০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:০৮:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী
‘কাশ্মীর আসাম ও মনিপুরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রয়োজন’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১২-২০২৪
‘কাশ্মীর আসাম ও মনিপুরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী প্রয়োজন’ সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী


ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিরাপত্তায় জাতীয় সংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহায়তা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। ভারতের আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনের ওপর হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে গত ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা বিজেপি সরকারের উস্কানিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নিস্ক্রিয় উপস্থিতিতে আগরতলার কুঞ্জবনে অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে নারকীয় হামলা, জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে আগুন, পতাকার খুঁটি ভাঙচুর, সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।” ভারতের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী আমাদের হাইকমিশনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা কর্মচারিরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহায়তা চাওয়া, সেখানে আমাদের মানুষদের নিরাপত্তার জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া।

রিজভী বলেন, আগরতলায় কূটনৈতিক মিশনের ওপর এহেন নজিরবিহীন হামলা ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশন, ১৯৬১ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ভারতীয় সরকার হামলার জন্য দুঃখ প্রকাশ নাটক করলেও, অতীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের আগ্রাসী হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে, যা আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। আমরা ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুদের বলব, আপনাদের বন্ধুত্ব তো শেখ হাসিনার সাথে। সেই বন্ধুত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যে প্রকাশ্যে শত্রুতায় নেমেছেন সেটা সৎ প্রতিবেশী সূলভ আচরণ নয়। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে আপনাদের বন্ধু হাসিনা আপনাদের কাছে আশ্রয় পেয়েছে.... তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। মনে রাখবেন বাংলাদেশ লাখো প্রানের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে দিল্লীর দাসত্ব করতে নয়। যে সেবাদাসী হতে চেয়েছিলেন সেই দাসী এখন আপনাদের পদতলে। তিনি বলেন, ক্ষমতা হারিয়ে বিতাড়িত হওয়ায় হাসিনার চেয়ে বেশি পাগল হয়ে গেছে ভারতীয় বিজেপি সরকার ও উগ্রবাদীরা। মরিয়া হয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীদের আরেক ছদ্মবেশী শিখন্ডি মমতা ব্যানার্জি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠাতে বলছে।

ভারতেই তো বাংলাদেশের মিশনগুলো অরক্ষিত। নিরাপত্তাহীন এবং বাংলাদেশের মিশনের একজনকে আমরা ভিডিওতে ভাইরাল হতে দেখেছি যে, কি বেদম প্রহার করা হচ্ছে... তারপরেও মমতা ব্যানার্জী বলবেন,বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী দরকার না ভারতে শান্তিরক্ষী বাহিনী দরকার। একই সঙ্গে কাশ্মীর, আসাম ও মনিপুরেও জাতীয় সংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো প্রযোজন বলে মনে করেন রিজভী।

পশ্চিমবঙ্গের ম্খ্যু মন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আগে নিজের দেশ সামলান। শান্তিরক্ষী বাহিনী আপনার দেশ ইন্ডিয়াতে মোতায়েন করেন। খুব দরকার, বিশেষ করে কাশ্মীরে আর আসামে ও মনিপুরে। ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক দশকের শাসনামলে দেশটিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার ক্রমশ কমে আসছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) মুসলিমবিরোধী বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশটির একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করেছে মোদি সরকার। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থানে নির্মিত হয়েছে রামমন্দির। একাধিক রাজ্যে গরুর মাংস বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুছে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে মুঘল আমলের বিভিন্ন নাম ও স্মৃতিচিহ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হিসেবে হিসেবে সেখানকার মুসলিমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নিপীড়ণের শিকার হচ্ছেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগসমূহ তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান রিজভী।

‘ভারতের পরিকল্পনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখা’

রিজভী বলেন, ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত... সেসব নিয়ে দেশটির কোনো সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের মাষ্টার প্ল্যানের পরিস্থিতিতে তারা অযাচিত উদ্বেগ-উগ্রতা প্রকাশ করছে। সেই পরিস্থিতি কিছুই না ... দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু ভারতের মাস্টার প্ল্যানের অংশ হচ্ছে, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করো, বাংলাদেশ যাতে সঠিক ভাবে চলতে না পারে... এটাই হচ্ছে তাদের আন্তর্জাতিক মাস্টার প্ল্যান এবং এখানে বাইরের একটি দেশ এর মধ্যে জড়িত বলে বাংলাদেশের জনগন মনে করে।”

‘‘ভারতের ভূমিকা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। তাদের নিজেদের দেশে মুসলিম খ্রিস্টান নিম্নবর্ণের দলিত হিন্দু শিখসহ সংখ্যালঘুদের কোন নিরাপত্তা নেই। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে অস্থির। বিশ্ববাসী জানে হিন্দুত্ববাদী ভারত সংখ্যালঘু নির্যাতনের আঁতুরঘর। বিশ্বের ১ নাম্বার বর্ণবাদী দেশ হলো ইন্ডিয়া। সে দেশে মুসলমান নাগরিকদের উপর নানা জুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। সংখ্যালঘু মুসলমানের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে সংখ্যালঘুদের প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কয়েক দিন আগেও উত্তর প্রদেশের উপ-নির্বাচনে পাঁচজন মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে ভারত সংখ্যালঘু নির্যাতন রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্পন্ন করতে অভ্যস্ত তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কাল্পনিক অভিযোগ তুলেছে।” হিন্দু উগ্রবাদী একটি সংগঠনের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে অবৈধ কর্মে লিপ্ত থাকার অপরাধে ইসকন থেকে বহিষ্কারের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, চিন্ময়কে রাষ্ট্রদ্রোহীর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। রাষ্ট্র হিসেবে ভারত কি শিশুর ওপর অত্যাচারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়? এটা তো বড় প্রশ্ন দেশের মানুষের? চিন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ইসকনই করেছে।

‘দেশের সকল সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান’

রিজভী বলেন, প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত কিন্তু শত্রুতা করতে চাইলে সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ মেনেই নেবে না।আপনাদের প্রতি অনুরোধ... নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন না। বাংলাদেশের মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান যারাই নিরাপত্তাহীন মনে করেন তারা সরকারকে জানান সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে।কিন্তু ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লাভ নেই। জন্মভূমির প্রতি অনুগত থাকুন। এই মৃত্তিকায় যদি আপনার জন্ম হয় এই মৃত্তিকার প্রতি এই মাটির প্রতি আপনি ভালোবাসা প্রকাশ করুন। বিজেপি ভারতকে ধর্মীয় উগ্রবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ ভারতের মতো উগ্রবাদী কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র ভেবে কত কিছু দিয়েছে কিন্তু ভারত সরকার সীমান্তে রক্ত, লাশ আর আগ্রাসন ছাড়া কিছু না। 

উপ হাইকমিশনে আক্রমন ‘জেনেভা কনভেনশনের বরখেলাপ’

ভারতের ত্রিপুরা আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ‘জেনেভা কনভেনশনের বরখেলাপ’ বলে এর নিন্দা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এই নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের সংগঠনের সদস্যরা সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যে আক্রমণ করেছে তা পূর্বপরিকল্পিত বলে ধারণা হয়। সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেয়া এবং ভাঙচুর করা ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ। ভারত সরকার ও সেদেশের জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে যে আপনাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কৌশল হিসেবে বাংলাদেশে ঘৃণার ব্যবহার উভয় দেশের সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী টানাপোড়েন সৃষ্টি করবে। আমরা আশা করবো যে নতুন বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার প্রতি ভারতীয়রা শ্রদ্ধাশীল হবেন।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ শাসনকালে যে সকল নেতা ভারতে অবস্থান করছেন তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বিচারে সহায়তা করবেন... এটা আমরা আশা করি।

ভারতে বাংলাদেশের কুটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিরাপত্তায় জাতীয় সংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহায়তা নিতে অন্তর্বতী সরকারের প্রতি উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

শেয়ার করুন