২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৫:৩১:০৩ পূর্বাহ্ন


কর্মী-সমর্থকদের সহিংসতায় বিচলিত আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০১-২০২৪
কর্মী-সমর্থকদের সহিংসতায় বিচলিত আ.লীগ


বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে পশ্চিমাদের কাছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে হিমশিম ক্ষেতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। বিশেষ করে নিজ দলের দলাদলিতে, মারামারি সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারের পরিকল্পনা হুমকির মুখে পড়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে, বিশেষ করে নির্বাচনের দিন ভয়াবহভাবে দৃশ্যমান হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারের সব ধরনের চেষ্টা। আর এজন্য নিজেদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় বিচলিত দিশেহারা দলটি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

প্রতিদিনই হানাহানি

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গণমাধ্যম সূত্রে দেখা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে শেষ পর্যন্ত প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯৬ জন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ছাড়া এই নির্বাচনে প্রার্থীদের বড় অংশই স্বতন্ত্র। এই সংখ্যা চার শ’র কাছাকাছি। নির্বাচনে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে প্রার্থী আছে ২৭টি দলের। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আছে ২৬৩ আসনে। দলটির আরও ২৬৯ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন; যারা ইতিমধ্যে ‘আওয়ামী স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হিসেবে ভোটের মাঠে পরিচিতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৮ জন বর্তমান সংসদ সদস্যও রয়েছেন, যারা এবার দলের মনোনয়ন পাননি। কোনো কোনো আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের বাইরেও কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মোট স্বতন্ত্র প্রার্থী চার শ’র কাছাকাছি। সংসদ নির্বাচন ঘিরে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা চলছেই। গত ৩১ ডিসেম্বর রোববার রাত থেকে ১ জানুয়ারি সোমবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে নানা ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ায় নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর এবং পাঁচজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কক্সবাজার-১ আসনে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, নাটোর-২ আসনে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন, রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে নেত্রকোনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে মারধরের অভিযোগে নৌকার প্রার্থীর একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ছয় দিন বাকি। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে সংঘাত-সহিংসতা। এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনি কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আসছে সবচেয়ে বেশি। প্রার্থীরা অভিযোগ, ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই নির্বাচনি ক্যাম্প অফিসে আগুন দেওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটছে।

পশ্চিমাদের নজর

সর্বশেষ খবর হলো বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-এটা দিনের পর দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে গণতন্ত্রপ্রেমী দেশের জনগণের কাছে। দেশটির দুটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। বলা হচ্ছে পর্যবেক্ষকদের মতো শুধু কেন্দ্রে ভোট দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। কেননা পশ্চিমারাসহ মার্কিনী মনে করছেন, বাংলাদেশের আগের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানান ধরনের বিতর্ক তৈরি করেছে, যা গণতন্ত্র প্রেমী হিসাবে তাদেরকে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ কারণে আগামীতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতেই যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাছাড়া বিশ্বে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আননে বাইডেন প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ। আর বাংলাদেশে তাদের অবস্থানও আগের সব কিছু তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে। গত ১ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে নির্বাচন ভবনে ওই বৈঠক হয়। জানুয়ারির ভোটের আগে পরের সহিংসতা ও ত্রুটিগুলো মূল্যায়ন করতেই পাঠানো হয়েছে ছোট এই ’যৌথ কারিগরী মূল্যায়ন দল’। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) আগামী নির্বাচনের সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করবে। এ জন্য তাদেরকে অ্যাক্রিডেশন দেয়া হয়েছে। তবে বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, এনডিআই ও আইআরইয়ের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকটি ‘কনফিডেনশিয়াল’(গোপনীয়)। তারা (এনডিআই ও আইআরআই) গণমাধ্যমে কিছু ‘ডিসক্লোজ’ (প্রকাশ) না করতে অনুরোধ করেছে। 

এরপর ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আন্ত ও অন্তর্দলীয় সহিংসতাসহ নির্বাচনপূর্ব ও পরবর্তী সহিংসতা পর্যবেক্ষণে আসা মার্কিন যৌথ মূল্যায়ন দলের সঙ্গে এবি পার্টির নেতারা বৈঠক করেন। অংশীজন ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে এ বৈঠক করেন তাঁরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, ঠিক এমন সময়ে সারাদেশে বিএনপিসহ তাদের সমমনা অর্ধশত দল অংশ না নেয়ার পরও সংসদ নির্বাচন ঘিরে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার খবর ভালো ঠেকবে না পশ্চিমাদের কাছে। এমন অবস্থাই টের পেয়েই নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ হয়ে যাবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আনিছুর রহমান এ কথা বলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, এধরনের নির্বাচনেও যদি হানাহানি হয় এবং তা খোদ নিজ দলের লোকেদের আচার আচরণে ফুটে উঠে-সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বড়ো ধরনের বেকায়দা পড়বে বলে অনেকের অভিমত। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারের সব ধরনের চেষ্টা।

শেয়ার করুন