০১ জুলাই ২০১২, সোমবার, ১১:০৪:৫২ অপরাহ্ন


ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড?
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৪
ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড? ইরানের নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি


হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের মৃত্যু নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় জল্পনা-কল্পনা বিষয়টি কি নিতান্তই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা, নাকি উচ্চ কারিগরি প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিশেষ করে বর্তমান উষ্ণ ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ইরান-ইসরায়েল পারস্পরিক সংঘাত সৃষ্টি এবং সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে যখন বিশ্বজোড়া আলোচনা তখন কোনো সম্ভাবনাকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ইরান প্রযুক্তি এবং কারিগরি সক্ষমতার তুঙ্গে অবস্থানকারী একটি দেশ। ভাবতেও অবাক লাগে সেই দেশের অন্যতম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার নিয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজমান একটি স্থানে যাবে? প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন সময়ে এক-দুই-তিন পরে পরে কখন, কোথায় কি ধরনের আবহাওয়া সৃষ্টি হতে পারে সেটি জানা সম্ভব। এগুলো না জেনেবুঝে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ইরানি প্রেসিডেন্ট বহনকারী হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করেনি। সাধারণত এই ধরনের ভিভিআইপির হেলিকপ্টারকে দুই-তিন এমনকি চারটি হেলিকপ্টার স্কট করে থাকে। সেক্ষেত্রে কেন শুধু একটি বিশেষ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়লো? আরো জানা গেছে, হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এর সেফটির খুঁটিনাটি বিষয় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্র দেশ ইসরায়েলের অজানা থাকার কথা নয়। তবে এটাও ঠিক মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি যখন সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো অগ্নৎপাতের অপেক্ষায়, তখন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল সরাসরি সংঘাতের ঝুঁকি নেবে কি না?

অনেকে বলছেন, ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রেও পক্ষ-প্রতিপক্ষ আছে। কিন্তু নিজের নাক কেটে কারো যাত্রা ভঙ্গ করার মতো জাতি ইরানিরা এখন আর নেই। এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের সেনা শাসক জেনারেল জিয়াউল হকের বিমান দুর্ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের সামঞ্জস্য করা যেতে পারে। সেই সময়েও বিষয়টি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা করা হলেও সঠিক কারণ কিন্তু প্রমাণের অন্তরালে রয়ে গেছে।

জানি বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষণা হবে। নানাভাবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের সৃষ্টি হবে। কনসপাইরেসি থিওরি দেওয়া হবে। দেখতে হবে ঘটনাটি গাজায় চলমান নির্মম গণহত্যাকে কোন পথে নিয়ে নিয়ে যায়। ইরান কিন্তু শুরু থেকেই এই সংঘাতে হামাস গ্রুপের পক্ষ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই ইরান-ইসরায়েল দুই দফা সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল।

এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কি না-সেটি প্রমাণ যেমন সহজ নয়। তেমনি এটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য দুর্ঘটনা সেটিও সরাসরি মানা যাবে না। তাহলে কি পরিস্থিতি বিচার না করেই ঝুঁকি নিয়ে হেলিকপ্টার উঠেছিল?

গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমাগত কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ইসরায়েল। আইসিসি থেকে নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বসহ যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। এই মুহূর্তে ইরানি প্রেসিডেন্টের অপঘাতে মৃত্যু আগুনে ঘি ঢালার মতোই বিবেচিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন