০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:৪২:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্টিত , সহজ গ্রুপে ব্রাজিল - যুক্তরাষ্ট্র ডি গ্রুপে স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া


‘জাতীয় পার্টি’ স্বৈরাচারের দোসর মানতে চান না জি এম কাদের
সব কূল হারালো জাতীয় পার্টি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১০-২০২৪
সব কূল হারালো জাতীয় পার্টি জাতীয় পার্টির লোগো


বেশ ভালোই বাটে পড়েছে জাতীয় পার্টি। জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত এতোটা বাজে অবস্থায় আর পড়েনি তারা। ক্ষমতার মোহ তাদের এতোটাই পেয়ে বসেছিল, যে সরকার এসেছে জাতীয় পার্টি তাদের সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে সখ্য গড়েছে। কিন্তু এবার ওই পর্যন্ত যাওয়ার আগেই বড় ধরনের অপবাদ, যা চাপিয়ে দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের দোসর ও গণহত্যায় সহযোগিতাকারী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে অভিযুক্ত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 

বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেসব দলকে সংলাপের জন্য বারবার ডাকছেন, কথা বলছেন, সেখানে জাতীয় পার্টি নেই। বরং শেষবার এ ব্যাপারে হুমকিও দেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে, স্বৈরাচারের দোসরদের কোনোভাবেই সংলাপে ডাকা যাবে না। এতে করে পুরাপুরি গণহত্যাকারীর দোসর হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে গেল জাতীয় পার্টি। 

উপদেষ্টা পরিষদও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি মেনে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে বিরত থাকে। 

জাতীয় পার্টির প্রতিক্রিয়া 

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘একটি চক্র এখন জাতীয় পার্টিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। এর পরও যদি গণহত্যার দায় জাপার ওপর দেওয়া হয়, তা খুবই দুঃখজনক।’

সোমবার (২১ অক্টোবর) বনানী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। আন্দোলনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ভূমিকা ও দুইজন কর্মী নিহত হওয়ার তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিকে এখন ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে প্রমাণ করার অপচেষ্টা চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন সফল করতে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীর রক্ত দিয়েছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে। কারাগারে যেতে হয়েছে। দুই জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এর পরও যদি গণহত্যার দায় জাপার ওপর দেওয়া হয়, তা খুবই দুঃখজনক।

নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে অবিচার হচ্ছে বলে দাবি করে জি এম কাদের বলেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে এর প্রতিবাদ করা হবে। আমরা রাজপথে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করবো। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে জোর করে আমাদের নির্বাচনে আনা হয়। আমরা নির্বাচনে না গেলেও নির্বাচন করত শেখ হাসিনা। তারা এ টিম-বি টিম বানিয়েছিল। ২০১৪ সাল থেকে রওশন এরশাদকে দিয়ে দলকে বিভক্ত করে রেখেছে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি না। জামায়াত নিষিদ্ধের সময় আমি এর বিপক্ষে মত দিয়েছিলাম। আমি মনে করি, যাদের ফলোয়ার রয়েছে, তাদের যদি নিষিদ্ধ করেন, তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবে। যা দেশের জন্য সুফল বয়ে আনে না।

উল্লেখ্য, এর বহু আগ থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নীরব ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টি বলার চেষ্টা করে জাতীয় পার্টি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষেই ছিল। কিন্তু এটা মানতে নারাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, সরকার হয়তো জাতীয় পার্টির মতামত নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে না। সে কারণে সংলাপে ডাকেনি। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। 

সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে শনিবার ১০টি দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু অতীতে রাষ্ট্রক্ষমতা ও বিরোধীদলের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জাপা ডাক পায়নি। যদিও দলটির সূত্রের খবর, সংলাপে আমন্ত্রণের জন্য উদগ্রীব ছিলেন জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন দলটির নেতাকর্মীরা।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে সমর্থন করেছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাপা। তিন বছর পর জোট করে বিএনপির সঙ্গে বেরিয়ে যায় এক বছরের মধ্যেই। ২০০৬ সালে যোগ দেয় আওয়ামী লীগের মহাজোটে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জোট ২৯ আসন ছাড়ে এরশাদের জাপাকে। ২০০৯ সালে গঠিত হাসিনা সরকারে মন্ত্রী ছিলেন জি এম কাদের। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচন এরশাদ বর্জনের ঘোষণা দিলেও রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একাংশ অংশ নেয়। দলটি সেই বিতর্কিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৩টিসহ মোট ৩৪ আসন নিয়ে প্রধান বিরোধীদল হয়। আবার জাপার তিন এমপি হাসিনা সরকারের মন্ত্রী হন। এতে গৃহপালিত বিরোধীদলের তকমা পায় জাপা।

সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠেয় ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাপাকে ২৭ আসন ছাড়ে আওয়ামী লীগ। রাতের ভোটখ্যাত সেই নির্বাচনে ২২ আসন পেয়ে ফের প্রধান বিরোধীদল হয় জাপা। দলটির এমপিরা সংসদে শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন। জাপার এমপি রওশন আরা মান্নান তো শেখ হাসিনাকে ১০ বছর বিনা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে রাখার প্রস্তাবও করেছিলেন।

২০১৯ সালে জি এম কাদের জাপার নেতৃত্বে আসার পর দলটি লাগাতার সরকারের সমালোচনা করে। কিন্তু গত বছরের আগস্টে ভারত থেকে ফেরার পর অনেকটা চুপ হয়ে যান। ডামি নির্বাচনখ্যাত ৭ জানুয়ারির ভোটে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬ আসনে ছাড় পায়। নির্বাচনের প্রচারে জাপার প্রার্থীরা পোস্টারে শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে ভোট চেয়েছিলেন। দ্বাদশ সংসদে ১১ আসন পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে বিরোধীদল হয় জি এম কাদেরের জাপা। তবে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকেই জি এম কাদের বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে পক্ষে সরব ছিলেন। এখন তিনি বক্তৃতায় অভ্যুত্থানে তার ও দলের ভূমিকার ফিরিস্তি দিচ্ছেন। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জাপাকে জোর করে নেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি জাপা চেয়ারম্যানের।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সেনাসদর ও বঙ্গভবনে ডাক পেয়েছিল জাপা। কিন্তু অতীত ভূমিকার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহ জাপাকে সংলাপে ডাকার প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছেন।

শেয়ার করুন