৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৭:৫৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


দেশকে সামিনা বাশার
সবকিছু ঈদের খুশিকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৪
সবকিছু ঈদের খুশিকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে সামিনা বাশার


সামিনা বাশার। দেশীয় চলচ্চিত্রের নতুন অভিনেত্রী। ভারতের চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্সে মাস্টার্স শেষ করে শোবিজে নাম লিখেয়ে ছিলেন। নিয়মিত মডেলিংয়ের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেও দেখা যায় তাকে। এবারে ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘মোনা: জ্বিন-২’। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে ছিলেন। এবার ঈদের সিনেমায় প্রধান চরিত্রে কাজ করেছেন। অনুভূতি কেমন?

সামিনা বাশার: ভালো একজন অভিনেত্রী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই আসলে শোবিজে পা রাখা। ২০১৯ সাল থেকে শোবিজের বিভিন্ন শাখায় কাজ করছি। নাটকের বাইরে মডেলিং করেছি নিয়মিত। এসব করার মূল উদ্দেশ্য ছিল বড় পর্দায় কাজ করা। নিজের অভিনয় প্রতিভাকে দর্শকদের সামনে জানান দেওয়া। মোনা: জ্বিন-২’ সিনেমার মাধ্যমে আমি দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর একটি পথ পেয়েছি। এটা আমার মাঝে অন্য রকম উত্তেজনা তৈরি করেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে রোজার ঈদের মত এত বড় উৎসবে আমার ছবি মুক্তি পেয়েছে, তাও আবার স্বপ্নের প্রযোজনা সংস্থা থেকে-সবকিছু ঈদের খুশিকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে।

প্রশ্ন: আপনি প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে কাজ করতে বাসা থেকে পালিয়েছিলেন। ঘটনা কি সত্য?

সামিনা বাশার: গল্পটা আসলে আজিজ (জাজের কর্ণধার) ভাইকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলাম। যেহেতু ওনার কাছে বহু ছেলে-মেয়ে কাজ করতে আসে, এটা তাদের জন্য একটা শিক্ষা হিসেবে উনি জাজের পেইজে আমার পুরো গল্পটা শেয়ার করেছিলেন। এর কারণ হিসেবে বলেছিলেন, উনি চান সবাই আমাকে দেখে শিখুক, আমরা এখানে পড়াশোনাটাকেও প্রাধান্য দিই। পড়াশোনা শেষ করে তারপর আসুক- আমরা এটা চাই, বাসা থেকে পালিয়ে আসলে সেটা হবে না। অভিভাবকের অবশ্যই সম্মতি থাকতে হবে তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ব্যাপারে। আমার পরিবার থেকে আমাকে বলা হয়েছিল, যদি এসএসসিতে এ প্লাস পাই তাহলে আমাকে জাজে কাজ করতে দিবে। তারা শুধু আমাকে বলার জন্য বলেছিল। পরবর্তীতে আমি রাগ হয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে ফেরানো হয়। এভাবে ২-৩ বার পালিয়ে গিয়েছিলাম শুধু জাজে কাজ করার জন্য। এরপর আমার বাবা-মা আমাকে ভারতের পাঞ্জাবে পাঠিয়ে দিয়েছিল। কারণ তাদের মনে হতো আমি এখনও ছোট, কিছু বুঝবো না। যখন ভার্সিটি শেষ করলাম, তখন বুঝলো না ঠিক আছে এটার তার স্বপ্ন বাধা দেওয়া ঠিক হবে না। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কাজ হচ্ছে এটাই বড় কথা।

প্রশ্ন: নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন জাজের মাধ্যমে পূরণ হতে হবে-এমন চিন্তা কেন মাথায় আসলো?

সামিনা বাশার: অনেকগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে যেগুলো বিশেষ তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাজ এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রযোজনা সংস্থা। সবাই চাইবে কিন্তু সেরা জায়গায় কাজ করতে। দ্বিতীয়ত বলবো, আমি সবসময় তাদের হাউজটাকে নিয়ে গবেষণা করতাম- তারা কোন ধরনের ছবি বানাচ্ছে, কোন কোয়ালিটির, কাদেরকে নিয়ে বানাচ্ছে ইত্যাদি। এগুলোর খোঁজ খবর নিতে গিয়ে আমি দেখলাম তারা সবসময় নতুন মুখ নিয়ে কাজ করে। অন্যান্য প্রযোজনা সংস্থা টাকা ফেরত আসবে কিনা এ ভয়ে নতুনদের নিতে চায় না। আর তারা নতুনদের দিয়ে সিনেমা করে কিন্তু সেটি হিট হয়। তৃতীয় কারণ, তাদের কনটেন্ট। ‘জ্বিন-২’ ও কিন্তু ভিন্ন ধরনের গল্প। হরর টাইপের গল্প কিন্তু আমাদের দেশে খুব কমই হয়েছে। হয় না বললেই চলে। আজিজ ভাইয়াই এ ধারাটা চালু করেছেন। আমার সবসময় ভিন্ন ধরনের কাজ করতে ভালো লাগে। তারা যৌথ প্রযোজনায় কাজ করতো, সেটাও আমার একটা ইচ্ছে ছিল-যেহেতু আমি ভারতে পড়াশোনা করেছি। দু’দেশ মিলে কাজ করলে ভালো হতো। দুঃখজনকভাবে আমি যখন দেশে ফেরত আসি তখন তারা এটা বন্ধ করে দেয়।

প্রশ্ন: ‘মোনা: জ্বিন-২’ সিনেমায় যুক্ত হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই।

সামিনা বাশার: আমার যেহেতু জাজে কাজ করার ইচ্ছে অনেক আগে থেকে, তাই আমি তাদের একজনের নম্বর জোগাড় করে কল দিই। তিনিই আমাকে জানান ছবিটির অডিশন হচ্ছে। আমি চাইলে অংশ নিতে পারি। নির্ধারিত তারিখে জাজের অফিসে গিয়ে উপস্থিত হই। আমি ভেবেছিলাম আজিজ ভাই আমার অডিশনটা নিবেন। কিন্তু ওনার বড় মেয়ে মুহু আমার অডিশন নিয়েছিলেন। ওখানে আমাকে কিছু ব্যাসিক কথাবার্তা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- আমার ব্যাকগ্রাউন্ডসহ অন্যান্য কিছু বিষয় নিয়ে। অভিনয় দক্ষতা যাচাই করার জন্য একটা স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে কিছু লাইন পড়ে তাদের শোনাতে বলা হয়েছিল। সেগুলো করলাম। এক-দু ঘণ্টার মত একটা অডিশন ছিল। তারপর বাসায় গেলাম। পরের দিন জানলাম, আমি ছবিটির জন্য নির্বাচিত হয়েছি।

প্রশ্ন: এটা কত সালের ঘটনা?

সামিনা বাশার: তিন বছর আগের। ২০২১ সালের দিকে।

প্রশ্ন: তাহলে কি ‘অপারেশন সুন্দরবন’ করার পর এটার অডিশন দিয়েছিলেন?

সামিনা বাশার: না, না। এটার অডিশন দেওয়ার পর আমি ‘অপারেশন সুন্দরবন’ করেছিলাম।

প্রশ্ন: টানা ১৭ দিন রাতে না ঘুমিয়ে ছবিটির শুটিং করেছিলেন। কষ্ট লাগেনি?

সামিনা বাশার: শুটিং মানেই তো কষ্ট। এ ছবির শুটিং হয়েছে শীতে। কিন্তু পর্দায় দেখানো হবে গরমকাল। ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় টানা ১৭ দিন কাজ করেছি জামালপুরে। এর মধ্যে পুকুরে লাফ দেওয়ার দৃশ্যও রয়েছে। পুরো টিম অনেক কষ্ট করেছে। বনের মধ্যে শুটিং করার কারণে বুঝেনই কী পরিমাণ ঠান্ডা ছিল। সুতির কাপড় পরে শট দিয়েছি, দর্শকদের যাতে ঠিকঠাক উপহার দিতে পারি। একটা শট দেওয়ার পরই আমাদারকে চাদর বা অন্য গরম কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হত। আমার নিজের অ্যাজমার সমস্যা ছিল, এর মধ্যেও শুটিং করেছি।

প্রশ্ন: অ্যাজমার কারণে শুটিং সেটে কোন সমস্যায় পড়েননি?

সামিনা বাশার: সমস্যায় পড়তে হয়নি। কারণ সেটের সবাই খুবই হেল্পফুল ছিল। দেখা যেত একটু পর পরই গরম চা, পানি এসব এনে দিত।

প্রশ্ন: শুটিং সেটের ভয়ংকর কোনো স্মৃতি আছে কি?

সামিনা বাশার: আমাদের সহশিল্পী ওমরের গাড়ির একটা দৃশ্য ছিল। যেখানে সে গাড়ি ড্রাইভিং করছিল এবং জোরে জোরে ব্রেক করছিল। আমরা তো পিছনের সিটে নিশ্চিন্তে বসে শট দিচ্ছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম ও ড্রাইভিং পারতো না! অথচ আমাদেরকে সে বলেছিল, সামনে স্পিড ব্রেকার ছিল তো তাই এভাবে ব্রেক করছিলাম। পরবর্তীতে সে বলে, আগের দিন দেখছিল কীভাবে গাড়িটা চালানো যায়। ভয়ে পরিচালককে জানায়নি সে গাড়ি চালাতে পারে না। এটা তো সিরিয়াস ঘটনা বললাম, একটা মজার ঘটনা বলি। একদিন শুটিং হচ্ছে। ভোর চারটার মতো বাজে। বড়দা মিঠু ভাইয়াসহ আমাদের চারজনের শট। সবাই পুকুরে নামবো। কনকনে শীত। থ্রি, টু অ্যাকশন বলার সঙ্গে সঙ্গে সবাই নামছে আমি আর নামি না। আমার এমনিতে ‘পানিভীতি’ আছে। তার উপরে ঠান্ডা, আবার অ্যাজমা। সবকিছু মিলিয়ে আমি না ওখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেছি। আমাকে উপর থেকে বলা হচ্ছিলো, জাম্প করো, জাম্প করো। কিন্তু আমি করিনি। পরিচালক অনেক চিল্লাচিল্লা করেন এ নিয়ে। যদিও দ্বিতীয়বারের টেকে আমি অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম জাম্প করে।

প্রশ্ন: ঈদে ১১টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ওগুলো রেখে আপনার ছবি কেন দেখবে দর্শক?

সামিনা বাশার: আমাদের ছবিটি ভিন্ন ধরনের ছবি। দর্শকরা সবসময় ভিন্ন কিছু দেখতে পছন্দ করে। ওই গতানুগতিক প্রেম-ভালোবাসা দেখতে পছন্দ করে না। আমাদের ছবিটির দর্শক কিন্তু সবাই। ছবিটি পরিবারের সঙ্গে বসে উপভোগ করতে পারবেন। সবচেয়ে বেশি পছন্দ হবে বাচ্চাদের। আর সবার সিনেমায় দেখা উচিত দর্শকদের। শাকিব খানের একজন ভক্ত হিসেবে তাকে ছাড়া তো ঈদ কল্পনায় করতে পারি না আমি। তার ছবির সঙ্গে আমার ছবি মুক্তি পাচ্ছে এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের।

প্রশ্ন: নিজের ছবির ছাড়া ঈদে অন্য কার ছবি আগে দেখবেন?

সামিনা বাশার: কারটা আগে দেখবো জানি না। শাকিব ভাইয়া, বুবলি আপু, রাজ ভাইয়াসহ সবারই ছবি দেখার ইচ্ছে আছে এক এক করে। আমি বাংলা সিনেমার বড় ফ্যান।

শেয়ার করুন