০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৭:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দেশকে রুহিন হোসেন প্রিন্স
সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৭-২০২৪
সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না রুহিন হোসেন প্রিন্স


বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, সঙ্কট সমাধান সরকার যদি রাজনৈতিক উদ্যোগ না গ্রহণ করে, তাহলে আগামীতে আরো নতুন নতুন সঙ্কট তৈরি হবে। এতে করে আমাদের যতচুকু সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে সেটাও আগামীতে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকায় বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের সাথে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

দেশ: দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখন কি মনে করেন?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: এখনও তো পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে হয় না। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশে। যেহেতু ছাত্রদের দাবি এখনো পুরণ হয়নি। কাজেই সারা দেশে ছাত্রদের যে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটেছে তা ঘটবে এবং এটাই স্বাভাবিক বিষয়। এই যে আপনার সাথে কথা বলছি তখনও সারা দেশে ছাত্র বিক্ষোভ হয়েছে। কেননা এর আগের রাতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার করা হলো যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের কয়েকজন তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে। কারণ সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়েছে। এবং এইসব সমন্বয়কদের বক্তব্য প্রচার করা হয় ডিবি অফিসে বসে। কিন্তু অবাক কাণ্ড ডিবি অফিসে বসে দেয়া এসব বক্তব্য কারো কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কোনো সচেতন মানুষের কাছেই এটি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। বিভিন্ন গণামধ্যমে কিছুটা পাওয়া যায়, পুরোটা পাই না। কিন্তু পরবর্তীতে তো আপনারা দেখেছেন যে ছাত্ররা বলেছে- তাদের আন্দোলন চলবে। আর একারণে আপনারা দেখেছেন ২৯ জুলাই কারফিউ’র মধ্যেও ছাত্ররা বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। রাজপথে নেমেছে। আমি এটাকে অস্বাভাবিক কিছু মনে করি না। 

দেশ: আপনি কি মনে করেন এই আন্দোলন করা হয়েছে সরকার পতনের জন্য। সরকারকে বেকায়দাতেই ফেলার জন্য। 

রুহিন হোসেন প্রিন্স: না প্রথমত এটাকে এমনটা মনেই করি না। আমার জানা মতে, অতীতের সব ধরনের ইতিহাস পড়া থেকেও যা বুঝেছি এই ধরনের আন্দোলন রাজধানী ঢাকা থেকে সারাদেশে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে- তাতে মনে হয়েছে এটা ছাত্রদের হৃদয়ের আন্দোলন। এটা ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন। ২০১৮’তে এরা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছে। এর আগে আমাদের ছাত্ররা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করেছে। এসব আন্দোলনে তাদের তালবাহানা করে ঘরে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে কিন্তু তাদের দাবি এখনো মানা হয়নি। সুতরাং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওই আন্দোলন করতে গিয়ে তিক্ততার শিকার হয়েছে। সে-ই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করা কিশোররা এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তারা দেখেছে এই শাসকদের অতীত ও বর্তমান। এই শিক্ষার্থীরাই দেখেছে তারা কিভাবে পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। তারা অতিষ্ঠ্য। কোনো সংসদ নির্বাচন নেই। হলে সিট পায় না। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগ গেস্ট রুমে নিয়ে অত্যাচার করে, যোগ বিয়োগের রাজনীতি করে। নারীদের বেলাতেও একিই অবস্থা। সরকারেরই তথ্য বলছে তারা তাদের মানসম্মত কাজ পায় না। এবং সমাজে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশও নেই। মানুষকে মর্যাদাহীন করে রেখেছে ক্ষমতাসীনরা এবং সাঙ্গপাঙ্গরা। আর এজন্য দেখবেন আন্দোরনকারী ছাত্ররা তাদের নামও পরিবর্তন করে রেখেছে। বলে তারা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করছে। সুতরাং এই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এই অধিকারটা সে চেয়েছিল তার শিক্ষাঙ্গনে এবং কর্মসংস্থানের জায়গায়। তাই দ্রুত সময়ে তাদের মর্যাদা দিয়ে যদি এই দাবি মানা হতো তাহলে দাবিগুলি ওই জায়গায়ই থাকতো। ছাত্ররা সরকার পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেছে সেটি কখনোই আমার কাছে মনে হয়নি। 

দেশ: বলা হচ্ছে এই কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে আসলে শ্রীলঙ্কা স্টাইলে গণভবন দখলের আন্দোলন এটা। 

রুহিন হোসেন প্রিন্স: না এটা জানি না। এই তথ্য নিয়ে কথা বলতে গেলে আরো বিস্তারিত জানতে হবে। এবং সেটা যে বিশ্বাসযোগ্য হবে তা আমি মনে করি না। দেখেন যখন গণআন্দোলন গণজোয়ারে পরিণত হয় রাজনীতিতে নানান ধরনের মানুষ থাকে। সুতরাং যার যার ভূমিকা সে সে পালন করবে। এই প্রসঙ্গে আমি বলবো আমরা এবং আমাদের বাম জোট বলতে চাই আমরা কখনো আরাজনৈতিকভাবে কোনো কিছুর সমাধান চাই না। বিদেশী কোনো আধিপত্যবাদী শক্তি বা অপশক্তি তারা এই ধরনের ঘটনায় সুযোগ নিয়ে কোনো ঘটনা ঘটাবে তা-তো আমরা চাই না। কিন্তু মনে রাখতে হবে যারা এখন ক্ষমতায় আছে তারা কিন্তু নির্বাচিত না। যারা মুখে যতোই বলুক না কেনো। জনগণ কিন্তু ভোট দিতে পারেনি। খুবই স্বাভাবিক সর্বশেষ ঘটনার পরে পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী দু’শত জন প্রাণ হারিয়েছে। এবং যে ভয়াবহ ধবংসযজ্ঞ হলো এবং এটা যে তারা ঠেকাতে পারলো না এর দায় নিয়েই তারা যেনো পদত্যাগ করে। এই মুহূর্তে আমাদের অন্যতম রাজনৈতিক সঙ্কট বলে আমি মনে করি। রাজনৈতিক অঙ্গনের দাবি। সুতরাং ছাত্র সমাজ যে ৯ দফা দাবি করেছে তার সাথেও আমরা আছি। সে দাবি পুরণ করা হোক। একিই সাথে আমরা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করছি। নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার চাই বলে সবার অংশগ্রহণে যে নির্বাচন করা যায় সেদিকেই যেতে হবে। আর সবার অংশগ্রহণ বলতে আমরা তা-ই বুঝি যারা বাংলাদেশকে মানে না একাত্তরের ঘাতক তাদের বাদ দিয়েই বলি। আর একিই সাথে বলতে চাই এই সম্প্রতি যা ঘটে গেছে তার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে হবে। আমরা যদি তা করে আগেই গণভাবে মন্তব্য করতে থাকি তাহলে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে। তাহলে কারা জড়িত তাহলে প্রকৃত অর্থে বের করা যাবে না। আমরা মনে করি প্রতিটি হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। এবং একিই সাথে এধরনের ধবংসযজ্ঞের সাথে যারা জড়িত তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু তা না, এগুলি করতে গিয়ে কালক্ষেপণ করবে এবং তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করবে তা হবে না। সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। সব শেষে বলি এই যে কোটা আন্দোলন নিয়ে একটি সহজ সমাধান ছিল। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকে কথোপকথন, এমন কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ ..। আমরা সে-ই সময়েই বলেছিলাম এই ভাষায় সঙ্কট সমাধানে কোনো নির্দেশনা নেই। বরং এই ঘটনা প্রলম্বিত করার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এবং বলেছিলাম এই সঙ্কটকে দীর্ঘায়িত করবে। তাই সঙ্কট সমাধান সরকার রাজনৈতিক উদ্যোগ না গ্রহণ করে তাহলে আগামীতে আরো নতুন নতুন সঙ্কট তৈরি হবে। তা না হলে আমাদের যতচুকু সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রযেছে সেটাও আগামীতে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। 

শেয়ার করুন