৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৫৩:০৫ অপরাহ্ন


কনসাল জেনারেল ইরাকে
আসাদ আলম নতুন রাষ্ট্রদূত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১১-২০২৪
আসাদ আলম নতুন রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম


অন্তবর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫ আগস্ট চুক্তিভিত্তিক ছয় রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবসর-উত্তর ছুটিতে যাবেন, এমন কূটনীতিকদের অবিলম্বে ঢাকায় ফেরানোর সিদ্ধান্ত হয়। এসব সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্যসহ অন্তত ২১টি মিশনে রাষ্ট্রদূত পদে নতুন করে নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে একাধিক মিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া শূন্য পদে নিয়োগ ও রদবদল মিলিয়ে মাসখানেকের মধ্যে আরো অন্তত ১০টি মিশনে রাষ্ট্রদূত পদে পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এতো কম সময়ে এতো বেশি মিশনে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ বা রদবদলের ঘটনা এটাই প্রথম।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ আটটি দেশে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূতের নামের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দেশের সম্মতির জন্য সেই দেশগুলোয় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গত মাসে বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ আরো ১২ দেশে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন ওই ১২ রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ১০ জনের নাম সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সম্মতির জন্য পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে পর্তুগালে সাবেক সচিব মো. মাহফুজুর রহমানের নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে।

এদিকে অন্তবর্তী সরকার এখন পর্যন্ত ২১ রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ চূড়ান্ত করলেও বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিল্লির হাইকমিশনে কাকে পাঠানো হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। ভারতের পাশাপাশি রাশিয়াসহ অন্তত আরো ছয়টি মিশনের রাষ্ট্রদূত পদগুলো এ মুহূর্তে খালি রয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৮ জনই পেশাদার কূটনীতিক, এক জন নৌবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, সাবেক সচিব একজন ও সাংবাদিক একজন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, এর মধ্যেই বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে রাষ্ট্রদূতের শূন্য পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেকগুলো দেশে নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সামনে আরো বেশ কয়েকটি দেশে নতুন রাষ্ট্রদূতের নামের প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ ৮ দেশে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে

অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, জার্মানি, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) চুক্তিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে এক সপ্তাহের মাথায় ঢাকায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। পরে তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও বাতিল করা হয়। চীনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনকে পররাষ্ট্রসচিব নিয়োগ করা হয়। ফলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে উল্লিখিত সাত মিশনের রাষ্ট্রদূতের পদ শূন্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবসর-উত্তর ছুটিতে যাবেন ভারত, যুক্তরাজ্য, নিউইয়র্কে জাতিসংঘে স্থায়ী মিশন, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা। চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে না বলে এরই মধ্যে তাদেরও দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ১৩ মিশনে রাষ্ট্রদূতের পদ শূন্য হয়ে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ আটটি দেশে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূতের নামের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দেশের সম্মতির জন্য সেই দেশগুলোয় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ভিয়েনায় অবস্থিত জাতিসংঘের দফতরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আসাদ আলমকে যুক্তরাষ্ট্রে, ওমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামকে চীনে, মেক্সিকোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামকে যুক্তরাজ্যে, রোমানিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলীকে জাপানে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম দেলোয়ার হোসেনকে সৌদি আরবে, আলজেরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জুলকার নায়েনকে জার্মানিতে, ফরেন সার্ভিস একাডেমির মহাপরিচালক শাহনাজ গাজীকে রোমানিয়ায় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের মহাপরিচালক তারেক আহমদকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদনসাপেক্ষে মনোনয়ন চূড়ান্ত করে নিয়োগের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই আটজনের নাম সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সম্মতির জন্য কূটনৈতিকপত্র পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্মতি জানিয়ে দিয়েছে।

জাতিসংঘের সদর দফতর ও ওআইসিতে প্রতিনিধি

ডিসেম্বরে চাকরির মেয়াদ শেষ হবে বলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিতকে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সালাহউদ্দীন নোমান চৌধুরী। এতো স্বল্পতম সময়ের মধ্যে একসঙ্গে এতো জন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ আমাদের সময় কখনো হয়নি। এটাও ঠিক যে ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে এক অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটেছে বলে একসঙ্গে সরকার এতো বেশি সংখ্যায় রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিচ্ছে।

এদিকে ওআইসিতে প্রথমবারের মতো স্থায়ী প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ। ওআইসি সদর দফতরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মিলানে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এম জে এইচ জাবেদ।

প্রস্তাব যাচ্ছে বেলজিয়ামসহ ১০ দেশে

চুক্তি বাতিল, চাকরির মেয়াদ শেষে অবসর ও রদবদলের কারণে বাংলাদেশের আরও ১০টি মিশনে যোগ দিতে যাচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রদূত। এর মধ্যে রাষ্ট্রাচার প্রধান খন্দকার মাসুদ আলমকে বেলজিয়াম ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ অনুবিভাগ) তৌফিক হাসানকে অস্ট্রিয়ায়, মহাপরিচালক (আঞ্চলিক সংস্থা অনুবিভাগ) রইস হাসান সরওয়ারকে বাহরাইনে নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তৌহিদুল ইসলামকে ব্রাজিলে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদাকে ইরাকে, সাংবাদিক মুশফিক ফজল আনসারীকে মেক্সিকোয়, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসাকে নেপালে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও ঢাকা নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল খন্দকার মিসবাহ-উল-আজিমকে ওমানে নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

এছাড়া নিউইয়র্কে বাংলাদেশের উপস্থায়ী প্রতিনিধি তৌফিক ইসলাম শাতিলকে দক্ষিণ কোরিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (মিয়ানমার অনুবিভাগ) ফেরদৌসী শাহরিয়ারকে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাদের নামের প্রস্তাব ওই দেশগুলোয় পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রদূত হলেন ৯ কূটনীতিক

অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকার শুরুতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। পরে অবশ্য সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এখন পর্যন্ত যে ২১টি মিশনে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, তাতে ১৮ জনই পেশাদার কূটনীতিক। এছাড়া সাবেক এক সচিব ও এক সাংবাদিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। আর নৌবাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রেষণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে ১৮ কূটনীতিক নতুন মিশনগুলোতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৯ জনই প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পাচ্ছেন। এই মিশনগুলো হচ্ছে বেলজিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রিয়া, রোমানিয়া, বাহরাইন, ইরাক, দক্ষিণ কোরিয়া ও ওআইসি সদর দফতর।

দিল্লি, রাশিয়াসহ ছয় দেশে পদ খালি

বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভারত। এখন পর্যন্ত দিল্লিতে বাংলাদেশের পরবর্তী হাইকমিশনার কে হবেন, তা সরকার চূড়ান্ত করতে পারেনি। পাশাপাশি রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পদও খালি। এই দুই দেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, মালদ্বীপ ও আলজেরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পদও খালি। এই মিশনগুলোতে পরবর্তী সময়ে কারা দায়িত্ব নেবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

শেয়ার করুন