২০ সেপ্টেম্বর ২০১২, শুক্রবার, ০৫:১০:৪৯ অপরাহ্ন


বৈষম্যহীন মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে ১০ দফা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৯-২০২৪
বৈষম্যহীন মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে ১০ দফা ড. নজরুল ইসলাম


জাতিসংঘের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা টিমের সাবেক প্রধান এবং জাপানের এশিয়ান গ্রোথ ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং প্রফেসর বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম একটি বৈষম্যহীন, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের অভিপ্রায়ে তার দীর্ঘ গবেষণামূলক ১০ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেছেন। 

গত ২৪ আগস্ট শনিবার নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে একটি মিলনায়তনে প্রগ্রেসিভ ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মর্তুজা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা কতখানি, কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন সমাজের আকাক্সক্ষাকে পাশ কাটিয়ে ৫ আগস্টের বিজয়কে নেহায়েত ক্ষমতার হাতবদলের উপায় হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিগত সরকারের অপকর্মকে ব্যবহার করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে লঘু এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অস্বীকার করার সচেতন একটি প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

গোলাম মর্তুজা উল্লেখ করেন, প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহ পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রগ্রেসিভ ফোরাম এমন আলোচনার মধ্যদিয়ে তরুণ ছাত্র-সমাজের আত্মত্যাগের সফল একটি পরিসমাপ্তি দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেন আলোচকরা। 

সেমিনারের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. নজরুল ইসলাম। এগুলো হচ্ছে-(১)অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস; (২) সুশাসন অর্জন; (৩) গণতন্ত্রের মানোন্নয়ন ও আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন; (৪) পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা; (৫) গ্রাম পরিষদ গঠন; (৬) ভৌগোলিক বৈষম্যের অবসান; (৭) সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি; (৮) নারী, শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদান; (৯) সর্বজনীন সামরিক শিক্ষার প্রবর্তন এবং (১০) সার্বভৌমত্ব শক্তিশালীকরণ ও নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির অনুসরণ। 

ড. নজরুল তার ১০ দফা পরিকল্পনা-কর্মসূচির ওপর বিস্তারিত আলোচনাকালে উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের যে চূড়ান্ত পরিণতি ৫ আগস্ট হলো তার পরিপ্রেক্ষিতে এই ১০ দফা কর্মসূচির প্রাসঙ্গিকতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। 

কারণ হচ্ছে. আমরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিয়েই শুরু করতে পারি। সেখানে লেখা আছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছে। সেজন্যেই এখন বৈষম্য বিরোধী বলা হচ্ছে, সেটি কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের শুরুতেই উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তারপরের ৫০-৫২ বছরে বাংলাদেশ যেদিকে এগিয়েছে, তাতে কিন্তু সে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সামাজিক ন্যায়বিচার কতটা হয়েছে, সেটিও বলা কঠিন। সেজন্যই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে এই সামাজিক আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। আন্দোলনটি কোটা সংস্কার দিয়ে শুরু হলেও পরে তা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হিসেবে অভিহিত হয়েছে এবং তার মধ্য দিয়েই অনেক বেশি ছাত্র-জনতার সম্পৃক্ততা ঘটেছে। 

গোটা বিশ্বের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণার আলোকে বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ বলতে কী বোঝায়? এর অর্থনীতি কী, এর সমাজ কী, রাজনীতি কী-সে ব্যাপারে কিন্তু স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। এখন আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন জনে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন। হয়তো আমরা আশা করতে পারি যে, এ আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই জিনিসটা কিছুটা পরিণতি পেতে পারে। তবে সেটা কতটা পাবে এবং পরবর্তী সময়ে তা কী ধরনের ঘটনাবলি দ্বারা পরিচালিত হবে, এই সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচারের লক্ষ্যটা অর্জিত হবে কি না, সেটিও এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত। মোটকথা, এই গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যে করণীয় সেটাও কিন্তু স্পষ্ট নেই। 

ড. নজরুল বলেন, আমার কাছে এটা খুশির বিষয়, যে করণীয়গুলো আমি অনেক আগেই বিকশিত করেছিলাম বা ফরমুলেট করেছিলাম, সেগুলোও কিন্তু এই বৈষম্যবিরোধী সমাজের যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণের জন্য খুবই উপযোগী। কারণ এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো করণীয় নির্ধারিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সেই শূন্যতা পূরণের জন্য আজকের এই আলোচনাটি এবং বক্তব্যগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করছি। 

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হাফিজুল হক এবং আলোচনায় আরো অংশ নেন ফোরামের উপদেষ্টা নাসিমুন্নাহার নিনি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদুল ইসলাম।

শেয়ার করুন