০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:৫৭:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে ঐক্য পরিষদের আলোচনা সভা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে ঐক্য পরিষদের আলোচনা সভা


ম্যানহাটনের নিউইয়র্ক হিলটন মিলেনিয়াম ইউএন প্লাজা হোটেলে গত ২৪ সেপ্টেম্বও রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কর্মকর্তাদের সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী এক সভায় সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারের ব্যাপারে মতবিনিময় হয়। সভায় সংগঠনের তিন সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত, ড. টমাস দুলু রায় ও রণবীর বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক ড. দ্বিজেন ভট্টাচার্য্য এবং উপদেষ্টা ড. দিলীপ নাথ ছাড়াও যোগ দেন জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শ্যামল চক্রবর্তী এবং ইন্টারন্যাশন্যাল মতুয়া মিশন অব নিউইয়র্কের সভাপতি ও জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুশীল সিনহা।  

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করে সভায় অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ একে একে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন যে, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা ২০১৯ সংসদের প্রথম অধিবেশনে পূরণ করা হলে ধর্মীয় মৌলবাদী ও উগ্রপন্থীরা আমাদের ভাইবোনদের ওপর ২০২০-শে মুরাদ নগরে কিংবা ২০২১ সালের শারদোৎসবে নারকীয় তা-ব চালানোর দুঃসাহস তো করতোই না, এতোদিনে হয়তো সম্পূর্ণভাবে বন্ধই হয়ে যেত সংখ্যালঘু নির্যাতন। যেমন বন্ধ হয়ে গেছে অ্যাসিড সন্ত্রাস। প্রতিশ্রুতি প্রদানের পাঁচ বছর পরও বিলটি পাস না করা এবং ২০১১ সালে কয়েক হাজার সংখ্যালঘু নির্যাতককে শনাক্ত করে জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন যে তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছিল, তাদের বিচারকার্য এখনো শুরু না করায় গভীর হতাশা ও বিস্ময় প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেতার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রধর্ম আইন পাস করাসহ ধর্মীয় মৌলবাদীদের সব দাবি-দাওয়াই মেনে নিয়েছে এবং সেটা করা হয়েছে সেক্যুলার ডেমোক্র্যাসি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সমনাগরিক অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তার বিনিময়ে দাবি করা হয়, ‘বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই, সবারই সেখানে সমান অধিকার রয়েছে’, কিন্তু বাস্তবতা তো এর ঠিক বিপরীত-একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, বিচার করা হচ্ছে না সংখ্যালঘু নির্যাতকদের, দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ গড়া হচ্ছে, কিন্তু মন্দির/গির্জা গড়া হয়নি একটিও, ইসলামিক ফাউন্ডেশন রয়েছে কিন্তু হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের ফাউন্ডেশন হয়নি এখনো। সংখ্যালঘু নাগরিকদের প্রতি সরকারের এই বৈষম্যমূলক আচরণে উৎসাহিত হয়ে এবং সংখ্যালঘু নির্যাতকদের কোনো বিচার না হওয়ায় প্রশ্রয় পেয়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘুদের ভূসম্পত্তি ও বাড়িঘর দখল করে নিয়ে, দেবালয়-দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করে দিয়ে, উচ্ছেদ, ধর্ষণ, বিভিন্নভাবে ধর্মান্তরিত করাসহ বর্বর অত্যাচার করে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করছে সংখ্যালঘু নাগরিকদের। আপনার চোখের সামনে, দেশের মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব প্রায় ২০ শতাংশ (১৯৭০) থেকে নেমে ৯.১ শতাংশে (২০২২) পৌঁছেছে; আর আগামী ২৫ বছরে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। তারা মন্ত্রীকে বলেন যে, এই নির্মম পরিণতি ঠেকানো সরকারের দায়িত্ব ও নৈতিক কর্তব্য, বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা যখন ক্ষমতায় আসীন।

ইতিমধ্যেই যে দেশে দুর্গা প্রতিমা ধ্বংস করা শুরু করেছে, সেটা উল্লেখ করে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী হয়তো আবারও ২০২১ সালের মতো পুজোয়ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বলে তারা মন্ত্রীকে এ ব্যাপারে ২০২২ সালের মতো সরকারকে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করতে অনুরোধ জানান। তারা বলেন, এই দায়িত্ব শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়, এটা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী, যারা জাতিসংঘ কর্তৃক নিয়োজিত হয়ে বিদেশে মানুষের নিরাপত্তা শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন, তাদের সবার।

নেতৃবৃন্দ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, এই সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের একমাত্র পথ একটি কঠোর সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন অবিলম্বে পাস করে এর প্রয়োগ শুরু করা। বিচার এবং কঠোর শাস্তির ভয় থাকলে, সরকার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার নীতি অবলম্বন করলে, এই মানবতাবিরোধী অশুভ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে দাবি করে, নেতৃবৃন্দ সংসদে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সদ্ব্যবহার করে বর্তমান সংসদের এই শেষ অধিবেশনেই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটি পাস করে দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকদের সুরক্ষার স্থায়ী ব্যবস্থা করতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান।  

নেতৃবৃন্দ মন্ত্রীকে বলেন যে, দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন চিরতরে বন্ধ করার ক্ষমতা সম্পন্ন যে সংখ্যালঘু সুরক্ষা অ্যাক্টের খসড়া বিলটি তারা ওয়াশিংটনস্থ রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন, সেটিকে পূর্ণাঙ্গরূপে পাস করতে হবে, অর্থাৎ তাতে নিম্নোল্লিখিত আইন/ধারাসমূহ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে:

(১) সংখ্যালঘু নাগরিকদের ‘সংখ্যালঘু’ বলে স্বীকৃতি প্রদান, যা সব দেশেই রয়েছে; (২) একটি হেইট স্পিচ ও হেইট ক্রাইম আইন, যার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের মতো সরকার বাদী মোকদ্দমার মাধ্যমে বিচার বিভাগের একটি বিশেষ ডিভিশনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ/তত্ত্বাবধানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের তদন্ত, মামলা দায়ের, বিচার ও শাস্তি প্রদানের নিশ্চয়তা; (৩) সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারের জন্য প্রতি জেলায়  একটি করে দ্রুত বিচারের ক্ষমতাসম্পন্ন আদালত প্রতিষ্ঠা করা; (৪) একটি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা; (৫) একটি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করা; (৬) বাতিলকৃত অর্পিত সম্পত্তি আইনে অধিগৃহীত সব সম্পত্তি প্রকৃত মালিককে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার বিধান; (৭) সংসদে অন্তত ২০ শতাংশ আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদানের বিধান; (৮) জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন কর্তৃক চিহ্নিত ও বিচারের জন্য সুপারিশকৃত হাজার হাজার সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারকার্য অবিলম্বে শুরুর নির্দেশ; (৯) একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনপূর্বক ২০০৬ থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত সব সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপরাধীদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ; (১০) সাম্প্রদায়িক  নির্যাতনে ক্ষতিগ্রস্তদের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের পুনর্বাসন এবং শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ; (১১) প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে মেগা/মডেল মন্দির নির্মাণ করার নির্দেশ; (১২) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আদলে আলাদা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ফাউন্ডেশন গঠন করার নির্দেশ: (১৩) দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ আইন করা; (১৪) পার্বত্য ভূমি কমিশনের দ্রুত, যথাযথ বাস্তবায়ন; (১৫) সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসমূহের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা এবং (১৬) ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুজ্জীবিত করা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবার বক্তব্য শুনে তাদের বক্তব্য যুক্তিসংগত বলে স্বীকার করেন এ ব্যাপারে যথাসাধ্য সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

শেয়ার করুন