প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির চতুর্থ প্রকল্প বাংলাদেশ সেমিট্রি পুরো নগদ অর্থে ক্লোজড করা হয়েছে। এবং বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম পর্বে ৫ হাজার কবর বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৫ শতাধিক কবর ৭শ’ ডলার করে বিক্রি করা হবে এবং ৫০০-এর নিচে ৮০০ ডলার করে প্রতিটি কবর। আগামী মার্চ থেকে প্রজেক্টের কাজ শুরু হবে এবং জুলাই থেকে কবর দেওয়া শুরু হবে। সেই সঙ্গে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে পঞ্চম প্রজেক্টের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম প্রজেক্ট হচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য বাংলাদেশ কমপ্লেক্স তৈরি। আগামী এক বছরের মধ্যে এই প্রজেক্ট সম্পন্ন করা হবে। গত ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের মুন লাইন রেস্টেুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সেমিট্রির সদস্য সচিব এবং বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু এই সব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক। সেই সঙ্গে তিনি পঞ্চম প্রজেক্টের ঘোষণাও দেন। এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাজী মফিজুর রহমান, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খোকন মোশাররফ, আবুল কালাম, রফিকুল ভুইয়া, রমেশ নাথ, সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাহ জাহান কবীর, নজির ভান্ডারি, হাজী মমিনুল হক, মাইনুল উদ্দীন মাহবুব, সংগঠনের সহ সভাপতি তাজু মিয়া, আবুল বাশার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম বাবু, অফিস সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়া মিরন, সহ-কোষাধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন, আবুল মনসুর প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাহিদ মিন্টু সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আজকে আপনাদের একটি সুখবর শেয়ার করার জন্য আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আপনারা জানেন, গত বছর গ্রীষ্মের সময় আমরা বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়েছিলাম, বাংলাদেশ সেমিট্রির। আমরা কমিউনিটির সব প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, মসজিদ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং মসজিদের ইমামদের নিয়ে গুলশান টেরেসে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিলাম। সেই মতবিনিমিয় সভায় আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম আপ স্টেটের মিডলটাউনে ১২৬ একর জমির ওপর মুসলিম গোরস্থান করার। নিউইয়র্কের ব্রুকলিন থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট দূরত্বের এই সেমিট্রিতে প্রায় ১ লাখ কবর তৈরি করা যাবে। জ্যাকসন হাইটস থেকে দূরত্ব হচ্ছে এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট। সেই সময় আমরা জমির মালিকের সঙ্গে আইনজীবীর মাধ্যমে চুক্তি করেছিলাম। চুক্তির আগে আমরা মাটি-পানিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করি।
তিনি আরো বলেন, আপনারা জানেন, চুক্তির পরও অনেক কাজ ছিল। নিশ্চয়তা ছিল না চূড়ান্তভাবে আমরা এই জায়গা কবরের জন্য অনুমোদন পাবো কি না। কারণ এখানে স্থানীয় কমিউনিটি বোর্ডের মতামতের বিষয় ছিল। আপনাদের সকলের সহযোগিতা এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে সব বাধা অতিক্রম করে গত ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে আমরা পুরো ক্যাশ দিয়ে এই জমি ক্রয় করি। এই সময় উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, প্রজেক্টের সদস্য সচিব আমি, সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাহ আলম, বেলাল হোসাইন (B & H Belal), ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খোকন মোশাররফ ও কার্যকরি কমিটির সহ-সভাপতি তাজু মিয়া। নিউইয়র্কের আপ স্টেটের মিডল টাউনে অবস্থিত এই সেমিট্রির নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেমিট্রি, যার ঠিকানা হলো: 247 Connors Road. Scotchtown, NY 10941, Phone no: 845-879-5900, 845-953-1111, 917-487-2978, Email: sbcgns2024@gmail.com
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে ল’ ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রজেক্টের জন্য আলাদা কমিটি এবং আলাদা করপোরেশন করা হয়েছে। যদিও মাদার সংগঠন হিসেবে থাকবে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি। এই প্রজেক্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে এক সভায় মিলিত হয়েছেন। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী মার্চ ২০২৫ সাল থেকে ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু করা হবে। সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হবে অফিস। এই প্রজেক্টে আরো থাকবে ফিউনারেল হোম ও দূরদূরত্বে যাওয়া মুসল্লিদের (পুরুষ ও মহিলা) জন্য পৃথক অজুখানা, বাথরুম ও নামাজের স্থান। আগামী মার্চ ২০২৫ সাল থেকে কাজ শুরু করতে আমাদের বেশ মোটা অংকের অর্থের প্রয়োজন। আমরা কর্জে হাসানা পরিশোধ করতে চাই। প্রজেক্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথমে আমরা বিশেষ ডিসকাউন্টে ৫ হাজার কবর বিক্রি করতে চাই। আগামী ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত এই বিশেষ ডিসকাউন্টের সুযোগ থাকবে। এই ৫ হাজার কবর প্রতিটি ৭০০ ডলারে বিক্রি করা হবে। তবে কবরের সংখ্যা ৫ শতাধিত হতে হবে। এর নিচে হলে প্রতি কবর ৮০০ ডলার বিক্রি করা হবে। এই ৫ হাজার কবরের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সোসাইটি, ব্রুকলিন নিউইয়র্ক বেলাল মসজিদ, বায়তুস শরফ মসজিদসহ কয়েকটি মসজিদ ও সংগঠনের প্রতিশ্রুতির ফলে ৫ হাজার কবরের মধ্যে ২ হাজার কবর বিক্রি হয়েছে। আর বাকি রয়েছে প্রথম কিস্তির মাত্র ৩ হাজার কবর। এই কবর বিক্রির পর আমাদের কমিটি আবারো সভায় বসবেন এবং দাম নির্ধারণ করবেন।
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এই বিশাল প্রজেক্ট কমিউনিটির জন্য করতে পেরে। বলা যায়, আমরা সবে মাত্র এই বিশাল কর্মযাজ্ঞের কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, আগামী ১০০ বছরে প্রবাসে মুসলিম কমিউনিটির কবর নিয়ে আর সমস্যা হবে না। সত্যি এটি একটি বিশাল প্রজেক্ট। এই বিশাল কর্মযাজ্ঞে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারা শুনে খুশি হবেন যে, আমরা কবর বিক্রি শুরু করে দিয়েছি। আগামী মার্চ থেকে কাজ চলবে এবং আশা করি জুলাই থেকেই কবর দেওয়া শুরু করা যাবে।
সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক বলেন, আপনাদের আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই-এই প্রজেক্টের পাশাপাশি আগামী বছর ‘বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি’ পঞ্চম প্রজেক্টে হাত দেবো ইনশাআল্লাহ। সেই প্রজেক্ট হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য ‘বাংলাদেশ কমপ্লেক্স’। অতীতের মতো আগামীতে আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আশা করি এই প্রজেক্টও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মিন্টু বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির আমাদের কোনোভাবেই সহযোগিতা করেনি। আমরা নিজেদের অর্থে এই প্রজেক্ট ক্লোজড করি। পরে বাংলাদেশ সোসাইটির নেতৃবৃন্দ বিশেষ ডিসকাউন্টে ৩৪০টি কবর ক্রয় করেছে।