২৮ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:২০:২১ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশ বন্দর পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগ বিতর্ক
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১১-২০২৫
বাংলাদেশ বন্দর পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর নিয়োগ বিতর্ক


কোনো সন্দেহ নেই বাংলাদেশের বন্দরসমূহ সেগুলো নদীবন্দর বলুন বা বিমানবন্দর বলুন সেগুলোর পরিচালনায় প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, ব্যাপক দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৪ বছরে কোনো সরকার এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। দুর্নীতিপরায়ণ মাফিয়া চক্র কিছুতেই কোনো পরিকল্পনা সফল হতে দেয়নি। আঞ্চলিক পর্যায়ে বলুন বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলুন অন্যা দেশের বন্দরসমূহ দেশি- বিদেশি পুঁজির স্বচ্ছ এবং পরিকল্পিত বিনিয়োগে অনেক এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের বন্দর সুবিধার অদক্ষতা এবং দুর্নীতির কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। দক্ষ বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছে। জনগণ বন্দরগুলো থেকে প্রকৃত সুবিধা লাভে বঞ্চিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ করুন বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন এলাকা বিশেষত চট্টগ্রাম এলাকার বন্দরগুলোর ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব। জনশ্রুতি আছে দীর্ঘদিন ধরেই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে চীনের প্রভাব চ্যালেঞ্জ করার জন্য পরাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ লাভে প্রভাব বিস্তার করতে সচেষ্ট আছে। অপসারিত প্রধানমন্ত্রী নানা সময় বলেছেন বিদেশি চাপে চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার বিষয়ে অসম্মতির কথা। অনেকের ধারণা এ বিষয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর অনড় মনোভাব তার বিষয়ে পশ্চিমা শক্তি বিরূপ মনোভাবের অন্যতম কারণ।

সবকিছু মিলিয়ে বলবো দক্ষ ব্যক্তিখাতের বিদেশি পুঁজি এবং বিদেশি বিনিয়োগে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই বিনিয়োগ দেশের স্বার্থে স্বচ্ছভাবে নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের। জুলাই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বিদ্যমান সংবিধানের আড়ালে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার কোনোভাবেই জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। অথচ সরকার ইতিমধ্যেই তড়িঘড়ি করে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি এবং ঢাকার কাছে একটি টার্মিনালের অপারেশন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আড়ালে বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের একটি মূল স্থাপনা একটি বিতর্কিত কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের জোর তৎপরতা বিদ্যমান আছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘদিন কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের বিবেচনায় জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার জন্য সংলাপ করেছে। সবাই জানে ঐক্যের নামে অনৈক্য এবং বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এ দীর্ঘকালীন সংলাপে বন্দরগুলোর অপারেশন বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তর কিংবা বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত, সাস্থ্য, শিক্ষা সেক্টরে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে কেন অন্তর্বর্তী সরকার সংলাপ করেনি, সম্পাদিত চুক্তিগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনমনে বিতর্ক এবং বিরোধ আছে। সরকার পরবর্তী নির্বাচিত সরকাকে এ বিষয়ে সংকটে রেখে যাচ্ছে।

সঠিকভাবে সব স্টেকহোল্ডারকে জানিয়ে নির্বাচিত সরকার দেশের স্বার্থে যে কোনো সেক্টরে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য চুক্তি করতে পারে। কিন্তু এ কাজ কেন তড়িঘড়ি করে জনগণকে অন্ধকারে রেখে একটি অনির্বাচিত সরকার বিতর্কিত পথে সম্পাদন করবে? বাংলাদেশ কি পারবে আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের চাপ সামাল দিতে? পারবে পরাশক্তিগুলোর দ্বন্দ্বের ক্রীড়াভূমি হওয়ার ঝুঁকি নিতে?

শেয়ার করুন