১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ০৪:৪৭:২৬ পূর্বাহ্ন


মতবিনিময় সভায় রাষ্ট্রদূত মুশফিক
ফ্যাসিবাদের দোসরদের ছাড় দেওয়া হবে না
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৫
ফ্যাসিবাদের দোসরদের ছাড় দেওয়া হবে না বক্তব্য রাখছেন মুশফিক ফজল আনসারী


‘পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের অনেক কর্মকর্তা চাকরি বাঁচাতে প্রবাসে বসবাসকারী সাংবাদিক, বিরোধী নেতাকর্মী ও অ্যাকটিভিস্টদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে এটি যেমন সত্য, তেমনি কিছু কিছু কর্মকর্তা নিজেরা স্বেচ্ছায় স্বৈরাচার তোষণের অংশ হিসেবে পেশাগত ভূমিকার বাইরে গিয়ে ‘রেডলাইন’ অতিক্রম করেছেন, তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, স্বৈরাচারের দোসরদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না’- মন্তব্য করেছেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। 

ওয়াশিংটন ডিসি ও নিউইয়র্কে সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কনসু্যুলেট ও দূতাবাসের তৎকালীন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে নিজের সাংবাদিকতার কাজে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনাবলি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘এমনকি আমার ফরেন প্রেস সেন্টারের ক্রিডেন্সিয়াল বাতিল করার জন্য দূতাবাসের কর্মকর্তারা স্টেট ডিপার্টমেন্টের সংশ্লিষ্ট অফিসে লাগাতার তদবির করেছিলেন।’

গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মিলনায়তনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপরোক্ত মন্তব্য করেন বর্তমানে ঈদের ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্র সফররত মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। 

বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশি কূটনীতিকরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম বেতন-ভাতা পান, উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, নিজে কূটনীতিক হিসেবে কাজ করার সুযোগ না পেলে আমি জানতেই পারতাম না যে বাংলাদেশ মিশনগুলো বিদেশে কত অল্প পরিমাণ রিসোর্স দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার কূটনীতিকদের দিয়ে বিশ্বব্যাপী ভুয়া উন্নয়নের প্রচার করালেও ২০১২ সালের পর থেকে কূটনীতিকদের বেতন-ভাতা আর বৃদ্ধি পায়নি। 

সাম্প্রতিক ট্রাম্প ট্যারিফের বিষয়ে তিনি সমবেত বাংলাদেশিদের বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি ডেলিগেশন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার জন্য শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। তিনি বলেন, আমি ওয়াশিংটন দূতাবাসকে জানিয়েছি যে এ বিষয়ে যদি আমার কোনো সহযোগিতা লাগে, তবে যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় ভূমিকা রাখতে আমি প্রস্তুত। উপস্থিত বাংলাদেশি আমেরিকানদের নিজ নিজ কংগ্রেস মেম্বার, সিনেটরদের সঙ্গে এ নিয়ে জোরালোভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মুশফিক। 

তার সাংবাদিকতা জীবনে নিউইয়র্কের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন রকমের সহযোগিতার কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মুশফিক। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি জানি এই স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আপনারা কত আন্তরিকভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন এবং আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছেন। আমি আপনাদের কাছে চিরঋণী।

মতবিনিময় সভায় বিগত ১৫ বছর যাবৎ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্নভাবে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি আমেরিকান সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিককর্মী, শিক্ষাবিদসহ রাষ্ট্রদূত মুশফিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন নিউইয়র্কের এমন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় তিন ঘণ্টার এই আয়োজনে উপস্থিত প্রত্যেকেই বিগত স্বৈরাচার শাসনামলে কীভাবে দেশে এবং প্রবাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এমনকি বাংলাদেশ কনস্যুলেটে তাদের ন্যায্য নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে এসেও তৎকালীন কর্মকর্তাদের হাতে কীভাবে নাজেহাল হয়েছেন, তার স্মৃতিচারণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, হেড অব চ্যান্সারি ও কাউন্সেলর ইশরাত জাহান ছাড়াও কনস্যুলেটের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

কনসাল জেনারেল বলেন, কনস্যুলেটের সেবা প্রদান সম্পর্কে আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, আমি আমার সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছি, বিভিন্ন কারণে প্রবাসীরা বিরক্ত থাকতে পারেন, তারা অনেক সময় অযাচিত কথাবার্তা বলতে পারেন, কিন্তু যে পর্যন্ত কেউ আপনাদের গায়ে হাত না তুলবে, সে পর্যন্ত প্রত্যেক প্রবাসীকে আমরা হাসিমুখে সার্ভিস দিতে বাধ্য।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহমেদ, মিজানুর রহমান মিল্টন ভূইয়া, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভূইয়া, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা আব্দুস সবুর, মোশাররফ হোসেন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, জাহাঙ্গীর হাসাইন, মোতাহার হোসাইন, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, জজ সুমা সাঈদ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার, নিউইয়র্ক দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, মিজানুর রহমান, আতিকুল হক আহাদ, মনির হোসেন প্রমুখ।

শেয়ার করুন