১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০১:২৯:৩৯ পূর্বাহ্ন


ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করলে স্ন্যাপ বন্ধের হুমকি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১২-২০২৫
ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করলে স্ন্যাপ বন্ধের হুমকি স্ন্যাপ


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন নিউইয়র্কসহ অন্তত ২০টি অঙ্গরাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে যে, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি স্ন্যাপের সুবিধাভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ না করলে প্রশাসনিক খাতে বরাদ্দ ফেডারেল অর্থ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, জালিয়াতি ঠেকাতে স্ন্যাপ সুবিধাভোগীদের নাম, সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর এবং অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য প্রয়োজন। তবে নিউইয়র্কসহ সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যগুলোর নেতারা বলছেন, এ দাবি বেআইনি এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য মারাত্মক হুমকি।

নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল ও রাজ্য কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের অর্থ বন্ধ করা হলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ খাদ্যসংকটে থাকা নিউইয়র্কবাসীর জন্য মারাত্মক প্রভাব পড়বে এবং তা বিদ্যমান আদালতের নির্দেশনারও লঙ্ঘন হবে। তাদের মতে, ফেডারেল সরকারের এই হুমকি অন্তত তিনটি ফেডারেল আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরিপন্থী, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় কোনো রাজ্যকে স্ন্যাপ তহবিল থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

মার্কিন কৃষিমন্ত্রী ব্রুক রোলিন্স ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে যেসব রাজ্য স্ন্যাপ সুবিধাভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফেডারেল সরকারের কাছে হস্তান্তর করছে না, সেসব রাজ্যে স্ন্যাপ কর্মসূচি পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত প্রশাসনিক তহবিল পাঠানো হবে না। তিনি বলেন, এ তথ্য ব্যবহার করে কল্যাণ কর্মসূচিতে জালিয়াতি রোধ করাই সরকারের লক্ষ্য। তবে পরে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতরের এক মুখপাত্র স্পষ্ট করেন, সরাসরি খাদ্য সহায়তা বন্ধ করা হচ্ছে না; কেবল প্রশাসনিক ব্যয় বাবদ অর্থ স্থগিত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতর জানায়, তারা একটি ‘ইন্টেগ্রিটি টিম’ গঠন করেছে, যার কাজ হলো কল্যাণ কর্মসূচিতে অনিয়ম শনাক্ত করা। দফতরের দাবি, ২৮টি অঙ্গরাজ্য কোনো আপত্তি ছাড়াই তথ্য সরবরাহ করেছে এবং সেসব রাজ্যে ১ লাখ ৮৬ হাজার মৃত ব্যক্তির নামে স্ন্যাপ সুবিধা গ্রহণের তথ্য পাওয়া গেছে। রোলিন্সের ভাষ্য অনুযায়ী, এতে বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় সম্ভব। একই সঙ্গে ডেমোক্র‍্যাট-নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যগুলোর সমালোচনা করে ইউএসডিএর এক মুখপাত্র বলেন, তারা নাকি মার্কিন করদাতাদের স্বার্থের চেয়ে অবৈধ অভিবাসী ও অপরাধীদের সুরক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

অন্যদিকে নিউইয়র্কের অফিস অব টেম্পোরারি অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যাসিস্ট্যান্স, যারা রাজ্যে স্ন্যাপ কর্মসূচি পরিচালনা করে, জানিয়েছে যে ১০ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত তারা তহবিল বন্ধের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা বা লিখিত নোটিশ পায়নি। রাজ্য কর্মকর্তারা পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, স্ন্যাপের যোগ্যতা যাচাই তারা যথাযথভাবেই করে এবং এ ধরনের বৃহৎ পরিসরে সংবেদনশীল তথ্য ফেডারেল সরকারের সঙ্গে শেয়ার করার কোনো নজির নেই।

আইনি দিক থেকেও বিষয়টি জটিল। গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের জেলা বিচারক ম্যাক্সিন চেসনি রায় দেন যে, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় ইউএসডিএ রাজ্যগুলোর ওপর ব্যক্তিগত তথ্য হস্তান্তরের জন্য চাপ দিতে পারে না। ওই রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়, তথ্য না দেওয়ার কারণে কোনো অঙ্গরাজ্যের স্ন্যাপ তহবিল বন্ধ করা যাবে না।

স্ন্যাপের প্রশাসনিক তহবিল দিয়ে কর্মসূচি পরিচালনার খরচ যেমন-কর্মীদের প্রশিক্ষণ, উপকারভোগীদের সনদ প্রদান ও তদারকি ব্যয় পরিশোধ করা হয়। যদিও খাদ্যসহায়তার অর্থ পুরোপুরি ফেডারেল সরকার দেয়, প্রশাসনিক ব্যয়ের একটি অংশ অঙ্গরাজ্যগুলোকেও বহন করতে হয়। নিউইয়র্কের রচেস্টার এলাকার ছয়টি কাউন্টিতে এক লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ স্ন্যাপের ওপর নির্ভরশীল এবং মনরো কাউন্টিতে প্রতি সাতজনের একজন এই কর্মসূচির সুবিধা পান। রাজ্য কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, প্রশাসনিক তহবিল বন্ধ হলে কার্যত পুরো কর্মসূচির পরিচালনাই মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

শেয়ার করুন