তারেক রহমানকে সংবর্ধনার জন্য মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে
তারেক রহমানকে বরণ করতে কুড়িল বিশ্বরোডের কাছাকাছিতে তিনশ ফিটে আয়োজন করা হয়েছে সংবর্ধনা স্থান। তারেক রহমানকে বরণ স্মরণীয় করে রাখতে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে বিশ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতি আশা করছেন দলের আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ। বেশ কদিন ধরেই দিনরাত কাজ করছেন মঞ্চ তৈরির কাজে নিয়োজিতরা। এতেও রয়েছে নিরাপত্তা। রাজধানীর কুড়িল থেকে সংবর্ধনা মঞ্চের পরবর্তী অংশ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে তারেক রহমানকে স্বদেশে স্বাগত জানিয়ে লাগানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। আর কুড়িল মোড় থেকে বেশ খানিকটা দূরে সড়কের উত্তর অংশে দক্ষিণমুখী করে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ।
তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে মঞ্চের কাজ তদারকি করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। মঞ্চের অদূরে পুলিশের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
ইতমধ্যে ভীড় এড়াতে তারেক রহমানের দেশে ফেরার এখনো দুই দিন বাকি থাকলেও তাকে স্বাগত জানাতে এখনই বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। ভীড় জমাচ্ছেন তারা বিভিন্নস্থানে। এরাও এক নজর সংবর্ধনাস্থল দেখতে ছুটে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ফেসবুক লাইভ করছেন, আবার কেউবা ‘মা-মাটি ডাকছে, তারেক রহমান আসছে’, ‘বীরের বেশে তারেক রহমান, আসবে এবার বাংলাদেশে’-এমন নানা স্লোগান দিয়ে এলাকা মুখরিত করে তুলছেন।
বিমানবন্দর এলাকার পাশাপাশি পুরো রাজধানীর অলিগলি, দেয়াল ও বিভিন্ন স্থাপনায় তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের অংশ এবং দুই পাশের সড়কে শোভা পাচ্ছে তারেক রহমানের বিশালাকার ছবি ও ব্যানার। এ ছাড়া তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীও ইতোমধ্যে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
নিরাপত্তায় প্রস্তুত বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও বাস
তারেক রহমানের ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন একটি বুলেটপ্রুফ ‘হার্ড জিপ’ গাড়ি দেশে আনা হয়েছে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো মডেলের এই গাড়িটি ইতোমধ্যে বিএনপির নামে নিবন্ধিত হয়েছে। এ ছাড়া তার জন্য একটি বুলেটপ্রুফ বাস আনা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের সঙ্গে বিমানবন্দর থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা থাকবেন। সেক্ষেত্রে ওইদিন তিনি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্যবহার না করে বাসটি ব্যবহার করতে পারেন।
বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তারেক রহমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। এ ছাড়া, দলের বিশ্বস্ত নেতা-কর্মীদের সমন্বয়েও একটি বিশেষ নিরাপত্তা টিম গঠন করা হয়েছে।
এদিকে তারেক রহমান দেশে ফেরার পর মা খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র পাশের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে ওঠার কথা রয়েছে। তবে এখনও সেই বাড়ির সংস্কার কাজ চলতে দেখা গেছে। কোনো কারণে তার দেশে ফেরার আগে বাড়ির সংস্কার কাজ শেষ না হলে, মা খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’য় তার জন্য তিনটি কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন রুটে ১০টি ট্রেন পাচ্ছে বিএনপি
তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিতে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসছেন। তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দ করেছে রেলওয়ে। পাশাপাশি ২৫ ডিসেম্বর বিশেষ ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে নিয়মিত চলাচলকারী তিনটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর সোমবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির কর্মী ও সমর্থকদের যাতায়াতের জন্য ১০টি রুটে স্পেশাল (বিশেষ) ট্রেন পরিচালনা করা হবে এবং নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। এ কারণে স্বল্প দূরত্বের রাজবাড়ী কমিউটার (রাজবাড়ী-পোড়াদহ), ঢালারচর এক্সপ্রেস (পাবনা-রাজশাহী) এবং রোহনপুর কমিউটার (রোহনপুর-রাজশাহী) ট্রেনের আগামী ২৫ ডিসেম্বরের যাত্রা স্থগিত রাখা হবে।
বিএনপির চাহিদা অনুযায়ী কক্সবাজার-ঢাকা-কক্সবাজার, জামালপুর-ময়মনসিংহ-ঢাকা-জামালপুর, টাঙ্গাইল-ঢাকা-টাঙ্গাইল, ভৈরববাজার-নরসিংদী-ঢাকা-নরসিংদী-ভৈরববাজার, জয়দেবপুর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-জয়দেবপুর (গাজীপুর), পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড়, খুলনা-ঢাকা-খুলনা, চাটমোহর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-চাটমোহর, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী এবং যশোর-ঢাকা-যশোর রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। এ বাবদ রেলওয়ে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব পাবে। বিশেষ ট্রেন এবং অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতাকর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা-২০২৫ প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
২০ লাখ মানুষ সমাগমের প্রস্তুতি
বিএনপি নেতারা বলছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সারা দেশের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে ২০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দলের আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীসহ শীর্ষ নেতারা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিশাল বহরসহ ঢাকায় আসবেন।
তারেক রহমানকে অভ্যর্থনা জানাতে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন যেন বিগত ৫৫ বছরের ইতিহাসকে ছাড়িয়ে যায় এবং আগামী ৫৫ বছরের ইতিহাসে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে- সেই লক্ষ্যে স্মরণীয় করে রাখার মতো সব আয়োজন করা হচ্ছে। ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করবেন। আর ঢাকার আশপাশের এলাকার নেতা-কর্মীদের ২৪ তারিখ রাত ও ২৫ তারিখ সকালের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।