প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন অভিযানে আটক ব্যক্তিদের কিছু ফেডারেল কারাগারে রাখছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজনস (বিওপি)। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজনস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা মার্কিন অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)কে সহায়তা করছে এবং প্রশাসনের নীতিগত লক্ষ্য পূরণে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তবে কতজন অভিবাসী আটক রাখা হচ্ছে বা কোন কারাগারগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ব্যুরো অব প্রিজনস। তারা বলেছে, গোপনীয়তা, নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার কারণে আমরা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির আইনগত অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করি না এবং নির্দিষ্ট কোনো কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যা বা অবস্থান প্রকাশ করি না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজনস সূত্র জানিয়েছে যে, লস অ্যাঞ্জেলেস, মিয়ামি, ফিলাডেলফিয়ার ফেডারেল জেল এবং আটলান্টা, কানসাসের লেভেনওয়ার্থ ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের বার্লিনের ফেডারেল কারাগারগুলোর মধ্যে কিছু স্থানে আটক ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। তারা আরো জানান, মিয়ামির কারাগারে একাই ৫০০ জন পর্যন্ত আটক ব্যক্তিকে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অভিবাসীদের এই নতুন আটক ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সংকটে থাকা ফেডারেল কারা ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যুরো অব প্রিজনসের কর্মী সংকট, সহিংসতা এবং অন্যান্য সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। এর ফলে সংস্থাটি সাময়িকভাবে অন্য কারাগার থেকে কর্মী স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে, যেন অভিবাসীদের আটক ব্যবস্থাপনা সামাল দেওয়া যায়।
ব্যুরো অব প্রিজনস যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় সংস্থা। এটি ১২২টি কারাগার পরিচালনা করে, যেখানে ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মী এবং ১ লাখ ৫৫ হাজার বন্দি রয়েছে। সংস্থাটির বার্ষিক বাজেট প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বর মাসে সংস্থাটি জানিয়েছিল, বাজেট সংকট ও কর্মী ঘাটতির কারণে একটি কারাগার বন্ধ করা হচ্ছে এবং আরো ছয়টি কারাগার ক্যাম্প বন্ধ রাখা হবে। আইসিইয়ের কাছ থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ অভিবাসী বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আইসিইয়ের বাজেট মাত্র ৪১ হাজার অভিবাসীকে আটক রাখার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। প্রশাসন এখনো জানায়নি যে, তাদের লক্ষ্য পূরণে ঠিক কতগুলো নতুন বন্দি শয্যা প্রয়োজন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি হোমল্যান্ড সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম জানান, গুয়ানতানামো বে নৌঘাঁটিতে দ্বিতীয় দফায় আরো অভিবাসী পাঠানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিবাসী অধিকার সংস্থাগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে যে, গুয়ানতানামো বেকে ‘আইনি কালো গহ্বর’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বুধবার জানান, ট্রাম্প প্রশাসন ২০ জানুয়ারির শপথ গ্রহণের পর থেকে অভিবাসন আইনের কঠোর প্রয়োগ শুরু করেছে। প্রশাসনের হিসাবে, ৮ হাজারের বেশি মানুষ আটক হয়েছে, যার মধ্যে ৪৬১ জনকে বিভিন্ন কারণে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা আটক রাখার জায়গার অভাব।
ট্রাম্পের প্রথম দফা শাসনামলে ২০১৮ সালে ব্যুরো অব প্রিজনস আইসিই এবং কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের সঙ্গে চুক্তি করেছিল, যাতে অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, ওয়াশিংটন এবং টেক্সাসের কারাগারগুলোতে ১ হাজার ৬০০ অভিবাসীকে আটক রাখা যায়। এ সময়, ক্যালিফোর্নিয়ার ভিক্টরভিলের একটি কারাগারে আটক ছয়জন অভিবাসী ট্রাম্প, তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস এবং কারা ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তারা অভিযোগ করেন যে, তাদের সঙ্গে ‘অমানবিক এবং শাস্তিমূলক’ আচরণ করা হয়েছে। আসামিরা দাবি করেন যে, তাদের নষ্ট খাবার ও দুধ সরবরাহ করা হতো, ধর্মীয় প্রার্থনার সুযোগ দেওয়া হতো না, কেবল কয়েক ঘণ্টা করে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হতো এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়নি।
গত অক্টোবরে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ব্যুরো অব প্রিজনস ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তথ্য জানার অধিকার আইনে মামলা করে। তারা চায়, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে ফেডারেল কারাগারে অভিবাসীদের আটক রাখার নথিপত্র প্রকাশ করা হোক। এ মামলার পরবর্তী শুনানি ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত হয়েছে।
এদিকে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দীদের নিজ দেশের মেগা কারাগারে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের কারাগার ব্যবস্থা ‘আউটসোর্স’ করার সুযোগ দিতে চান, যা তুলনামূলকভাবে ‘কম খরচে’ হবে। ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি এ প্রস্তাব নিয়ে ‘খোলা মনে’ চিন্তা করছেন, তবে এটি আইনি দিক থেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। এ বিষয়ে ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুধু বলছি, যদি এটি আইনি দিক থেকে সম্ভব হয়, তবে আমি এটি এক মুহূর্তের জন্যও দেরি করবো না। আমরা এখন এ বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করছি।