০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:০২:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী নয়
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৪
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী নয় নদী নিয়ে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের আয়োজনে বৈঠকে অতিথিবৃন্দ


ঢাকার চারটি নদী পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের যে সর্বশেষ রিপোর্ট তা অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ১০০৮টি নদী রয়েছে। আগে আরো অনেক বেশি নদী ছিলো। ঢাকায় আগে যে সকল খাল ছিলো তা আর নেই। যার ফলে এখন একটুখানি বৃষ্টিতেই জলাদ্ধতা তৈরি হয়। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের আয়োজনে “প্রস্তাবিত নাগরিক সুপারিশ: নদী সুরক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের গুরুত্ব” শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এসব কথা উঠে আসে। 

গত ২৭ এপ্রিল শনিবার সিরডাপে’র এটিএম শামসুল হক অডিটরিয়ামে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ-এর আয়োজনে “প্রস্তাবিত নাগরিক সুপারিশ: নদী সুরক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের গুরুত্ব” শিরোনামে এক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ইউএসএইড এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের (সিপিআই) সহযোগিতায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এই নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য এই সংলাপে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত নারী আসন) অ্যাডভোকেট গ্লোরিয় ঝর্ণা সরকার, ইউএসএইড বাংলাদেশের ডিআরজি অফিস ডিরেক্টর অ্যালেনা ট্যানসি, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি কেটি ক্রোক, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএসএস) এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনর ৫৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: নূরে আলম প্রমুখ। নাগরিক সংলাপে প্যানেল আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এর বিরবেক স্কুল অব ল’ এর সহযোগী প্রভাষক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মিডিয়া বিভাগের প্রধান মোস্তফা আলমগীর রতন প্রমুখ।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের নির্বাহী পরিচালক ক্যামেলিয়া চৌধুরী, সচেতন নাগরিক সমাজ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল, নিরাপদ চিকিৎসা চাই এর সাধারণ সম্পাদক উম্মে সালমা, বারোগ্রাম উন্নয়ন সংস্থার সদস্য জান্নাতি আক্তার রুমা, তুরাগ নদী মোর্চার ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আমজাদ আলী লাল, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী মুক্তি প্রমুখ।

সকালে সিরডাপ মিলনায়তনে এই নাগরিক সংলাপের উদ্বোধন করেন ঢাকা ২ সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেন রিভার বাংলা সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ এবং দুষণ ও দখল থেকে নদীর সুরক্ষায় রোডম্যাপ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর প্রকল্প সমন্বয়কারী সৈয়দ তাপস।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কামরুল হাসান এমপি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজকে বাংলাদেশ ৫৪ বছর পার করছে কিন্তু আমরা আমাদের পরিবেশ রক্ষায় তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনি। ঢাকায় আগে যে সকল খাল ছিলো তা আর নেই। যার ফলে এখন একটুখানি বৃষ্টিতেই জলাদ্ধতা তৈরি হয়। আজকে সিটি কর্পোরেশন উদ্ধারের চেষ্টা করছে। নদী দখল যারা করছে তারা সকলেই সরকারের কাধে ভর করে এ কাজ করছে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ট্যানারি সরানো পরেও দূষণ কমেনি। আগে ট্যানারির কারণে বুড়িগঙ্গা দূষিত হতো এখন। আগে আমরা বজরায় চড়ে মিরপুরে পিকনিকে যেতাম কিন্তু এখন তা আর সম্ভব নয়। বুড়িগঙ্গা অনেক বড় একটি নদী ছিলো যা বর্তমানে সব খাল হয়ে এসেছে। 

অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, আমাদের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে ব্যক্তি জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। আমরা কিছু জনপ্রতিনিধি রয়েছি যারা বিভিন্ন সময় সুপারিশের মাধ্যমে অযোগ্যদের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে

অ্যালেনা ট্যানসি বলেন, ঢাকার চারপাশির নদীরগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নদী পাড়ের ফ্যাক্টরগুলো এসকল নদী দূষণ করছে। সুশীল সমাজ ও জনগণ সকলেই একসাথে কাজ করছে যা ঢাকার দূষণ ও পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার জনগণ বাংলাদেশের পাশে আছে সবসময়।

কেটি ক্রোক বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিবশে সমস্যাগুলো এদেশের নাগরিকদেরই সমাধানের প্রচেষ্টা করতে হবে। তবে, আমরা আমাদের জায়গা থেকে ন্যায্য সহযোগিতা সবসময় অব্যাহত রাখবো যাতে করে আপনারা আপনাদের সুন্দর প্রচেষ্টায় আমরা অংশীদার হতে পারি।

মালিক ফিদা এ খান বলেন, আমাদের মেনিফেস্টো যদি দেখি দেখবো যে, ১৯৭০-এর মেনিফেস্টোসহ পরবর্তীতে সকল মেনিফেস্টোতে পরিবেশ রক্ষার সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখেছি। ঢাকা শহরের দখল-দূষণ রোধ ও সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে যাতে বিভিন্নভাবে পরিবেশ বিষয়ক সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করা যায়। নদী রক্ষা কমিশনের বিভিন্ন আইনগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যা সংশোধনের জন্য কাজ হচ্ছে।

মোস্তফা আলমগীর রতন বলেন, পরিবেশ ও নদীর বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার চারটি নদী পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের যে সর্বশেষ রিপোর্ট তা অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ১০০৮টি নদী রয়েছে। আগে আরো অনেক বেশি নদী ছিলো। আমরা বিভিন্ন নদী রক্ষায় কাজ করছি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।

মো: গোলাম সরওয়ার বলেন, নদীকে একটি জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হলো বাংলাদেশের যে একটি যুগান্তকারী রায়। সারা পৃথিবীতে হয়তো সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয়টি দেশে এটি করেছে। তবে এটি বাস্তবায়ন কেমন হচ্ছে তা আলোচনার দাবি রাখে। গত পঞ্চাশ বছরে আমরা দেখেছি পায় ১৫৮টি নদী শুকিয়ে গেছে। ঢাকার চারটি নদীকে ইকোলজিকালি ডেড ঘোষণা করা হয়েছে। এ থেকে আমরা বুঝি যে, অন্যান্য গুরুতর অপরাধের মধ্যে আরেকটি অপরাধ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা। নদী ধ্বংসের কারণে আমাদের জীবনযাপনের উপর প্রভাব পড়ছে। 

মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি ঢাকা শহরের যে সকল নদীলো দেখছি সেখানে দেখেছি এসকল নদীগুলোর অক্সিজেন লেভেন শুণ্যের কাছাকাছি। এই নদী মাছের বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

কাউন্সিলর মো: নূরে আলম বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে আমাদের এলাকায়। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, স্যুয়ারেজের বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। ঢাকা শহরের সকল জায়গার স্যুয়ারেজের বর্জ্যগুলো নদীর পানি ব্যাপক দূষণ করছে। ঢাকা শহরের চারটি এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হচ্ছে যেগুলো দ্রুতগতিতে হওয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমে পানি ও নদী দূষণ রোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।

এই নাগরিক সংলাপের সভাপতি ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, বুড়িগঙ্গা অনেক বড় একটি নদী ছিলো যা বর্তমানে সরু খাল হয়ে এসেছে। আমরা আদৌ জানি না এটা উদ্ধার করতে কতদিন লাগবে বা আদৌ উদ্ধার করতে পারবো কী না। আজকের এই সংলাপ অনুষ্ঠানে আমরা জানতে পারলাম ঢাকা শহর এবং তার আশেপাশের নদী সুরক্ষায় ৫০টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এই প্রকল্পগুলো জন সম্পৃক্ততা ও জন আকাঙ্খার প্রতিপ্রফলন দেখতে চাই আমরা। আমরা অনেকদিন ধরেই পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি।

শেয়ার করুন