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। অনেকেই জানান, আবেদন জমা দেওয়ার পর মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে সাক্ষাৎকারের জন্য, যা তাদের ভ্রমণ বা শিক্ষা পরিকল্পনাকে ব্যাহত করছে। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, ২০২৫ সালে ভিসা প্রক্রিয়াকে আরো সহজ ও দ্রুত করার জন্য অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ব্যবস্থা উন্নত করা হবে এবং আঞ্চলিক ভিসা সহায়তা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।