গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসতঘরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মবতন্ত্র কায়েমের এই ধারা দেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। গঙ্গাচড়ায় মাইকিং করে হিন্দুপল্লীতে হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা প্রমাণ করছে, মবতন্ত্রকে কঠোরভাবে দমনের ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চরমভাবে উদাসীন ও ব্যর্থ। গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে কোনোভাবেই এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। কথিত ধর্ম অবমাননা কিংবা মহানবী (সা:) এর অবমাননার ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে কিন্তু তার অজুহাতে এই ধরনের তাণ্ডব মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তারা বলেন, গঙ্গাচড়ায় আক্রমণের মাত্রা এতই নির্মম ছিল যে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতির পরেও এলাকাবাসী এখনও ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অবিলম্বে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও দোষীদেরকে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
এর আগে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে আয়োজিত জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আর কেউ যাতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে না পারে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচন দিলে হেরে যাবে এই ভয়ে তারা পুরো ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চেয়েছিল। কেন একজন ব্যক্তি চাইলেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে? কেউ একজন চাইল আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখল বছরের পর বছর, একটার পর একটা তামাশার নির্বাচন করে সে টিকে গেল! এর কারণ, সে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাটাকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছিল। আমাদের দেশে যতগুলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে- পুলিশ, প্রশাসন, আইন-কানুন, সংবিধান, সেনাবাহিনী- সবকিছু পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছিল। এভাবে পকেটে ঢুকিয়ে, জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তারা। দেশ উজাড় করে দিয়ে বিদেশীদের পায়ে ধরে ক্ষমতা রক্ষা করতে চেয়েছিল তারা। এজন্য আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে হবে, একইসাথে রাষ্ট্রকে যে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলা যায়- সেটা বাতিল করতে হবে। আর কেউ যাতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহকে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলতে না পারে। আমরা সেই কারণে লড়াই করেছি। যখন আমরা যুগপৎ লড়াই করেছি, তখনই আমরা এই প্রশ্নটা এনেছিলাম।
জোনায়েদ সাকি বলেন, এই ব্যবস্থা তারা করতে পারে কারণ, আমাদের সংবিধানে ক্ষমতার কোনো ভারসাম্য নেই। ওখানে চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স নেই। কেউ কাউকে জবাবদিহি করতে পারে না। সব ক্ষমতা কেবল একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত। যে-ই প্রধানমন্ত্রী হোক, পুরো রাষ্ট্র তার পকেটে। এইরকম ক্ষমতা আছে বলেই তারা আমাদের ওপর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে পেরেছে। সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনা এই ব্যবস্থার চূড়ান্ত নগ্ন চেহারাটা আমাদের সামনে দেখিয়েছে। যার পরিণতিও সে দেখেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কেউ যদি আমাদের দেশের নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তার পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে। দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনের কথা উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের দেশের সমস্ত জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন। আমরা সেটা থেকে মুক্তি পেয়েছি, সেটা আমাদের গণঅভ্যুত্থানের অর্জন। কিন্তু এবারের লড়াইয়ে শুধু এতটুকু অর্জনের জন্যই আমাদের সন্তানরা, আমাদের নাগরিকরা এভাবে আত্মাহুতি দেননি, এভাবে শহীদ হননি। হাজার হাজার তরুণ আহত হয়ে পঙ্গুত্বের চিহ্ন বহন করে চলেছে।
গণসংহতি আন্দোলন রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য প্রখ্যাত কৃষক নেতা দেওয়ান আব্দুর রশীদ নীলু বলেন, সরকারের তিনটা দায়িত্ব। বিচার, সংস্কার, নির্বাচন। এই তিন দায়িত্ব পালনের কোনো অগ্রগতি আমরা লক্ষ্য করছি না।
গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় পরিষদের সদস্য মো: অলিয়ার রহমান শেখ বলেন, খুলনার ঐতিহ্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পাটকল চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
দলের খালিশপুর উপজেলা আহবায়ক মোশাররফ হোসেন বলেন, দিনের ভোট যাতে রাতে না হয় সেই লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার করতে হবে যেন নতুন করে স্বৈরাচার দানা বাঁধতে না পারে।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বরিশাল জেলার সভাপতি সাকিবুল ইসলাম সাফিন বলেন, এই সরকারের কাজ ছিল শহীদ ও আহতদের মর্যাদা প্রদান ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা, বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন করা। কিন্তু সরকার এই এক বছরে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা দ্রুত এই কার্য সম্পাদন দেখতে চাই।
সমাবেশের আগে “বন্ধকৃত ২৬টি পাটকল-নিউজপ্রিন্ট-হার্ডবোর্ড মিলসহ খুলনার সকল শিল্পকারখানা চালু করতে হবে” এই দাবি নিয়ে পদযাত্রায় অংশ নেন দলের নেতাকর্মীরা। পদযাত্রাটি খুলনার খালিশপুর থেকে শিববাড়ী পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলার সভাপতি মুনীর চৌধুরী সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, জেএসডির খুলনা মহানগরের সভাপতি খান লোকমান হাকিম, ভাসানী অনুসারী পরিষদ খুলনা মহানগরের সভাপতি শেখ আবদুল হালিম, গণসংহতি আন্দোলন অভয়নগর উপজেলার সদস্য সচিব সামস সারফিন সামন, খালিশপুর দৌলতপুর জুটমিল যৌথ কারখানা কমিটির নেতা মনির হোসেন মনি, প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিকনেতা নূরুল ইসলাম, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, হার্ডবোর্ড মিলের শ্রমিক নেতা মো জহিরুল ইসলাম জব্বারসহ বিভিন্ন বন্ধুপ্রতীম সংগঠন ও দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।