০৬ জুলাই ২০১২, শনিবার, ০৯:৫৭:২৭ পূর্বাহ্ন


বৃষ্টিতেও জমে উঠে শেরপুর জেলা সমিতির বনভোজন
ইমা এলিস
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৭-২০২৪
বৃষ্টিতেও জমে উঠে শেরপুর জেলা সমিতির বনভোজন বেলুন উড়িয়ে শেরপুর জেলা সমিতির বনভোজন উদ্বোধন


গত ৩০ জুন রোববার সকাল থেকেই ছুটোছুটি শুরু হয়েছিল নিউ ইয়র্কে প্রবাসী শেরপুরবাসীর। নিজ জেলার ঐতিহ্যবাহী বনভোজন বলে কথা। কেমন হবে আর কত মানুষ হবে এমন হিসাব মেলাতেই ২৯ জুন শনিবার রাত পার করেছেন বনভোজন উদযাপন কমিটি। কর্মীরা খুবই কর্মঠ। বনভোজনের সবই ঠিক ছিল কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে এলো এক পশলা বৃষ্টি। কখনো থামে আবার বাড়ে। এতে মন ভেঙ্গে যায় কর্মীদের। কিন্তু কেউই হাল ছাড়লেন না। বৃষ্টি থেকে শরীর বাঁচাতে সবাই ছুতে গেলেন ছোট্ট প্যাভিলয়নে। অনেকেই আশ্রয় নিলেন নিজ নিজ গাড়িতে। ৩০/৪০ মিনিট পর থেমে গেলো মুষলধারার বৃষ্টি। আবার হই হই করে সবাই ছুটে গেলো মাঠে। শুরু হলো বন্ধ খেলাধুলা। সে কী আনন্দ।

নিউ ইয়র্কস্থ প্রবাসী শেরপুর জেলা সমিতি আয়োজিত বনভোজনে শতশত প্রবাসী শেরপুরবাসীসহ তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ও বিভিন্ন জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরাও অংশ নেন। দুপুর ১২টার দিকে বেলুন উড়িয়ে বনভোজনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও শেরপুরের কৃতিসন্তান সাংবাদিক মো: আবুল কাশেম।

নিউ ইয়র্কের অপূর্ব প্রাকৃতিক সাজে সজ্জিত এফডিআর স্টেট পার্কে দিনব্যাপী উক্ত বনভোজনে ছিল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অন্ষ্ঠুান ও র‌্যাফেল ড্র। বৈরী আবহাওয়ার ফলে আশানুরূপ মানুষ উপস্থিতি না হলেও আনন্দের কোন ঘাটতি দেখা যায়নি বনভোজনে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নিউ ইয়র্কের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বেঙ্গল হোম কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম জামিল বলেন, শেরপুরবাসীর আমন্ত্রণ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আপানাদের আনন্দঘন মুহূর্তে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। বৈরী আবহাওয়ায় আপনাদের মত আমিও মর্মাহত কারণ সবাইকে সাথে নিয়েই আনন্দ ভাগাভাগি করার যে বাসনা নিয়ে এসেছিলাম তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হলো না। আগামী বছর নিশ্চয় সেটা পুষিয়ে নেবো। তিনি বলেন, যেহেতু আমরা হোম কেয়ারের ব্যবসায় সম্পৃক্ত সেহেতু সবার আমন্ত্রণেই ছুটে যেতে হয়। আপনাদের ঘরে বয়স্ক ব্যক্তি থাকলে তাদের যত্ন-সেবার দায়িত্ব আমরা নেবো। প্রয়োজন হলে সরাসরি যোগাযোগ করবেন কোন তৃতীয় পক্ষ বা ভায়া নিয়ে কাজ করবেন না।

প্রধান উপদেষ্টা সাংবাদিক মো: আবুল কাশেম বলেন, বৈরি আবহাওয়ায় কারও হাত নেই। আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা থাকবে বনভোজনে আগত অতিথিদের সেবা ও আপ্যায়নে যেন কোন ক্রটি না ঘটে। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে এই একটি মাত্র দিনেই আমরা একত্রিত হয়ে থাকি, আনন্দ করে থাকি। আজকে আবহাওয়ার কারণে আনন্দ না হয় একটু কমই হলো, তাতে কি, বেঁচে থাকলে আগামী বছর আনন্দ হবে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে শেরপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরার তাগিদে আমরা শুধু বনভোজনেই করে থাকি তা নয়। দেশীয় সকল সংস্কৃতির সাথে আমরা সংযুক্ত থাকারও চেষ্টা করি। আর এ জন্য শেরপুর জেলার ইতিহাস প্রচার ও উন্নয়নের জন্যও প্রবাসী শেরপুরবাসীকে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আহবান জানান তিনি।

বাংলাদেশে বেড়াতে যাওয়ার সময় প্রবাসী শেরপুরবাসীদের কাছে শতকরা ৩০ শতাংশ মূল্যহ্রাসে বিমানের টিকেট বিক্রি করবেন বলে ডিজিটাল ট্রাভেলস এ্যাস্টোরিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম নজরুল ইসলাম ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণায় সকলেই আনন্দিত হয়ে ওঠেন। দেশে যাবার আগে এসময় তার সাথে যোগাযোগ করারও অনুরোধ করেন তিনি।

বনভোজনে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রবাসী শেরপুর জেলা সমিতির সভাপতি নাহিদ রায়হান লিখন বলেন, দেশীয় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য শেরপুরবাসীদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এর জন্য তিনি নিউ ইয়র্কের সকল শেরপুরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্ববান জানান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রবাসী শেরপুর জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা মামুন রাশেদ, আহবায়ক প্রদোষ চক্রবর্তী, যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মাসুদ পারভেজ মুক্তা, প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ আক্তারুজ্জামান, সদস্য সচিব মোঃ ছামেদুল হক ঝন্টু, যুগ্ম সদস্য সচিব রেখা জামান চৌধুরী ডলি প্রমুখ।

বনভোজনে বিশেষ অতিথি ও নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফাহাদ সোলায়মান, সাপ্তাহিক জন্মভুমির সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, উত্তর আমেরিকা প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক মঞ্জুরুল হক, সাপ্তাহিক খবরের সম্পাদক ফরিদ আলম, সাপ্তাহিক খবর ডটকমের সম্পাদক মশিউর রহমান মজুমদার, ক্রেডিট রিপেয়ার ও কোর মাল্টি সার্ভিসেসের নির্বাহী প্রধান মোহাম্মদ আবুল কাশেম, জাতিসংঘ মিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন উক্ত বনভোজনে উপস্থিত ছিলেন। 

প্রবাসী শেরপুরবাসীর এবারের বনভোজনে র‍্যাফেল ড্র’র জন্য প্রথম পুরস্কার নিউ ইয়র্ক-ঢাকা-নিউ ইয়র্ক বিমান টিকেট অনুদান প্রদান করেন বেঙ্গল হোম কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম জামিল।

বনভোজনের শেষ পর্বে র‌্যাফেল ড্র’তে নিউ ইয়র্ক-ঢাকা-নিউ ইয়র্ক বিমান টিকেট, স্বর্ণের চেইন, টিভি ও ল্যাপটপসহ ২৪টি আকর্ষণীয় পুরস্কার জিতে নেন প্রবাসী শেরপুরবাসীর ভাগ্যবানরা। বনভোজনে প্রবাসী শেরপুর জেলার শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

শেয়ার করুন