৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:২৬:৩১ পূর্বাহ্ন


বৈধতা যখন প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্ক সৃষ্টি করা আত্মঘাতী
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১০-২০২৪
বৈধতা যখন প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্ক সৃষ্টি করা আত্মঘাতী প্রধান উপদেষ্টাকে শপথ পড়াচ্ছেন রাষ্ট্রপতি


বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিয়েছে। সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্থান না থাকলেও সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ অনুশাসনে সরকার শপথ নিয়েছে। দেশে কিন্তু সামরিক আইন জারি হয়নি অথবা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সংবিধান স্থগিত করা হয়নি। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রপতি ছাড়া দেশে এখন কোনো সংবিধানসম্মত কর্তৃপক্ষ নেই। উপদেষ্টারা সবাই সংবিধান সুরক্ষার শপথ নিয়েছেন, বিধায় সংবিধান পরিপন্থী কোনো কথা বা কাজ করার অধিকার কারো নেই। এমতাবস্থায় সংবিধানসম্মত জাতির পিতাকে মানতে রাজি না হয় বা সম্মত জাতীয় দিবস বাতিল করা সংবিধান সম্মত কি না ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।

বাংলাদেশ কারো দয়ার দান বা স্বাধীনতা হাওয়া থেকে পাওয়া কিছু নয়। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার বিজয়ী বীরদের অবদান অস্বীকার করার পরিণাম শুভ হবে না। বাংলাদেশের জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর মাইলফলক দিন। এ দিনগুলোর বিশেষ মর্যাদা বজায় রাখা সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবশ্যই দায়িত্ব। একটি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সীমিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সাময়িকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অংশীজনদের সম্পৃক্ত রেখে দেশের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কারকাজ সম্পাদনের পর স্বাধীন, নিরপেক্ষ, অংশীদারমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার গঠন এখন প্রাধিকার। সরকারের উচিত হবে না কোনো কার্যক্রমের মাধ্যমে বৈষম্য, বিভেদ আরো উসকে দেওয়া। এই সরকার কোনো অবস্থায় দেশের মৌলিক অবকাঠামো পরিবর্তন অথবা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে না। সেই কাজটি করতে হবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে। সেই সরকারকে আবার বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে হবে।

তাই বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ, তরুণ অনভিজ্ঞ উপদেষ্টাদের সঙ্গে আপনারা আপনাদের পরিকল্পনাগুলো ভেবে দেখেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে। ভাবাবেগ দিয়ে আন্দোলন চলে, আন্দোলনে বিজয়ী হওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো সমস্যাসংকুল দেশ চালাতে কূটনীতি, কৌশল প্রয়োজন। সংবিধানের সংরক্ষণের জন্য শপথ নিয়ে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করা আত্মঘাতী বিবেচিত হবে। দেশে কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট দূর হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট চলছে, শিল্প-কারখানাগুলোয় উৎপাদন সংকট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য কোনো সেক্টরেই স্বস্তি নেই। সাধারণ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনে অস্থিরতা চলছে। এই মুহূর্তে জাতিকে একতাবদ্ধ রাখা প্রধান চ্যালেঞ্জ। দেশের সাধারণ কার্যক্রমে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জুলাই-আগস্টের কোনো হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা এখনো অনিশ্চিত। নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন এবং আহতদের সঠিক চিকিৎসাব্যবস্থা এখনো অগোছালো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বৈষম্য দূর করে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণের কার্যক্রম কিন্তু শুরু হয়নি। এ ধারা চলতে থাকলে জনগণ, কিন্তু আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়তে পারে।

মনে রাখতে হবে, দেশ-বিদেশে সরকারের বৈধতা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ, সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। ক্ষমতা কিন্তু চিরদিন কারো জন্যই নিরঙ্কুশ থাকে না। সবাইকেই কোনো সময় কারো কাছে কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হয়। সময় থাকতেই তাই সবাইকে দেওয়ালের লিখন পড়া উচিত।

শেয়ার করুন