১৬ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৯:০১:৪৪ পূর্বাহ্ন


সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড কেমনে কী
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৫
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড কেমনে কী সচিবালয়ে আগুন


২০২৪ বড়দিন উপলক্ষে ছুটির দিন ২৫ ডিসেম্বর রাতে সুরক্ষিত বাংলাদেশ সচিবালয়ের একটি ভবনের দুই প্রান্তে তিনটি তলায় আগুন লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সরকার ঘনিষ্ঠ মানুষ ঘটনাকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অন্তর্ঘাত বলে অভিযোগ করে। জুলাই-আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর যত অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে তার অন্তরালে ক্ষমতাচ্যুত সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। এখানেও সেরকম ছিল। কিন্তু বাস্তবতায় তেমন কিছু মেলেনি। অথচ উপদেষ্টা আসিফ ভূইয়া আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে জানালেন তার আওতাধীন দফতরসমূহে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দুর্নীতির প্রামাণ্য সব দলিলসমূহ পুড়ে গেছে। সচিবালয়ের মত সুরক্ষিত স্থাপনায় এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড সংগত কারণেই ব্যাপক আলোড়ন তোলে। একই সময়ে একই ভবনের দুই প্রান্তে একইভাবে আগুন ধরার ঘটনা এবং অন্যান্য কিছু আনুষঙ্গিক আলামত অস্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয়। 

নানা মহল নানাভাবে ঘটনা নিয়ে সন্দেহের তীর ছুড়তে থাকে। ঘটনার তদন্তে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করে আগে ঘোষিত কমিটি বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে বুয়েট, সেনাবাহিনী, ফায়ার ব্রিগেড প্রতিনিধিসহ বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটি ইতিমধ্যে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কমিটির মতে অগ্নিকাণ্ডে কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার আলামত পাওয়া যায়নি। কমিটির মতে, বিদ্যুতের লুজ সংযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় দীর্ঘসময় আগুন ধরে ভবনগুলোর ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হলেও নাকি কোনো ফাইল, ডকুমেন্টস ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কমিটি কর্তৃক সংগৃহীত কিছু আলামত বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, পুড়ে যাওয়া ভবনে একটি কুকুরের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষভাবে সুরক্ষিত ভবনসমূহে ছুটির দিন গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে নানা গুজব নানা মাধ্যম এখনো বিতর্ক ছড়াচ্ছে। সরকারের উপদেষ্টারা এখন কে, কোন দুর্ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সম্পৃক্ততা দেখে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণে এগুলো ঘটছে। সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ছুটির দিনে কারা প্রবেশ করতে পারে তার প্রমাণ অবশ্যই বিভিন্ন ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশনে সংরক্ষিত আছে। তদন্ত কমিটির সূত্রে সিসিটিভির একটি ফুটেজ পাওয়া গেছে। ফুটেজ টির দিন ক্ষণ অস্পষ্ট থাকায় এটির যথার্থতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। ভবনে কুকুর কীভাবে আসলো, কারা নিয়ে আসলো এটি নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। একই সঙ্গে একটি বিশেষ ভবনে যেখানে দুইজন উপদেষ্টা ছাত্রনেতাদের দফতর সেগুলোতেই কেন আগুন ধরলো? উপদেষ্টা আসিফ কোন তথ্যের ভিত্তিতে আগাম জানালেন তার দফতরের সবকিছু পুড়ে গেছে। অবশ্যই তাকে মন্ত্রণালয়ের কেউ এমন তথ্য দিয়ে তাকে বিভ্রান্ত করেছেন। কেন, কী ছিল সে উদ্দেশ্য- এগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পুনরায় বিবেচনার দাবি রাখে।

তদন্ত কমিটির যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা নিয়ে প্রশ্ন করবো না। কিন্তু ঘটনা পরম্পরায় মেনে নিতে কষ্ট হয় এই ধরনের ঘটনা বৈদ্যুতিক লুজ সংযোগের কারণে সংগঠিত দুর্ঘটনা মাত্র। কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় থাকলাম। কেমি কৌঁসুলি এবং জ্বালানি বিদ্যুৎ স্থাপনা পরিকল্পনা, নির্মাণ এবং পরিচালনা বিষয়ে বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন দেশে চার দশকের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ঘটনাটি স্বাভাবিক নয়।

যদি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যথার্থ হয়ে থাকে তাহলে উপদেষ্টাদের কোনো দুর্ঘটনার পর পূর্বের সরকারের মন্ত্রীদের মতো হুট করে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করা যেমন উচিত নয়, তেমনি এ ব্যাপারে আরো সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। একই সঙ্গে একই কারণে সচিবালয়সহ সরকারের অন্য দফতরে যেন একই ধরনের অগ্নিকাণ্ড না ঘটে সেই বিষয়ে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। 

প্রশ্ন জাগে, ঘটনার সময়ে ছুটির দিন গভীর রাতে সচিবালয়ে কারা অনুপ্রবেশ করেছিল? কুকুরটি কীভাবে এলো? একটি ভবনের দুই প্রান্তে একই সময়ে বৈদ্যুতিক লুজ সার্কিটজনিত ঘটনা কাকতালীয়ভাবে একই সময় ঘটলো? ভবগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও দলিল দস্তাবেজ কীভাবে সুরক্ষিত থাকলো? ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশনের পরিষ্কার আলামত কেন পাওয়া গেল না? তদন্ত কমিটি দ্রুত পরিবর্তন করা কেন প্রয়োজন হলো?

শেয়ার করুন