২৯ জুন ২০১২, শনিবার, ০৭:১৫:৩৩ অপরাহ্ন


মির্জা ফখরুল বললেন- ওদের সময় হয়ে গেছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৪
মির্জা ফখরুল বললেন- ওদের সময় হয়ে গেছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


‘চলমান আন্দোলন শুধু বহালই নয়, তীব্র থেকে তীব্রতর হবে’ বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আরো বলেন, ওদের সময় হয়ে গেছে। যতই মুখে কথা বলুক, যা-ই কথা বলুক আসলে তো এদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তার প্রমাণ একেক করে হচ্ছে সব জায়গায়। গত ২৮ মে মঙ্গলবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দলের নেতা-কর্মীসহ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, আমি জানি, আমাদের এখানে কথা বলাও বিপদ, এখানে চলাও বিপদ, এখানে আন্দোলন করাও বিপদ... সবই বিপদ। তারমধ্যেই এই বিপদ থেকে কাটিয়ে উঠে আমাদেরকে কিন্তু সাহস করে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের যেটা ন্যায্য যে দাবি সেই দাবিটা আদায় করতে হবে। অর্থাৎ আমরা অন্য কোনো কিছু চাই না, আমরা একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, সেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য অবশ্যই আমাদের আন্দোলন বহাল থাকবে শুধু নয়, এই আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি বিদেশ থেকে আমাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার নেতৃত্বে আমরা এতদূর এসেছি। একটা কথা আমরা সবাই দেখেন এতো নিপীড়ন-নির্যাতন, মামলা-মোকদ্দমা আমাদের লোকগুলোর একটাকেও টানতে পারিনি। পেরেছে? পারেনি। একটা-দুইটা থাকে সবসময়। ও কিচ্ছু না...ওই একজনই (শাহজাহান ওমর)... আর খুঁজে পাবেন না। সুতরাং আমাদের হারাবার কিছু নেই। আর আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি আজকে পাঞ্জা লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে কিন্তু আপোষ করেননি, মাথানত করেননি। তিনি আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া আমি তো বলি বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা... আমাদের প্রধান দায়িত্ব করে তাকে মুক্ত করা, দেশকে মুক্ত করা, দেশমাতৃকাকে মুক্ত করা। আসুন আমরা সেদিকে এগিয়ে যাই।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুক্তিযযুদ্ধে জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ভূমিকা এবং তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তার অনন্য অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

‘সময় হয়ে গেছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, এরা পঁচে গেছে... দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে... একেবারেই দুর্গন্ধযুক্ত। যতই মুখে কথা বলুক, যা-ই কথা বলুক আসলে তো এদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তার প্রমাণ একেক করে হচ্ছে সব জায়গায়। আমি বলি, সময় হয়ে গেছে... ঘুরাঘুরি অনেক করেছেন, বহু করেছেন। এখন দয়া করে ঘুরাঘুরি বন্ধ করে সঠিকভাবে যেন আপনার দাফন-টাফন ঠিক মতো হয়...আপনাকে মানুষ যেন মনে রাখতে পারে সেভাবে চিন্তা করে আপনারা সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এদেশকে বাঁচাতে হলে নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে এগুতে হবে। সেই নতুন চিন্তাভাবনার মধ্যে অবশ্যই আপনাকে এদেশের মানুষ, পৃথিবী, ভূ-রাজনীতি সবগুলোকে সামনে নিয়ে চিন্তাকে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে সকল দেশপ্রেমিক মানুষ, সকল রাজনৈতিক শক্তি যারা দেশকে ভালোবাসেন তাদের সকলের আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেইভাবে এগিয়ে এসে এদেশকে এই জাতিকে ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

‘ওরা দেশ লুট করছে, ওদের চামড়া মোটা’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারকে নিয়ে কথা বলতে আমার আর ইচ্ছা করে না। কত বলব? ওদের তো চামড়া মোটা হয়ে গেছে... একই সঙ্গে কবরাস্থানে চলে গেছে কিছু যায় আসে না। তাদের লক্ষ্য একটাই, লুট করো। পঞ্চদশ সংশোধনী যেটা করে বাংলাদেশের ১২টা বাজানো হলো সেটা হচ্ছে যে, আমাদের যে সিষ্টেম ছিলো যে, কেয়ারটেকার গর্ভামেন্টের অধীনে নির্বাচন করব সেটাকে বদলিয়ে দিয়ে আবার দলীয় সরকার নিয়ে আসলো। কেনো কেয়ারটেকার আনা হয়েছিলো? এই আপনারা (আওয়ামী লীগ) তো বলেছিলেন যে, একটা কেয়ারটেকার সরকার না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বেগম খালেদা জিয়া দাবি মেনে নিয়েছিলেন...কত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন যে, তিনি সেটা মেনে নিয়ে এদেশের মানুষের যেটা প্রয়োজন সেটা দিয়েছিলেন.. ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন, সংসদে পাস করেছিলেন। আর তোমরা কি করলে? সেটা ধবংস করে দিলে শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আজকে সেই ক্ষমতাকে ভোগ করা, লুট করা দেশের অর্থনীতিকে.... এই একই কাজ করছো তোমরা। তিনি বলেন, আজকে সাবেক সেনা প্রধান আজিজ (আজিজ আহমেদ) কথা বলা হচ্ছে... আজিজ কার সৃষ্টি, কাদের সৃষ্টি? আজিজের অবস্থান ছিলো কোথায় নিয়ে কোথায় টেনে তোলা হয়েছে। আজকে বেনজীর আহমেদ এখন তার হাজার হাজার বেরুচ্ছে তার অপকর্ম, তার লুটের ইতিহাস। ফজলুর রহমান ভাই ঠিকই বলেছেন, প্রথম পদত্যাগ তো আপনার (শেখ হাসিনা) করা উচিত। শুধু একটা-দুইটা নয়, এরকম অসংখ্য ঘটনা আছে। চতুর্দিকে তাঁকিয়ে দেখেবেন তাদের দুর্নীতি ছাড়া আর কিছু নেই। শুধু ঢাকাতে নয় আপনারা যারা মফস্ফল বাস করে সব জায়গায় একই অবস্থা। তাদের তথাকথিত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে নির্বাচিত, মধ্যরাতের নির্বাচনে নির্বাচিত তথাকথিত এমপি-টেএমপি যা আছে তারা আকুন্ঠ নিমজ্জিত টাকার ভারে মারা পড়ার অবস্থা। এরা সব বিদেশে বাড়ি করে, ভূমি প্রতিমন্ত্রী ছিলো আগে তার নাকি লন্ডনে ৩৬৫টা বাড়ি... এখানে কি করেন আপনারা।”

‘তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে... আমরা কি রাইফেল ধরতে পারব, আমরা কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে মারামারি করতে পারব... পারব না। আমাদের দরকার ইয়াং জেনারেশন। যখন আমরা একাত্তর সালে যুদ্ধে ছিলাম আমরা সবাই (মুক্তিযোদ্ধারা) তরুণ ছিলাম, সবাই যুবক ছিলাম.... মাথার মধ্যে কিচ্ছু ছিলো না দেশ স্বাধীন করতে হবে এটা ছাড়া...ইট ইজ দ্যা অনলি গোল। কে কি হবে না হবে সবাই দলমত নির্বিশেষে এক হয়ে গিয়েছিলো। আজকে সেই সময় এসে গেছে। তখন দেশ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলাম আর দেশ রক্ষা করার জন্য এখন এই লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাদের নামতে হবে... এই লড়াইয়ে যদি আমরা পরাজিত হই আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধে বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন, মুক্তিযোদ্ধা দলের এমএ আবদুল হালিম মিঞা, মোবারক হোসেন, সারোয়ার আলম, মিয়া মো. আনোয়ার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন