২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৪:৪৬ পূর্বাহ্ন


গণতন্ত্র উত্তরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল চক্রান্ত করছে : মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৫
গণতন্ত্র উত্তরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল চক্রান্ত করছে : মির্জা ফখরুল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


গণতন্ত্র উত্তরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল ‘ভয়ংকরভাবে চক্রান্ত’ করছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ২৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কারযালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটা ট্রাজিশন পেরিয়ডে আছে। একটা ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শাসন যে শাসন আমাদের সমস্ত মূল্যবোধগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে বেরিয়ে এসে আমরা এখন একটা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি এবং নির্বাচনের পরে একটা নির্বাচিত সরকার, নির্বাচিত পার্লামেন্ট আমাদের দেশকে আমাদের জাতিকে সঠিক পথ এগিয়ে নিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা আমরা সবাই করছি। এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে যে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি, মহল তারা এই ট্রাজিশনাল যে প্রসেস এটাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ভয়ঙ্করভাবে চক্রান্ত করছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আজকে আবারো এই চক্রান্তের ফলে নিহত শহীদ হয়ে যাওয়া ওসমান বিন হাদির আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং পরম করুনাময় আল্লাহ তালার কাছে এই দোয়া চাইছি যে, আল্লাহতালা তাকে যেন বেহেশতে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থানে নিয়ে যান।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ এর সাথে নির্বাচনী সমঝোতা উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথে চারটি আসনে সমঝোতা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, নীলফামারী-১ আসনে মাওলানা মো. মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সিলেট-৫ আসনে মাওলানা মো. উবায়দুল্লাহ ফারুক এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়-২ আসনে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতি প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, এই ট্রাডিশনাল পিরিয়ডে সরকারের ব্যর্থতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবণতি হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের যে সরকার সেই সরকার অন্তত এই কয়েকটা মাস তারা তাদের যোগ্যতার পরিচয় দেবেন এবং দক্ষতার সাথে দেশকে পরিচালনা করবেন। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই যে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে তারা তাদের কথা রেখেছেন যে, ২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিয়েছেন এবং নির্বাচন কমিশন সেটাই করছেন।

নির্বাচনের যে পরিবেশ তৈরি করা এই পরিবেশ তৈরি করার জন্য তাদেরকে আরো সচেতন এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা দরকার, আরো কার্যকরি ভূমিকা পালন করা দরকার এবং এই বিষয়গুলোতে তাদের ফোকাস আরো বেশি দেবেন এবং তারা আরো ভালোভাবে নির্বাচন যেন অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় সেই বিষয়গুলো দিকে লক্ষ্য রাখবেন এটা আমরা আশা করি।

শরিকদের সাথে ভালোবাসা আরও গভীর হয়েছে

মির্জা ফখরুল বলেন, শরিকদের সাথে আমাদের সমঝোতা শেষ হয়ে গেছে। শরিকদের সাথে আমাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয়েছে। এ বিষয়ে আপনারা যথাসময় জানতে পারবেন, যথাসময় তা ঘোষণা করা হবে।

‘নির্বাচনী সমঝোতা’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ জমিয়ত জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় দল, তাদের সাথে আমাদের একটি নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে। আমাদের সাথে নির্বাচনী সমঝোতার ভিত্তিতে যে সমস্ত আসন তাদের সাথে আমাদের সমঝোতা হয়েছে ওই আসনে বিএনপির কোন প্রার্থী থাকবে না। সারা বাংলাদেশে অন্যান্য আসনে ওনাদের কোন প্রার্থী থাকবে না। আমরা সেই সমযোতার মধ্যে উপনীত হয়েছি।

তিনি জানান, আগামী দিনের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সম্মিলিতভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য আরো যাদের সাথে আসন সমঝোতা হয়েছে বিএনপির তা পরবর্তীতে জানানো হবে। সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা সংবিধানের প্রস্তাবনায় মহান আল্লাহর উপর আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করব যেটা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন আমরা করবো না সেটা আমরা অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছি। কওমি লাইনের মাদ্রাসা থেকে যারা পাস করবেন তাদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি আছে সেই লাইনে এবং সেই হিসেবে আমরা কিছুদিন আগে আমাদের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি, সামনের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে যে, ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জেন তাদের জন্য আমরা রাষ্ট্রীয় ভাতার ব্যবস্থা করব, উৎসব ভাতার ব্যবস্থা করব এবং যেটা একটা ট্রাস্ট আছে সেই ট্রাস্টকে আরো শক্তিশালী করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নেবো এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ধর্মশিক্ষক হিসেবে বিধি মোতাবেক নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে অথবা বিবেচনা করা হবে।

‘নির্বাচনী সমঝোতায় আমির যা বললেন’

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ এর আমীর মাওলানা মো. উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, আজকে দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, ইলেকশন নিয়ে দুই শিবিরে দুই মেরুতে ভাগ হয়ে গেছে। আমরা এই দেশের পরিচালনার ব্যাপারে দেশ ও জাতির কল্যাণে আমাদের কাছে জাতীয়তাবাদী দলই অন্য দলের চাইতে বেশি আস্থাভাজন। যার কারণে জাতি ও দেশের কল্যাণ এর জন্য আমরা জাতীয়তাবাদী দল শহীদ জিয়াউর রহমানের দল, আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল- উনাদের সময়ে দেশের যে অর্থনীতি বা স্থিতিশীলতা ছিল যার কারণে আমরা দীর্ঘদিনের দেখা হিসাবে এই দেশের আস্থাভাজন একটা দল যার হাতে এই দেশ সোপর্দ করা যায়। যার কারণে আমরা বিশ্লেষণ করে আমরা নিজে নিজে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা ইলেকশন জাতীয়তাবাদী দলের সাথে করব। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সামনের রাস্তাটাকে যেন ভালো রাখেন, ভালো চলান।

তিনি বলেন, ইসলামী মূল্যবোধের বিশ্বাসী দল হিসাবে আমরা উনাদেরকে (বিএনপি) জাতি ও দেশের কল্যাণের জন্য উপযুক্ত মনে করি। আমরা আটদলীয় জোটের এমন কোন অতীতে চালাইছেন বা উনাদের এইসব আমরা কিছু দেখি নাই এখনো। আমরা বিএনপিকে তিন টার্ম দেখছি যার কারণে আমরা বিএনপির উপরে আস্থা রাখতে পারি।

জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের আমীর বলেন, বিএনপির কাছে এই আবেদন আমাদের থাকবে যে, সরকার গঠনে আল্লাহতাআলা যদি তৌফিক দেয় তাহলে এই দেশের জনসাধারণ যেভাবে দেশকে সামলানো আর অগ্রসর করে নেওয়া ঠিক এইভাবে ইসলামী অঙ্গনটাকে যেন গতিশীল করা হয় সেই প্রত্যাশা থাকবে। আওয়ামী লীগে ১৫/১৬ বছরে ইসলামের যে অবস্থা ঘটাইছে এখান থেকে যেন আমরা উত্তীর্ণ হইতে পারি- আল্লাহতায়ালা যেন আমাদেরকে ইসলাম নিয়ে, ধর্ম নিয়ে দেশ নিয়ে যেন সুন্দরভাবে আমরা চলতে পারি এটা আমরা কামনা করি। সংবিধানে মহান আল্লাহর উপরে আস্থা ও বিশ্বাস... এটাকে পুনর্বহাল করা, আমাদের অর্থনীতি সমাজনীতি, ধর্ম নিয়ে চলার জন্য আল্লাহ তাআলা যেন আগামী সরকারকে তৌফিক দেন এই দোয়া করি।

সংবাদ সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মো. মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার, মাওলানা আল হাবীব, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস কাসেমী, মাওলানা শেখ মজিবুর রহমান, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাজহারী উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন