০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:১৯:৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


অভিবাসীদের প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধ রিপাবলিকানদের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
অভিবাসীদের প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধ রিপাবলিকানদের


অভিবাসন প্যারোল অথরিটির কর্মসূচির অধীনে বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালের পর এ পর্যন্ত দেড় মিলিয়নেরও বেশি লোককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। কংগ্রেস রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতার লাগাম টানতে আলোচনা করছেন। তারা মনে করেন এই আইনের প্রয়োগ ও ব্যবহারের সীমা থাকা উচিত। রিপাবলিকান কংগ্রেস সদসরা ইউক্রেন ইসরায়েল সাহায্য বিল পাস করতে সীমান্ত বিল নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার একটি স্টিকিং পয়েন্ট ‘প্যারোল’কেন্দ্রিক হয়েছে। প্যারোল ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট ও তার প্রশাসনের জন্য একটি জরুরি ক্ষমতা যা অভিবাসীদের অস্থায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়।

টেক্সাস স্টেট গত বছর ফেডারেল গভর্নমেন্টের বিরুদ্ধে ইউএস ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট আদালতে সীমান্তে আগত অভিবাসীদের প্যারোল আইন ব্যবহার বন্ধ করতে মামলা করেছে। কংগ্রেস প্যারোল আইন পরিবর্তন না করলেও ফেডারেল আদালতে এর ব্যবহার সীমিত হতে পারে। টেক্সাস স্টেটের রিপাবলিকান কর্মকর্তারা ফেডারেল বিচারককে কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আগত অভিবাসীদের জন্য প্যারোল স্পন্সরশিপ কর্মসূচি ব্লক করতে আবেদন করে। টেক্সাস আদালতকে বলছে এই নীতিটি আইনি অভিবাসন স্তরের কংগ্রেসের সীমা লঙ্ঘন করে। ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক ড্রিউ টিপটন যেকোনো দিন এই কর্মসূচির বৈধতা নিয়ে রায় দিতে পারেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বারা নিযুক্ত বিচারক ড্রিউ টিপটন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রস্তাবিত ১০০ দিনের মধ্যে অভিবাসীদের ডিপোর্টেশন স্থগিতসহ বাইডেন প্রশাসনের অন্যান্য অভিবাসন উদ্যোগের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।

বর্তমান প্রশাসনের কাছে, অভিবাসন প্যারোল অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করার একটি নিরাপদ বিকল্প। সীমান্তের সেই বিপজ্জনক পথ অতিক্রম করার পরিবর্তে প্যারোলে মঞ্জুর করা অভিবাসীরা বিমানবন্দর বা অফিসিয়াল চেকপয়েন্টের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে প্রবেশ করতে পারে। তারপর তারা স্থায়ীভাবে থাকার উপায় খুঁজতে গিয়ে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারে। কর্মকর্তারা কয়েক বছর যাবৎ অবৈধদের জন্য এই কর্মসূচি ব্যবহার করছেন।

রিপাবলিকানরা বলছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই কর্মসূচির অপব্যবহার করছেন, যা শুধু জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা উচিত। তারা দাবি করছেন হোয়াইট হাউস ইউক্রেনকে আরো ৬০বিলিয়ন ডলার সহায়তা অনুমোদনের শর্ত হিসাবে প্যারোলের ব্যবহারকেও ব্যাপকভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। সাউথ ক্যারোলিনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম গত ১৭ জানুয়ারি বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্যারোলে কঠোর ব্যবস্থা থাকা দরকার, এটি ছাড়া ইউক্রেনের অর্থের বিষয়ে কোন চুক্তি হবে না।’ প্যারোল ইস্যুটি বর্তমানে সিনেটে ইউক্রেন-ফর-বর্ডার চুক্তিকে আরো জটিল করে তুলেছে। কয়েক সপ্তাহ যাবৎ কংগ্রেসের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা ইউক্রেন-ইসরায়েলসহ সীমান্ত নিরাপত্তা তহবিল এবং বিদেশি সামরিক সহায়তার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অনুরোধকে সমর্থন করার বিনিময়ে প্যারোল এবং আশ্রয় প্রার্থীদের ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধের দাবি করেন।

যদিও হোয়াইট হাউস এবং সিনেটরদের একটি ছোট দ্বিদলীয় গ্রুপ প্যারোল আইন সীমিত ক্ষেত্রে ব্যবহার ও আগামীতে মঝোতার মাধ্যমে একটি সম্ভাব্য সীমান্ত নীতি অবৈধদের আশ্রয় এবং ব্যাপকহারে অবৈধদের অভিবাসীদের ডিপোর্টেশন কঠোর ও কার্যকর করতে সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা এই সপ্তাহে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে পারে। হোয়াইট হাউস এবং সিনেটদের আলোচিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছ প্যারোল অনুদানের সংখ্যাসূচক ক্যাপ স্থাপন এবং প্যারোলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ নিশ্চিত করতে চেষ্টা করা।

প্যারোল কি?

প্যারোল হলো অস্থায়ী ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি। এটি ১৯৫২ সালে ইমিগ্রেশন এবং ন্যাশনালটি আইন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আইন অনুসারে, জরুরি মানবিক কারণে বা গুরুত্ব অনুযায়ী জনসাধারণের সুবিধার জন্য ফেডারেল সরকার কেস-বাইকেস ভিত্তিতে প্যারোল মঞ্জুর করবে। অতীতের জরুরি চিকিৎসা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বা আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য একজন সাক্ষীকে নিশ্চিত করার জন্য এ আইন ব্যবহার করা হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন অভিবাসন কারাগারে বিপজ্জনক ভিড়, অভিবাসীদের নিজ দেশে দমন-পীড়ন এবং তীব্র দারিদ্র্যের কথা উল্লেখ করে ব্যাপকভাবে প্যারোলের ব্যবহারকে ন্যায্যতা দিয়েছে বলে দাবি করছে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বলছেন প্যারোলপ্রাপ্তদের প্যারোল অনুমোদন পাওয়ার পূর্বে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়। কিন্তু রিপাবলিকানরা দাবি করেছেন এটি পর্যাপ্ত নয়।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার প্রশাসন কয়েক দশকের পুরোনো আইন প্যারোল নীতির প্রয়োগ করে আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা এবং ইউক্রেনের সশস্ত্র সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য ব্যাপক হারে প্যারোল ব্যবহার করে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। এমনকি হাইতির মতো দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে থাকা কয়েক হাজার অভিবাসিকেও এ আইনে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানিয়েছে। 

মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট (এমপিআই) অনুসারে বাইডেন অন্য যে কোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে বিভিন্ন উপায়ে বেশি প্যারোল ব্যবহার করেছেন। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রকাশিত কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২১ সাল থেকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট দেড় মিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্যারোল মঞ্জুর করেছে। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার পরে এবং জনতার ভিড়ে মিশে যাওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অভিবাসীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্যারোল গ্র্যান্ট হয়েছিল। 

এমপিআইয়ের তথ্য অনুসারে, বাইডেন প্রশাসন ২০২১ এবং ২০২২ সালে ৭৫ হাজার আফগানকে অপারেশন অ্যালাইজ ওয়েলকাম এবং ২০২২ সালে রাশিয়া আক্রমণ করার পরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ইউক্রেনীয়কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য প্যারোল ব্যবহার করেছিল। ইউক্রেন প্রোগ্রামে অভিবাসীদের একটি মার্কিন স্পন্সর থাকতে হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো একটি বিমানবন্দরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হয়। যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার ইউক্রেন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ শুরু করার পর কর্মকর্তারা ইউক্রেন প্রোগ্রাম সৃষ্টি করেছিলেন। এই কর্মসূচির ফলে অনেক কম ইউক্রেনীয়ান সীমান্ত দিয়ে আসার পর বাইডেন প্রশাসন ভেনেজুয়েলান, কিউবান, হাইতিয়ান এবং নিকারাগুয়ানদের জন্য প্রতিটি দেশে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের ওপর ভিত্তি করে অনুরূপ প্রোগ্রাম তৈরি করে। এই সুযোগে হাইতি, কিউবা এবং নিকারাগুয়া থেকে অভিবাসীরা সীমান্ত অতিক্রম করে প্যারোলের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে শুরু করেন। ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বলেছে, বিমানবন্দরে এই চারটি দেশ থেকে বার্ষিক ৩ লাখ ৬০ হাজার লোকের প্যারোল মঞ্জুর করবে। আলাদাভাবে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দক্ষিণ সীমান্তে অফিসিয়াল চেকপয়েন্টগুলোর মাধ্যমে মাসে ৪৫ হাজার অভিবাসীদের অনুমতি দেওয়ার জন্য প্যারোল ব্যবহার করছে। যদি আশ্রয় প্রার্থীরা সিপিবি অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় নির্ধারণ করে। বাইডেন প্রশাসনের যুক্তি আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থান এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং অভিবাসীদের দক্ষিণ সীমান্তে অবৈধ ক্রসিং কমাতে আইনি চ্যানেল দিয়ে প্যারোলের ক্ষমতা ব্যবহার করে জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার আইনি অনুমতি দিয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন তারা একতরফাভাবে প্যারোলের ব্যবহার করছেন। কারণ কংগ্রেস ১৯৯০-এর দশক থেকে আইনি অভিবাসনেই পথ প্রসারিত করেনি।

এক বিবৃতিতে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র লুইস মিরান্ডা বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের প্যারোলের ব্যবহার একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির অংশ, যাতে অবৈধ সীমান্ত ক্রসিংয়ের জন্য জরিমানাও অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই আইনের ফলস্বরূপ কয়েক হাজার মানুষ অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার পরিবর্তে আইনসম্মত পথে যুক্তরাষ্ট্রে আসছে। মিরান্ডা আরো বলেন, কয়েক দশক ধরে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক প্রশাসন মানবিক কারণে কেস-বাই-কেসের ভিত্তিতে প্যারোল আইনটি ব্যবহার করছে। প্যারোল আইন পরিবর্তন হলে বাইডেন প্রশাসনকে তার অভিবাসন নীতি থেকে সরে আসতে হবে। যদিও রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটিক প্রশাসন ১৯৫০ সাল থেকে প্যারোল ক্ষমতা ব্যবহার করছে। শীতল যুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট শাসন থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের বড় দলকে পুনর্বাসন করাসহ বাইডেন প্রশাসন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অনেক আইনপ্রণেতা জাতীয় নিরাপত্তা বা কোনো জাতীয় জরুরি অবস্থায় প্রশাসনকে প্যারোল ক্ষমতা ব্যবহার সীমিত আকারে বলবৎ রাখতে চান।

শেয়ার করুন