০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৫৩:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


হিরো আলম ইস্যু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
হিরো আলম ইস্যু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হিরো আলমের উপর সরকার দলের হামলা


এক কিলোমিটারের ব্যাবধানে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠিত হতে দেখে প্রশংসা করে ফ্লাইট ধরেছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারী উজরা জেয়া। বারবার বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেনের সুরে। ভিসানীতি ঘোষণার সময় ব্লিংকেন বলেছিলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারীদের ভিসানীতির আওতায় আসবে। এমন কাজের মধ্যে রয়েছে-  ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।’ তিনি আরেক বার বলেছিলেন, “আমরা তাকিয়ে আছি, গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে। আমাদের প্রত্যাশা,  বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ওই অঞ্চলে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”

এবার উজরা জেয়াও বলেছেন, ‘আমি সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে, সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও ন্যায্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে সব পক্ষের আহ্বান জানাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘আসুন, আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিই।’ 

গত ১৪ জুলাই উজরার ঢাকা ত্যাগের পর ঢাকা ১৭ এর উপ-নির্বাচন হলো ১৭ জুলাই। কিন্তু ভোটারদের বাধা প্রদান করা হয়নি ঠিকই, কিন্তু ওই উপনির্বাচনে এক প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে বেড়ধক পিটিয়েছে নৌকার ব্যাচধারী কতিপয় রাজনৈতিক কর্মী। ঘটনার সূত্রপাত, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে ভোটের দিন বিকেল সোয়া তিনটার দিকে। তখনও ভোট শেষ হতে বেশ ক্ষানিক সময় বাকি। কিন্তু মাঠে তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলে পুলিশকে আহ্বান জানানোর পর ছুটে এসে হিরো আলমকে সেখান থেকে সেফ করে গেট দিয়ে বের করে দেয়। এরপরই রাস্তায় তার উপর ওইসকল লোকদের প্রচন্ড রকম হামলা। একজন সাংবাদিক পুলিশকে বলতে শোনা গেছে, ওই প্রার্থীর উপর হামলা হচ্ছে। তাকে মারধর করা হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে পুলিশকে বলতে শোনা যায় ‘ওগুলো কেন্দ্রের বাইরের বিষয়। অভ্যন্তরে নয়।’

অমন ঘটনার জন্য কে দায়ী, কে দায়ী নন সেটা বিচার বিশ্লেষণের দায়ভার কার, উপর কে জানে! 

কিন্তু মার্কিন প্রতিনিধিরা এতদিন ধরে যা বলে আসছে, বা যে সব উদ্যোগ নিয়েছেন, এসব কার্যক্রমে কী অনুমান করা যায় যে তার ছিটেফোটাও আমলে নেয়া হবে? একজন প্রার্থীকে যেভাবে মারধর করা হয়েছে, সেটা দেখার পর মানুষ ভোটকেন্দ্রে কী যাবেন তার পছন্দের ভোটারকে ভোট দিতে এটা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। তাহলে ভোটের অধিকার কিভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে?  

মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কোনো রকম সংহিসতা দেখা যায়নি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন দুই গ্রুপের মধ্যে। কিন্তু পরক্ষণে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষমতাসীন দলের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ মোঃ ফয়জুল করিমকে ভোটের দিন কিল ঘুসি মারা হয়েছে, যাতে তিনি পুলিশের কাছে যেয়ে কেঁদেছেন। সেটা আমলে নেয়া হয়নি। সেটা আমলে নিলে ঢাকা উপনির্বাচনে রাস্তায় ফেলে বেড়ধক মার দেয়া হতো না অন্যতম প্রার্থী হিরো আলমকে। 

হিরো আলমের প্রতি অনীহা ছিল নির্বাচন কমিশনের। তার প্রার্থীতা বাতিল করা হলে তিনি হাইকোর্টে যেয়ে তার প্রার্থীতা ফিরে পান। তাহলে নির্বাচন কমিশনের বিচার বিশ্লেষণ কতটা গ্রহণযোগ্য। এরপর ভোটের প্রচারণায়ও হামলার শিকার হন হিরো আলম। এরপর ভোটের দিন হিরো আলম অভিযোগ করেন, তার এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। সেখানেও নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, তার এজেন্টরা যথাযত ফর্ম পূরণ করেননি। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এজেন্টদের ক্ষেত্রে নতুন অভিযোগ তুললেন বর্তমান হাবিবুল আউয়াল কমিশন।  শুধু এখানেই সব শেষ নয়। সাংবাদিকদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘঠনাও ঘটেছে এ উপ নির্বাচনে। এবং অন্তত দুটি স্থানে ওই ঘঠনা ঘটেছে।

এদিকে উপনির্বাচনে অংশগ্রহণকারী একজন প্রার্থী সরকারী দলের প্রার্থীর সমার্থকদের হাতে মারধর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তোলপাড়। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জাতিসংঘ, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জানিয়েছেন, তাদের উদ্বেগের কথা। 

পরিশেষে 

এক উপ নির্বাচনেই এতকিছু তাও আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেশ কাঁপানো ভিসানীতির পর। যে নির্বচনটাকে অনেকটাই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মডেল বলে উপস্থাপনের চেষ্টা ছিল সংশ্লিস্ট সকলের। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়টি প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। কিন্তু একটি উপনির্বাচনেই যখন এতো এলেমেলো অবস্থা তাহলে গোটা বাংলাদেশে যখন একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তখন নির্বাচন কমিশন কিভাবে সব সামাল দেবে এ দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনে, সেটা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। 

তাছাড়া ভিসানীতির খড়গ থাকলেও খোদ প্রধানমন্ত্রী গত ৩ জুন ২০২৩ এ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন দেবে! ও নিয়ে মাথা ব্যাথা করে লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেইসব মহাদেশেই আমরা যাতায়াত করব, বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে, উন্নত হবে, চাঙ্গা হবে।” 

ফলে সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এমন ভিসানীতি কতটা কার্যকরি ভূমিকা রাখবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ নিয়ে ইতিমধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে।

শেয়ার করুন