০৬ জুলাই ২০১২, শনিবার, ০৪:১৮:৫৮ অপরাহ্ন


বুঝে শুনেই জাপা চুপচাপ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৬-২০২৪
বুঝে শুনেই জাপা চুপচাপ


অস্বাভাবিক নিরবতায় জাতীয় পার্টি। বলা যায় সাড়া শব্দ নেই। রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন ভাব জাপা দেখাচ্ছে যে, তারা সরকারেরর আশেপাশেও নেই। আবার বোঝানো হচ্ছে সংসদে একটি শক্তিশালি বিরোধী দলও। জাপা’র ভূমিকাকে অনেকে সন্দেহজনকও বলেও অভিহিত করতে চায়। কারো কারো মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে প্রধান বিরোধী দলকে সংসদে আসতে না দিয়ে ফুরফুরে মেজাজেই আছে দলটি। আবার কারো মতে, জাপা আসলে আগের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বন্দী অবস্থাতেই আছে, সময়ের প্রেক্ষাপটে তাই চুপচাপ। 

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় পার্টি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গড়া জাপার হাল ধরেছেন তার ভাই জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। যদিও আবারও ভাগ হয়ে গেছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এবছর মার্চে ঢাকায় সম্মেলন করে জাপার নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেছেন রওশনপন্থীরা। এর মধ্য দিয়ে আরেকটি ‘ব্র্যাকেটবন্দী’ জাপার নেতা হলেন রওশন এরশাদ। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা বলেছে, তারাই মূল দল।

নির্বাচনের আগে জাপা’র ফোঁসফাঁস

এ বছরে অনুষ্ঠিত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জাপা’র অনেক নাটক দেথা গেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এসব নাটকে এমন ভাব দেখা গেছে যে, দলটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আর থাকছে না। এমনকি আওয়ামী লীগের অধীনের সরকারে নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। এমনকি ৭ জানুয়ারির আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানান ধরনের বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের প্রায় বলতেন, বলতেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারের কুশাসনের ফল, গণতন্ত্রের নামে দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বলতেন, অতীতে নির্বাচন ভালো হয়নি, এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়। এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না পরিবেশ কেমন থাকে। আবার বলতেন আমাদের ভোটাররা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন। তাদের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়ার মতো না। নির্বাচন নিয়ে মানুষের মাঝে শঙ্কা বিরাজ করছে। 

এখন যা করছে বা বলছেন

জাতীয় পার্টির সেই চেয়ারম্যান জিএম কাদের সর্বশেষ একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তাতে তাকে বেশ ধীর স্থির মনে হয়েছে। এখন জাপা বেশ ব্যালান্স করে কথা বলছে। প্রস্তাবিত বাজেট মোটেই জনবান্ধব হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা জিএম কাদের। অন্যদিকে দলটির আরেক নেতা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, দীর্ঘ রাজনীতির জীবনে আমি অনেক সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি; কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো উদার এবং জনবান্ধব দেখিনি। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ বেরিয়েছে দলটির সারা দেশেই সাংগঠনিক ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। নিচ্ছে না সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়াতে কোনো ধরনের কর্মসূচি। এমনকি রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন কোনো কর্মসূচিও নেই বা দিচ্ছেও না। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে দলটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী সঙ্কটেও ভোগে। যারাও পেয়েছে তারা খুব ভালো করতে পারেনি। ফলে দলটির সংসদে যেমন কম আসন পেয়েছে তেমনি সারা দেশে স্থানীয় সরকারে দলটির জনপ্রতিনিধির সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা হয়ে গেছে। 

কিন্তু কেনো ও শেষ কথা

কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কেনো জাপা এমন নিবর নিথর হয়ে আছে। এব্যাপারে রাজনৈতিক পর্যবক্ষেকমহল মনে করেন টানা তৃতীয় মেয়াদেও জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হয়েছেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আর দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু হয়েছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ। অনেকের ধারণা জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমন সব সুযোগ সহজে এসব সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। কারণ দলটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনৈতিক বিচক্ষণতা বা পর্দার আড়লে ক্ষমতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানে। অনেক আসন দাবি করেও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সমঝোতার আসনে জয়ী ১১ জন সংসদ সদস্য নিয়ে বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের ভালোভাবে জানে ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতেই বেশি খেলতে গেলে পুরো দল শুধু কুকোপাতই না, দলের (জাপ) অস্তিত্বই বিলীন করে দেয়ার চাল চালতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। ইতোমধ্যে আবারও ভাগ হয়ে গেছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। সম্প্রতি ঢাকায় সম্মেলন করে জাপার নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেছেন রওশনপন্থীরা। এর মধ্য দিয়ে আরেকটি ‘ব্র্যাকেটবন্দী’ জাপার নেতা হলেন রওশন এরশাদ। জিএম কাদেরের ধারণা জাপাকে ‘ব্র্যাকেটবন্দী’ করা পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সক্রিয় সহযোগিতা আছে। অনেকের ধারণা একারণে তাই জাপা আপাতত চুপ আছে। আবার এ-ও হতে পারে রাজনৈতিক মাঠের প্রধান বিরোধী দলতো মাঠেই আছে। অন্যদিকে জাপা এখন সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে। এমন ফুর্তিতেও দলটি চুপচাপ আছে এই ভেবে যে, নিজেদের রাজনৈতিক কৌশলে জাপা এখন জয়ী এমনটা ভেবেও। কারণ জাপা ভালোভাবেই বোঝে যে বর্তমান রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংসদে জাতীয় পার্টি কোনোভাবেই কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা রাখতে পারবে না। তা-ই আপাতত চুপ থাকাটাই তাদের রাজনৈতিক কৌশল বলেও অনেকে মনে করেন।

শেয়ার করুন