০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:১৩:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্টিত , সহজ গ্রুপে ব্রাজিল - যুক্তরাষ্ট্র ডি গ্রুপে স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া


স্যাংশন নয় নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
স্যাংশন নয় নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে তিনি গত ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন


ব্লিঙ্কেন মোমেন বৈঠক

 বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। সফরের অংশ হিসেবে তিনি গত ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন এই দুই মন্ত্রী। এই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ এমপি এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম।

বৈঠকের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেন, বিগত ৫০ বছরের স্মৃতি মনে করলেও, আমরা আসলে আগামী ৫০ বছরের সূচনার কথা চিন্তা করছি। দুই দেশের মধ্যকার অংশীদারিত্ব জোরদার করার বিষয়ে কাজ করার ক্ষেত্রেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। ব্লিঙ্কেট ও মোমেনের বৈঠকে স্যাংশন নিয়ে নয় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হেেয়ছে। স্যাংশন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটা স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিষয়। সূত্র জানায়, এই বৈঠকে আমেরিকা বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু চায়। বৈঠকের মূলপর্বে উঠে আসে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটাধিকার, শ্রম অধিকার, র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর, রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ।

আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হয় এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথা জানান দেন ব্লিংকন। জবাবে মোমেন বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা। যোগ করেন, সব দল নির্বাচনে আসতে চায় শুধু একটি দল ( বিএনপি) ছাড়া। তিনি বলেন, তারা স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়, কোথাও কোথাও বিজয়ীও হয়। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ব্লিংকনের সহযোগিতা চান।

ও্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধের জবাবে ব্লিংকনের সাফ জবাব এ ব্যাপারে তার করনীয় কিছুই নেই। এই নিষেধাজ্ঞা বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারি থেকে আরোপ করা হয়েছে।  তিনি মানবাধিকার পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে মোমেন জানান, আপনাদের বিভিন্ন রিপোর্টেই বলা হচ্ছে, গত ৪ মাসে একটিও হত্যাকান্ডের  ঘটনা ঘটেনি এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। র‌্যাবের উপর আনীত অনেক অভিযোগ তদন্ত করা হয়েছে এবং আগামীতেও করা হবে।

শ্রমঅধিকার নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন ব্লিংকন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর বিষয়েও জানতে চান তিনি।

শেখ মুজিবুর রহমান হত্যামামলায় অভিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রাশেদ চৌধুরীকে ফেরতদানের বিষয়টিও বাংলাদেশ তরফে উত্থাপিত হয় বৈঠকে। যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত ইন্ডো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিতে দুই দেশ একযোগে কাজ করবে বলে বৈঠকে একমত পোষণ করা হয়।

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার প্রশংসা করেন ব্লিঙ্কেন। তিনি এও জানান যে, কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশকে এই পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা দান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে মানবতা ও উদারতা প্রদর্শন করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও বাংলাদেশের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন।

বক্তব্য শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান তিনি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তার বক্তব্যের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রায় ৬ কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা দান করার জন্য ধন্যবাদ জানান। মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি দেশটির আচরণটিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের দুঃসময় এবং সুসময়ের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে ড. মোমেন একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিগত ৫০ বছরে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে একটি প্রাণবন্ত অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রকে এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন যে, দেশটি বাংলাদেশে সঞ্চিত বিনিয়োগের দিক থেকেও বৃহত্তম অংশীদার। তবে সেই বিনিয়োগের বেশিরভাগই জ্বালানিখাতে হয়েছে বলে ড. মোমেন বলেন যে, এখন হয়তো অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র উৎসাহী হবে।

উল্লেখ্য, এই বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ৩ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে ওয়াশিংটন আসেন। এদিকে আগামী ৭ এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্লোরিড়ায় যাবেন এবং নতুন কনস্যুলেট অফিস উদ্বোধন করবেন। জানা গেছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম বৈঠক।

ঢাকা-ওয়া‌শিংটন সম্পর্ক আরো বেশি গভীর হচ্ছে

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন ব‌লে‌ছেন, বাংলাদেশি ও আমেরিকানদের মধ্যে সম্পর্ক প্রজন্মের পর প্রজন্মে আরো বেশি গভীর হচ্ছে। গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূ‌র্তি উপল‌ক্ষে এক ভি‌ডিও বার্তায় তি‌নি এ কথা ব‌লেন। ভি‌ডিও বার্তায় ব্লিঙ্কেন ব‌লেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫ দশক উদযাপনে আপনাদের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। ৫০ বছর পর আমাদের দুটি দেশের সম্পর্ক আমাদের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

মা‌র্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব‌লেন, ‘আগামী দশকগুলোতে আমাদের জনগণ একসঙ্গে আরও কী করতে পারে, সেটা দেখার প্রতীক্ষায় রইলাম।’ ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনেটর টেড কেনেডির বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ ক‌রেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তি‌নি ব‌লেন, ‘সিনেটর টেড কেনেডি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আমাদের দুদেশের জনগণের বন্ধন, স্বাধীনতার প্রতি আমাদের অনুরূপ সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও স্বাধীনতার পথ অনুসরণ করে আমাদের যাত্রার কথা তুলে ধরেন।

‘এর কিছুদিন পরেই ৪ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চিঠি পাঠান এবং আশা করেন দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ফলে আগামী বছরগুলোতে আমাদের জনগণের বন্ধন ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে।’ বলে বলেন ব্লিঙ্কে।

ব্লিঙ্কেন ব‌লেন, ‘আমাদের দুটি দেশ জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, গত দুই দশকে বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যু হার দুই-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ৬ কোটি ১০ লাখ টিকা সহযোগিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্য বেশি ক্রয় করেছে জা‌নি‌য়ে তি‌নি ব‌লেন, ‘২০২১ সালে যে কোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্য বেশি ক্রয় করেছে। যার মূল্যমান প্রায় ৮.৩ বিলিয়ন ডলার। আমাদের শক্তিশালী অংশীদারিত্বকে আরো গভীর করতে আমরা বাংলাদেশকে শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে অগ্রগতি সাধনে উৎসাহিত করি।’

ভি‌ডিও বার্তায় মা‌র্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু প‌রিবর্তন ও রো‌হিঙ্গা সংক‌ট মোকা‌বিলায় দেশ‌টির সহ‌যো‌গিতার কথা উল্লেখ ক‌রেন। তি‌নি ব‌লেন, আমরা একসঙ্গে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করছি। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এবং আরও মারাত্মক ঝড়ের কারণে ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত জনপদের সহিষ্ণুতা জোরদার করছি। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর এর সমাধানে আমরা কাজ করে আসছি।


শেয়ার করুন