০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:৬:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


স্বাধীনতার ৫১ বছর কি পেয়েছি, কি পাইনি
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-১২-২০২২
স্বাধীনতার ৫১ বছর কি পেয়েছি, কি পাইনি


লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ সন্দেহাতীতভাবে বাঙালি জাতির বিশাল অর্জন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ মহান বিজয় দিবসে রমনা রেসকোর্স ময়দানে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিজয় দেখার গৌরবে আমিও গৌরবান্বিত। সেইদিন থেকে ২৫ অগাস্ট ২০০৫ পর্যন্ত আমি নিজেও বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জন, পরিবর্তন কাছে থেকে দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে নিবেদিত থেকে অল্প স্বল্প অবদান রেখেছি। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকেই মুক্তিযুদ্ধ হেরে যেতে দেখেছি এবং অংশও নিয়েছি। 

১৭ ডিসেম্বর ২০২২ বদলে যাওয়া ঢাকায় বসে বলতেই পারি উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হলেও ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ আজ নির্বাসিত, গণতন্ত্র মেঘে মেঘে আচ্ছন্ন। আমরা বলি বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়।  তাহলে কেন একসময়ের তিলোত্তমা ঢাকা  বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণে, যানজট, জলজট নিয়ে কংক্রিটের বস্তিতে পরিণত? কেন শাসক দলের অন্যতম মূল নেতাকে বলতে হয় স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও স্বাধীনতার আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়নি? কেন বিজয় উৎসবে সর্বস্তরের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহানগরীতে চলাচল করতে পারেনি? কেন মহানগরীর অনেক রাজপথ বন্ধ করে সীমিত কিন্তু মানুষের নিরাপদ যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে?

কেউ স্বীকার না করলে ভুল হবে বাংলাদেশ কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন করেছে। সারা দেশ এখন বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায়, দেশ খাদ্যনিরাপত্তার দুয়ারে। আরএমজি, টেক্সটাইল, ফার্মেসিউটিক্যাল, চামড়াজাত দ্রব্য রফতানি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভা-ার সমৃদ্ধ। 

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটেছে। অনেকেই কল্পনাও করতে পারেনি, পদ্মা সেতু এতো দ্রুত হয়ে যাবে বা আদৌ হবে? শুধু পদ্মা সেতু কেন, আকারে হয়তো ছোট কিন্তু দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেতু, ফ্লাইওভার, টানেল, মেট্রোরেল, প্রভৃতি হয়েছে যার সুফল সাধারণ মানুষ এখন পেতে শুরু করেছে। রাজধানী ও বন্দরনগরীতেও বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পে পাল্টে গেছে চিত্র। মানুষ সেগুলো থেকে সুফল নিচ্ছে। দেশ যে উন্নতির পানে হাঁটছে এ চিত্রই বলে দেবে। কাউকে গলা ফাটিয়ে বা যুক্তি দিয়ে বোঝানোর দরকার নেই। সাধারণ মানুষ তার সরল বিশ্বাসে এগুলো যে উন্নয়নের চিত্র তা মেনে নেবে। 

এরপরও পাশাপাশি দুর্নীতি, মুদ্রাপাচার, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বাংলাদেশকে পিছিয়ে রেখেছে। দিনশেষে এমন সফলতা আঁধারে ঢাকা পড়তে শুরু করেছে কতিপয় দুর্নীতি! বিশেষ করে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ঊর্ধ্বমূল্য একেবারে সাধারণ মানুষকে প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ বিরক্ত। এ বিষয়টাতে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন ছিল। আর যা কিছু চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের কন্ট্রোল করা গেলেই সম্ভব হতো। কিন্তু ব্যাপক সফলতা এসব ব্যবসায়ীর জন্য গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষদের কাছে দুঃসহ হয়ে উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতি সহসাই আর হয়নি। এতে যতোই ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ধুয়া তোলা হোক না কেন, মানুষ এখন আসল চিত্রের খবরও রাখেন। সেটা ডিজিটালের কল্যাণে। 

দেশের উন্নয়ন ঘটলে মানুষ কিছুটা কষ্ট হবে সেটা সাময়িক। কিন্তু এ কষ্ট বা ঊর্ধ্বগতি সহসাই কমবে বলে মনে হচ্ছে না। সাধারণ মানুষকে এভাবে কষ্ট দেয়া এটা মোটেও পজিটিভ কিছু না। দিনশেষে ভোটের জন্য তাদের কাছেই যখন হাত পাততে হবে। 

বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল ২২ পরিবারের হাত থেকে অর্থনীতি মুক্ত করা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বজনীন করা। বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন অবশ্যই ২২ পরিবারের স্থানে ২২শ মাফিয়া পরিবার সৃষ্টি ছিল না। যে উন্নয়ন মুষ্টিমেয় কিছু পরিবারকে সম্পদের পাহাড় করে দেশ বিদেশে প্রসাদ গড়ে তাকে কি সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার আদর্শে উন্নয়ন বলবো না। 

মানছি ৬০ মেগাওয়াট বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ক্ষমতার স্টেশনে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ক্ষমতা অর্জন সংখ্যায় বড়, জোনাক জ্বলা গ্রামীণ প্রান্তরে আলোর মিছিল বিশাল অর্জন। কিন্তু প্রশ্ন করি, কেন এতো ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ সংকট? কেন মাটির নিচে ৭৫ টিসিএফ তুল্য উন্নত মানের কয়লা মাটির নিচে? কেন জলে-স্থলে মাটির নিচে থাকা গ্যাসসম্পদ যথাযথভাবে উত্তোলন হচ্ছে না? কাদের স্বার্থরক্ষায় বাংলাদেশ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশি জ্বালানিসম্পদ নির্ভর না হয়ে বিদেশি জ্বালানিনির্ভর হওয়ার ব্যর্থ কৌশল নিলাম? 

কে বলবে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সর্বজনীন হলেও গুণগত মানে নিম্নমুখী? কেন রাজনীতি রাজনীতিকদের বিতরণ করে দুর্বৃত্তদের কুক্ষিগত? কেন দুর্নীতি সকল প্রতিষ্ঠানকে গ্রাস করছে? কেন রাজনীতিকদের কোণঠাসা রেখে দেশ আমলানির্ভর? 

শেষকথা হলো প্রয়োজন নির্ভেজাল গণতন্ত্র। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে জনগণের ভোটে নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে সামনে বিপদ, মহাবিপদ।

শেয়ার করুন