০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১১:০১:৪৩ অপরাহ্ন


খ্রিস্টান রাজ্য গড়ে তুলতে প্রস্তাব কে দিয়েছে, মান্নার প্রশ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৪
খ্রিস্টান রাজ্য গড়ে তুলতে প্রস্তাব কে দিয়েছে, মান্নার প্রশ্ন অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছেন মাহমুদুর রহমান মান্না


‘যেদিন জনগণ রাস্তায় নামবে সেদিন সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে-ইনশাআল্লাহ আগামী আরো বড় সুসংবাদ আসছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। গত ২৫ মে দুপুরে এক অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের অর্থনীতির অবস্থা, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এই সরকার সবখানে দুর্বল। জনগণ বলেছিল পাঁচ বছর টিকে থাকার, আমি বলি পাঁচ বছর টিকার কোনো কারণ নেই। যদি আমরা সবাই আপনারা একসাথে রাস্তায় নামি, সেদিন রাস্তায় নামবেন, ঠিকমতো নামবেন, সেদিন ঘণ্টা বেজে যাবে এবার। মানুষ তৈরি, ওই রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। সর্বত্র, সমস্ত, সব পেশার মানুষ জেগে গেছে, জাগছে। ইনশাআল্লাহ আগামীতে আরো বড় সুসংবাদ পাবেন। আন্দোলনের পথে আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মোটরচালক দলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি হয়।

‘প্রধানমন্ত্রীর কাহিনি বানাচ্ছেন’

১৪ দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, ‘যদি আমি বাংলাদেশে কারো এয়ার বেজ করতে দেই, ঘাঁটি করতে দেই, তাহলে আমার কোনো অসুবিধা নেই। কোনো এক সাদা চামড়ারই প্রস্তাব। আমি একই জবাব দিয়েছি। আমি স্পষ্ট বলেছি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারো হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না, ক্ষমতার দরকার নেই। যদি জনগণ চায় ক্ষমতায় আসবো, না হলে আসবো না। এই কথাগুলো বললাম, কারণ সবার জানা উচিত।’

এ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার আরামে আছে, এই সরকার ভালো আছে? ১৪ দলের সভাপতি উনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, আওয়ামী লীগ কষ্টে আছে, এই সরকার সমস্যার মধ্যে আছে। কেন? বাহানা করেছেন-আমি দেশের কোনো অংশ কারো কাছে বন্ধক দিয়ে বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকতে চাই না। আগে যেরকম বলেছিলে, ওরা আমার কাছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চেয়েছিল আমি দেইনি। কারা? বলেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছেন, সেন্ট মার্টিন কেনো আমরা বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও চাইনি। তারপর আর সেই কথা বলেনি।

তিনি বলেন, এবার কাহিনি তৈরি করেছেন ওরা এক সাদা চামড়ার লোক নাকি তাকে (শেখ হাসিনা) প্রস্তাব দিয়েছেন ওই রাইখাইনদের একটা অংশ নিয়ে আর পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নতুন একটা খ্রিস্টান রাজ্য গড়ে তুলতে হবে-সেই প্রস্তাব তাকে (শেখ হাসিনা) দেওয়া হয়েছে। আমি প্রথম বলতে চাই, আমার দেশের মাটি নিয়ে কেউ আরেকটা রাষ্ট্র করতে চায়, এরকম কথা যেই বলুক আমরা তার বিরুদ্ধে আছি। কিন্তু কে বলেছে? শেখ হাসিনা তিনবার নাকি চারবারের প্রধানমন্ত্রী। এই যে এক এমপি ছিল তথাকথিত তিনবারের এমপি, কলকাতায় গিয়ে পিনাকী ভট্টাচার্যের কথায় জয়বাংলা হয়ে গেছে। এরকম তথাকথিত চারবারের প্রধানমন্ত্রী কত বড় দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি করেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তার কাছে প্রস্তাবটা কে দিয়েছে? এক সাদা চামড়া বললে তো হবে না। চামড়া সাদা তো ব্রিটিশদেরও, ইউরোপিয়ানদের, কানাডিয়ানদের, জাপানিজদের আর যদি কারো ধবল-কুষ্ঠ হয়, তাহলে পুরোটাই সাদা। কোন সাদা চামড়ার লোক আপনাকে এই প্রস্তাব দিয়েছে সেটা বলতে হবে। উনি সেটা বলতে পারবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, কোন মানুষ, কোন সরকার, কোন দেশ আপনার কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চায়। কাহিনি বানিয়ে মনে করবেন কান্নাকাটি করবো আর আপনার দুঃখে বোধহয় সবার মন গলে যাবে। আরে আপনাকে বলবে, না আপনিই থাকেন আমরা সেই বান্দা নই।

স্যাংশন প্রসঙ্গ 

মান্না বলেন, সরকার সমস্যায় আছে। তার তৈরি সেনাবাহিনী প্রধানের নামে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কি কারণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে? সরাসরি বলেছে দুর্নীতির কারণে। দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যবসা পাইয়ে দিয়েছে নিজের ভাইদের, দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ভাই খুনের আসামি তাকে জেল থেকে মুক্ত করে দিয়েছে। আমার মনে প্রশ্ন হয়, ওই যে খুনের আসামিকে জেল থেকে মুক্ত করে দিলো ওটা শুধু জেনারেল আজিজ বলেছেন তাই হয়েছে-প্রেসিডেন্টের সই করতে হয়নি, যিনি তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাকে তার প্রধানমন্ত্রী রিকোয়েস্ট করে বলেননি, তাকে ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, অতএব স্যাংশন যদি ঠিকমতো হয়, তাহলে শুধু সেনাপ্রধান খাবেন না, তৎকালীন রাষ্ট্রপতিও খাবেন, এখনকার এবং তখনকার যে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্যাংশন খাবেন। অপেক্ষা করেন, আমেরিকার স্যাংশন দিতে হবে না, আমরাই আপনাকে স্যাংশন দেবো। সেই পথ তৈরি হচ্ছে, সেই পথে মানুষ এখন যাচ্ছে।

বেনজীর আহমেদের সম্পদ ক্রোক 

সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ভাবতে পারেন একটা লোক কত ধরনের দুর্নীতি করেছে। একজনকে র‌্যাব প্রধান বানিয়েছিলেন, তারপর পুলিশপ্রধান, তারপর তার নামে পুরো বাহিনীরই বদনাম হয়েছে, র‌্যাব স্যাংশন খেয়েছে, এখন আবার তার নামে আমেরিকা নয়, বিদেশ নয়, দেশের মধ্য থেকে তদন্ত হচ্ছে-সব অ্যাকাউন্ট জব্দ, বন্ধ এবং তার যত সম্পত্তি আছে সবকিছু বাজেয়াপ্ত। আমার জানতে ইচ্ছা করে বেনজীর আহমেদের কত টাকা আছে ব্যাংকে? এই যে এতোদিন পর তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করলেন, কেন এতোদিন সময় দিলেন? মানে মাল যা কামিয়েছে সেগুলো বাইরে ট্রান্সফার করে দেওয়ার জন্য। পত্রিকায় দেখলাম, বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ ৩৪২ বিঘা। তার ব্যাংকে কত টাকা ছিল সেটা তাদের জানার কথা। আমি দাবি করছি তা-ও জানান, আমি দাবি করছি কেন এতোদিন পর তার নামে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো-ওই কোর্টকে জিজ্ঞাসা করেন, দুদক যখন তদন্ত করতে চেয়েছিল তখন হাইকোর্ট কেন তদন্ত বন্ধ করেছিল, কার নির্দেশে?

এমপি আনার খুন 

আনোয়ারুল আজীম আনারের প্রসঙ্গ টেনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, আওয়ামী লীগ তিনটা কারণে অস্বস্তিতে আছে। আজিজ, বেনজীর এবং একজন এমপির কারণে। সে (আনোয়ারুল আজীম আনার) এমপি নাকি? জনগণ ভোট দিয়েছে? দেয় নাই। সেই এমপি যার নামে রেড অ্যালার্ট ছিল। যার নামে খুনের মামলা ছিল, যার নামে ধর্ষণ-লুট সব ধরনের মামলা ছিল এবং সেই এমপি নিজেই বলেছিলেন, আমি প্রথমবার যখন এমপি হয়েছি, তখন কয়েকটি মামলা উঠে গেছে, তারপর ধীরে ধীরে এবার এমপি হওয়ার পর আমার নামে সব মামলা উঠে গেছে। সব চোরচোট্টা-খুনি-ডাকাত মিলে আওয়ামী লীগের দল।

জাতীয়তাবাদী মোটরচালক দলের সভাপতি সেলিম রেজা বাবুর সভাপতিত্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা আজমল হোসেন পাইলট, ভিপি ইব্রাহীম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন