নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসকে সরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে গভর্নর ক্যাথি হোচুল সিটি প্রশাসনের ওপর স্টেট পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি একটি ত্রিমুখী পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, যা মেয়রের নির্বাহী ক্ষমতাকে সরাসরি সীমিত না করলেও শহরের প্রশাসনিক কার্যক্রমের ওপর রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করবে। রাজ্য ও সিটি উভয় পর্যায়ের আইনপ্রণেতারা এই পদক্ষেপে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, কেউ একে অস্থায়ী সমাধান হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন এটি শহরের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ। হোচুলের পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একজন বিশেষ রাজ্য পরিদর্শক নিয়োগের প্রস্তাব, যিনি একমাত্র নিউইয়র্ক সিটি সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করবেন। সিটি ডিপার্টমেন্ট অব ইনভেস্টিগেশন (ডিওআই) সরাসরি এই পরিদর্শকের কাছে জবাবদিহি করবে এবং মেয়র ডিওআই প্রধানকে পরিবর্তন করতে চাইলে পরিদর্শকের অনুমোদন লাগবে।
হোচুল বলেন, এটি শহরের তদন্ত প্রক্রিয়াকে হস্তক্ষেপমুক্ত রাখবে এবং সিটি হলের অভ্যন্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। এছাড়াও, গভর্নর সিটির কর্মকর্তাদের স্বাধীনভাবে ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা দিতে চান, যা আগে কেবল মেয়রের নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীদের মাধ্যমেই সম্ভব ছিল। এই পরিবর্তন সিটির স্বার্থরক্ষায় আরো নমনীয়তা আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। তৃতীয়ত, রাজ্য কম্পট্রোলারের অফিসে অতিরিক্ত অর্থায়ন প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে তারা সিটির বাজেট এবং আর্থিক কার্যক্রমের ওপর আরো নিবিড় নজরদারি চালাতে পারে। এই প্রস্তাব ২০২৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, যা মেয়র অ্যাডামসের বর্তমান মেয়াদের শেষ সময় পর্যন্ত চলবে। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী এটি নবায়ন করা হতে পারে। তবে হোচুল স্পষ্ট করেছেন, ‘২০২৫ সালের ডিসেম্বরের শেষে আমি সিটির অবস্থা বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।’
মেয়র অ্যাডামসের প্রতিক্রিয়া
গভর্নরের এ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় মেয়র অ্যাডামস মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি নিউইয়র্ক সিটির জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছি, তাদের মূল্যবোধ রক্ষা করাই আমার লক্ষ্য। রাজ্যের এমন কোনো আইনি ভিত্তি নেই যা আমার অফিসের ক্ষমতা সীমিত করতে পারে। তবে আমি গভর্নরের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যেন জনগণের আস্থা অটুট থাকে। তবে সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস গভর্নরের প্রস্তাবের বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও মেয়রের বিরুদ্ধে তার কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের আস্থা হারানো একজন মেয়রের পক্ষে কার্যকরভাবে শহর পরিচালনা করা কঠিন। সিটির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
রাজনৈতিক বিতর্ক ও মতামত
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই পদক্ষেপ নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস সদস্য জেরি নাডলার মনে করেন, গভর্নরের উচিত সরাসরি মেয়রকে সরিয়ে দেওয়া। তিনি বলেন, এটি এমন একটি ক্ষমতা যা খুব কমই ব্যবহার করা উচিত। তবে এই পরিস্থিতিতে মেয়র নিজেই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। অন্যদিকে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য মাইকাহ লাশার মনে করেন, হোচুলের পদক্ষেপ একটি সাময়িক স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা। তিনি বলেন, গভর্নর এমন এক সংকটময় মুহূর্তে প্রশাসনের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ফেরাতে চাইছেন। মেয়রকে সরানো চূড়ান্ত ক্ষমতার প্রয়োগ হবে, তাই হোচুল আরো সংযত পথে হাঁটছেন। নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার, যিনি মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, জানান যে তিনি গভর্নরের প্রস্তাবিত নতুন ক্ষমতাগুলো ব্যবহার করে ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন, যদি মেয়র অ্যাডামস তা করতে ব্যর্থ হন।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ
গভর্নর হোচুলের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমে সিটি কাউন্সিলের অনুমোদন লাগবে, যেখানে মেয়র বিরোধিতা করলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার হবে। এরপর প্রস্তাবটি রাজ্য আইনসভার উভয় কক্ষে পাস করতে হবে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, হোচুলের এই উদ্যোগ শহরের স্বায়ত্তশাসনের ওপর রাজ্যের নজরদারি বাড়ানোর একটি নজিরবিহীন উদাহরণ হতে পারে। যদি ২০২৫ সালের পরও এই ব্যবস্থা কার্যকর থাকে, তাহলে এটি নিউইয়র্ক সিটির স্বায়ত্তশাসনের অবসান ঘটাতে পারে।
এদিকে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো যদি মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন, তাহলে হোচুলের জন্য পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। যদিও হোচুল জানিয়েছেন, কুমোর সম্ভাব্য প্রার্থিতা তার বর্তমান সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব ফেলেনি। শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করবে গভর্নর হোচুলের প্রস্তাব বাস্তবায়ন, রাজ্য আইনসভা ও সিটি কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এবং মেয়র অ্যাডামসের রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর। ২০২৫ সালের শেষে হোচুল পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন করবেন এবং শহরের স্বার্থে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।