১৭ মে ২০১২, শুক্রবার, ১০:২৯:৫৮ অপরাহ্ন


দেশকে রুনা খান
আমি পরিকল্পনা করে কিছু করতে পারি না
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
আমি পরিকল্পনা করে কিছু করতে পারি না প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করছেন রুনা খান


রুনা খান। অভিনেত্রী ও মডেল। ‘হালদা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১৯ সালে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার। সম্প্রতি একটি ওটিটিতে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর নতুন ওয়েব সিনেমা ‘আন্তঃনগর’। এতে এক সংগ্রামী নারীর ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হচ্ছেন রুনা। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: আপনার কাজের সিলেকশন সব সময়েই সুন্দর। সম্প্রতি ওটিটিতে আসা অন্তঃনগরে আপনার চরিত্রটি কেমন? 

রুনা খান: আমার সিলেকশনের প্রশংসা করায় আপনাকে ধন্যবাদ। অন্তঃনগরে আমার চরিত্রের নাম রোজিনা। এই চরিত্রের মাধ্যমে সবাই ব্যক্তি রুনার জীবনটাই দেখতে পারবেন। আমি একেবারেই মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া মেয়ে। মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। আমি জন্মেছি একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে। যে গ্রামে বিদ্যুৎ গিয়েছে যখন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি তখন। তার আগ পর্যন্ত সেই গ্রামের মানুষ হারিকেন, কুপিবাতি জ্বালিয়ে চলতো। বাবার চাকরির সুবাদে আমি বড় হয়েছি একটা ছোট মফস্বল শহরে। আমার বন্ধুবান্ধব যারা, আমরা সবাই আসলে এ রকম মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। তো আপনার প্রশ্ন যেটা ছিল, এ রকম মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন কীভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত বা উৎসাহ করে! আসলে এটাই আমার জীবন। আমি এই জীবন থেকেই এসেছি। 

প্রশ্ন: আপনার জীবনের গল্পটা যদি বলতেন...

রুনা খান: যে গ্রামের কথা বলছিলাম, যে গ্রামে আমার বাবার জন্ম। গ্রামে তো কিছু বাড়ি নিয়ে একটা পাড়া হয়। সেই পাড়ায় আমার বাবা প্রথম লোক যিনি এসএসসি পাশ করেছেন। সেই পাড়ায় আমিই প্রথম মেয়ে, যে এসএসসি পাশ করেছি। সেই পাড়ায় আমিই প্রথম মেয়ে, যে মাস্টার্স অব্দি পড়াশোনা করেছি। শুধু তাই না, আমার বাবার পরিবারে এবং মায়ের পরিবারে আমিই প্রথম মেয়ে যে মাস্টার্স পাশ করেছি। আমার বাবা এবং মায়ের পরিবারের ধাওে কাছে কেউ কোথাও অভিনয়, নাচ, গান, শিল্প-সংস্কৃতি এসবের সঙ্গে যুক্ত না। সে রকম একটা জায়গায় জন্মে, স্কুলে পড়ার সময় স্বপ্ন দেখতে শুরু করি আমি অভিনয় করব। ওই জায়গা থেকে আজকে এখানে এসে এই যে আপনার সঙ্গে কথা বলছি, এই পুরো জীবনটাই আসলে ওই মধ্যবিত্ত পরিবারের। ওটাই আমার জীবন, ওটাই আমি। আমি এই জীবনটাই যাপন করি।

প্রশ্ন: রুনা খানের বদল হয়নি তাহলে?

রুনা খান: একদমই না। আমি ঘরে ডালভাত খাই। আমি ঘরে মেয়ের বাবার সাথে চিল্লাচিল্লি করি। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষরা যেমন করে। ঘরে ছেঁড়াতেনা কাপড় পড়ে থাকি। এটাই আমার জীবন।

প্রশ্ন: আন্তঃনগর সিনেমায় অভিনয় করতে রাজি হলেন কেন?

রুনা খান: আন্তনগরে কাজ করতে আগ্রহ বোধ করবার কারণ আসলে অনেক। প্রথমত পরিচালক গৌতম কৈরী। তাঁর কাজ আমি পছন্দ করি। যে গল্প তিনি আমাকে বলেছেন, যে চরিত্রে তিনি আমাকে ভেবেছেন, সে গল্প এবং চরিত্র আমার পছন্দ হয়েছে। এখানে আমার সহশিল্পী যাঁরা আছেন, তাঁরাও আমার খুব পছন্দের। একটা কাজের ক্ষেত্রে যখন এতগুলো বিষয় পছন্দসই হয়ে যায়, তখন সেই কাজটা না করার কোনো কারণ থাকে না।

প্রশ্ন: আন্তঃনগরে আপনার কো-আর্টিস্ট শ্যামল মাওলা। তাঁকে নিয়ে যদি কিছু বলেন?

রুনা খান: শ্যামলের সাথে আমার পরিচয় একটু অন্যভাবে। আমি আমার পেশাগত অভিনয় জীবন শুরু করেছিলাম সিসিমপুরের মাধ্যমে। সিসিমপুরের সুমনা নামে একটি চরিত্রে অভিনয় করতাম। শ্যামলের সাথে পরিচয় আমার সিসিমপুরের সেটে। সেখানে সুমনা এবং মুকুল চরিত্রে আমি আর চঞ্চল ভাই (চঞ্চল চৌধুরী) অভিনয় করতাম, আর শ্যামল ওখানে পাপেট প্লে করতো। আমি আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম, সেদিন এক ইন্টারভিউতে শ্যামল বলছিল, পরে আমার মনে পড়ল। শ্যামল বলছিল, আজকে যে অভিনেতা শ্যামলকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেই অভিনেতা শ্যামলের কাজের শুরুটা আমার মাধ্যমে। তখন শ্যামল দেশ নাটকে অভিনয় করে। আমি বলেছিলাম, তুমি অভিনয় (টিভিতে) করো না কেন? তারপর একটা বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে আমি একজনকে ওর কথা বলেছিলাম। তারপর সে কাজটা করে। তারপর আস্তে আস্তে ওর কাজ করা শুরু। এটা আমি ভুলে গেছিলাম। ও যখন এ কথা বললো, আমি অবাক হয়েছি, আবেগতাড়িত হয়েছি যে, ও এটা মনে রেখেছে। এই হচ্ছে আমার শ্যামলের সাথে পরিচয়, তারপর একসাথে অনেক কাজ হয়েছে। হইচইতে প্রথম আমাদের একটা ফিল্ম রিলিজ হয়েছিল আশফাক নিপুণের ‘কষ্টনীড়’। সেখানে আমরা ভাইবোনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। শ্যামলের সাথে আমার কাজের অভিজ্ঞতা সব সময়ই দারুণ। যে চরিত্রেই আমরা কাজ করেছি না কেন! আর অভিনেতা হিসেবে শ্যামল যে অসাধারণ সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

প্রশ্ন: মঞ্চে অভিনয়ের শুরুর দিকের কথা বলছিলেন। ওই সময় আপনার স্বপ্নটা কেমন ছিল?

রুনা খান: ওই যে বলছিলাম ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত আমি টাঙ্গাইলে ছিলাম। আমার এসএসসি পর্যন্ত। সে সময় রোজ টিভি দেখতাম। তখন সাপ্তাহিক নাটক হতো বৃহস্পতিবারে আর ধারাবাহিক নাটক হতো মঙ্গলবারে। ওটা ছিল সে সময়ের বড় বিনোদন, ছিলো শুধু বিটিভি। আমি অভিনয় করতে চাই, এ স্বপ্নটাই আমার তৈরি হয়েছিল বিপাশা আপু, শমী আপু, জাহিদ ভাই, তৌকীর ভাই, মাহফুজ ভাই-তাঁদেরকে দেখে দেখে।

প্রশ্ন: পরবর্তী সময়ে তাঁদের সঙ্গে আপনার কাজও হয়েছে।

রুনা খান: হ্যাঁ, পরবর্তী সময়ে তাঁরা সবাই আমার সহকর্মী হয়েছেন। তো তখন পত্রিকার বিনোদন পাতা ছিল আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয়। সেখানে আমি দেখতাম, শমী কায়সার ঢাকা থিয়েটার করেন। বিপাশা হায়াত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে অভিনয় করেন। আফসানা মিমি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে অভিনয় করেন। তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান নাট্যকেন্দ্রে অভিনয় করেন। যাঁরা আমার স্বপ্নের মানুষ প্রত্যেকে থিয়েটার করেন। যখন আমার ১২-১৩ বছর বয়স, তখন থেকে মাথায় ঢুকে গিয়েছিল, আমি যদি অভিনয় করতে চাই, আমাকে থিয়েটার করতে হবে। তারপর আমি ঢাকায় আসি। বদরুন্নেছায় পড়ার সময় বাফাতে নাচ শিখি। বাফাতে নাচ করতে গিয়ে আমার সাথে পরিচয় হয় দাউদ হোসাইন রনির। সে সরাসরি থিয়েটার করত। তখন রনি যে দলটা করত থিয়েটারে, সেই দলে আমি রনির সাথে কয়েকদিন যাই। মাস দুয়েক-তিনেক। তারপর আমি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে ইন্টারভিউ দিই। নির্বাচিত হই। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে কাজ করতে শুরু করি। আপনি কি আমার নাগরিকের যাত্রা বা সেই সময়ের গল্পটা জানতে চান?

প্রশ্ন: ওই সময়ে আপনার পরিকল্পনাটা কী ছিল?

রুনা খান: আমি আসলে পরিকল্পনা করে কিছু করতে পারি না। আমি জানতাম, অভিনয় শেখার জায়গা থিয়েটার। ফলে আমি থিয়েটারে গিয়েছি। নাগরিকে যুক্ত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে আমি টিভি নাটকে কাজ করি। ওই সময়ে নাগরিকের সিনিয়র ভাইয়েরা একটা নাটকে কাজ করছিলেন। সে নাটকের পরিচালক ছিলেন কায়েস চৌধুরী। আমার জীবনের প্রথম নাটকের সহশিল্পী ছিলেন তৌকীর আহমেদ। সেটার শুটিং হয়েছিল টাঙ্গাইলে। কায়েস চৌধুরীর পরিচালনায় টাঙ্গাইলে আমি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। নাটকের নাম ছিল ‘গেরদালী’। এটা আমি বলছি ২০০২ সালের কথা। তারপর একটু একটু করে কাজ করছি। ২০০৪ সালে ডিসেম্বরে আমি যুক্ত হই ‘সিসিমপুর’-এর সাথে। আমি সিসিমপুরকেই ধরি আমার পেশাগত অভিনয় জীবনের শুরু হিসেবে।

শেয়ার করুন