০৬ জুলাই ২০১২, শনিবার, ১১:১৫:০০ পূর্বাহ্ন


পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনেই নানা ঘটনা
হাতাহাতি-ধাক্কাধাক্কিই যেন আ.লীগের নিয়তি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৪
হাতাহাতি-ধাক্কাধাক্কিই যেন আ.লীগের নিয়তি বক্তব্য রাখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ


যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি দীর্ঘদিনের। আবার প্রধানমন্ত্রী যখন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশে যোগ দিতে আসেন তখন এই বিভক্তি আরো চরম আকার ধারণ করে। দুই পক্ষের অবস্থান যেন মারমুখী। এর বহিঃপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনায়ও। কিন্তু এর থেকেই যেন মুক্তির উপায় মিলছে না। অনেকেই বলেছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিভক্তির আগুন জ্বলতেই থাকবে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে নতুন কমিটি হচ্ছে না তা কারো বোধগম্য নয়। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি করার ব্যাপারে ন্যাটাইটা কার হাতে? দীর্ঘদিন ধরে আলাদাভাবে অনুষ্ঠান এবং কাদা ছোড়াছুড়ি করলেও এবার প্রকাশ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছে। তার-ও আবার মন্ত্রীর সামনে।

নিউইয়র্কে আসা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপিকে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গত ২৫ মে বুধবার রাতে জেএফকে এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৮ এ ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন হাছান মাহমুদ। বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত হন। এ সময় দলীয় কোন্দল থেকে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। 

নিজেদের গ্রুপের শক্তির জানান দিতে দুই গ্রুপ শক্ত অবস্থান নেয়। নেতাকর্মীদের স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠে বিমানবন্দর এলাকা। আগে থেকেই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকলেও মন্ত্রীকে দেখা পরপরই যুবলীগের এক নেতা দৌড়ে গিয়ে মন্ত্রীকে সালাম করতে যান। এই সময় অন্যরা লাইন ভেঙে ছুটে যায়। দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার। এর মধ্যে কিলঘুসিও চলে। কেউ হতাহত না হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতৃবৃন্দের সহায়তায় ড. হাছান মাহমুদকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জানান দলের নেতাকর্মী বেশি । সবাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিল। তাই একটু ভিড় হয়েছে, ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিরোধের কারণে নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভার এক পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সংবর্ধনা সভায় পরিণত হয়। গত ২৬ মে বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান ট্যারেস হলে আয়োজিত এই সভায় তিনি বক্তব্য রাখার আগে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তুমুল হট্টগোল বেধে যায়। নিউইয়র্কের বাইরের স্টেট থেকে আসা সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখার সময় এক গ্রুপ উত্তেজিত হয়ে ভাষণে বাধা প্রদান করে। এ সময় আরেক গ্রুপ তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকলে হলের ভেতর উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ মঞ্চে থাকা অতিথিরা তাদের থামাতে চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তারা কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর দোহাই দিয়ে থামতে আহ্বান জানান। সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বক্তব্য শুরু করলে হলের ভেতরে তার বিরুদ্ধে স্লোগান শুরু হয়। ফজলুর রহমানকে বসে যেতে আহবান জানাতে থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও পাল্টা স্লোগান শুরু হলে অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। 

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ, নিজাম চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান মিয়াসহ নেতারা বক্তব্য রাখেন। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মিয়া এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের প্রেরণার শক্তি হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তিনি পাঁচবার দলকে ক্ষমতায় নিয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছেন দক্ষিণ এশিয়ায় তার মতো আর কোন নেতা নেই। তিনি আমার প্রতি যে স্নেহ ভালবাসা দিয়েছেন তা জীবন দিয়েও তা শোধ করা যাবে না। শেখ হাসিনাকে ১৯ বার চেষ্টা করা হয়েছে হতার অপচেষ্টা চালানো হয়। আওয়মী লীগ কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু ছিলেন অবিচল। তিনি সব সময় লক্ষ্যে অবিচল থেকে দলকে বারবার ক্ষমতায় নিয়ে গেছেন। আমার ঠিকানা সরকার নয়, আমার ঠিকানা দল। এখন সবাই আওয়মী লীগ করতে চায়। কিন্তু নৌকায় যেন বেশি যাত্রী না উঠে আর উল্টাপাল্টা যাত্রীর দিকে আপনারা নজর দেবেন।

তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, দিনের বেলায় তাদের ঠিকা নয়াপল্টন এবং রাতের বেলায় বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসে তারা ধরনা দেয়। বিএনপি দেশের মানুষে কাছে যায় না। ক্ষমতার মালিক দেশের জনগণ। ক্ষমতার মালিক কোন বিদেশি দেশ বা রাষ্ট্রদূতরা নয়। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টাকে নিয়ে তারা প্রতারণার করলো। এর আগে তারা কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করলো। তারা চেষ্টা করেছিল ২০২৪ সালের নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে আরো উচ্চতর স্তরে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো মধুর করার জন্য আপনারা নেতা কর্মীরা সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাতে আমাদের উপকার হবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপিতো ক্ষমতায় ছিল তারা কেন জিয়া হত্যার বিচার করেনি।

শেয়ার করুন