১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৭:১৯:২৯ পূর্বাহ্ন


বিচার বিভাগ সহায়ক কর্মচারীদের পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৪-২০২৫
বিচার বিভাগ সহায়ক কর্মচারীদের পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন


বিচার বিভাগ পৃথক হলেও দেড়যুগে সহায়ক কর্মচারীদের পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে দেশে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা মনে করেন, অধস্তন আদালতের কর্মচারীদের প্রতি এটি বৈষম্যমূলক আচরণ। আর এমন আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন বিচার বিভাগীয় কর্মচারীরা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে। কিন্তু এতো বছর পরও শুধু বিচারকদের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মচারীদের ওই পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রেজোয়ান খন্দকার দেশ প্রতিনিধিকে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের দুই দফা হচ্ছে- অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীদের বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতা প্রদান এবং বিদ্যমান ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়ন। 

মো. রেজোয়ান খন্দকার জানান ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে স্মারকলিপি প্রদানসহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনায় দাবি বাস্তবায়নে আশ্বাস প্রদান করা হলেও অদ্যাবধি দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করে দাবি উপস্থাপন করা হয়। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন অ্যাসোসিয়েশনের পেশকৃত দাবি যৌক্তিক হিসেবে সহমত পোষণ করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রদানকৃত কমিশন কর্তৃক প্রতিবেদনের সুপারিশে অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীদের বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতাদি প্রদানের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি এবং চাকরি ও নিয়োগ বিধিমালার যুগোপযোগী সংস্কারের উল্লেখ করা হয়নি।

তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে অ্যাসোসিয়েশনের দাবি উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলা পরিদর্শনকালে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জেলা ও বিভাগের নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করলে দাবি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন মর্মে আশ্বস্ত করেন। ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান যার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রধান বিচারপতি, তবে সেখানেও সহায়ক কর্মচারীদের বৈষম্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না থাকায় অধস্তন আদালতের প্রায় ২০ হাজার সহায়ক কর্মচারীকে আশাহত করেছে। যা বৈষম্যহীন ও স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চরম অন্তরায়; অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীরাই বিচারপ্রার্থী জনগণের সেবাদানের জন্য দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে থাকেন। 

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধু বিচারকদের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মচারীদের উক্ত পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিচারকদের সঙ্গে আদালতের সহায়ক কর্মচারীরা একই দফতরে কাজ করা সত্ত্বেও জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে বিচারকদের বেতন-ভাতাদি প্রদেয় হলেও সহায়ক কর্মচারীরা জনপ্রশাসনের আলোকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। 

জেলা জজ আদালত ও অধস্তন আদালতসমূহ এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতসমূহ কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৯ এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির আদালতসমূহ কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৮ প্রণীত হয়। কিন্তু দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও উক্ত বিধিমালাগুলো হালনাগাদ করা হয়নি। পদোন্নতির ধারা উন্মোচনসহ নতুন পদ সৃজন না হওয়ায় অধিকাংশ কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ একেবারেই রুদ্ধ। অনেক কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়াই আক্ষেপ ও হতাশা নিয়ে একই পদে ৩৮/৪০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি বঞ্চিত থেকে অবসরে যাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য, সচিবালয়ে একজন অফিস সহায়ক চাকরিতে যোগদান করে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) উপ-সচিব (নন্ ক্যাডার) পদে পদোন্নতি পেতে পারেন; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে প্রচলিত নিয়োগবিধি অনুযায়ী অফিস সহকারী পদে যোগদানকারী একজন চাকরিজীবী পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পর্যন্ত হতে পারেন; পুলিশের কনস্টেবল পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নন্ ক্যাডার) পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। শতভাগ বৈষম্যের শিকার অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীদের উল্লেখযোগ্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই।

এদিকে ১৮ এপ্রিল শনিবার অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীদের বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদান এবং বিদ্যমান ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবিতে প্রেস ক্লাবে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. রেজোয়ান খন্দকার লিখিত বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. নাজিম উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সালাউদ্দিন দিদার, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিক আহমেদ রিংকু ও দফতর সম্পাদক মো. জিয়াউল হক, বিভাগীয় ও জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীদের সংগঠন। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্টা ও আইন সচিব মহোদয়গণের নিকট বৈষম্যহীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীদের বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতা প্রদানকরত বিদ্যমান জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের ১ম-৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম-১২তম গ্রেডভুক্ত করাসহ সব ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের জোর দাবি জানানো হয়। 

কর্মসূচি এর পাশাপাশি সংবাদ সম্মেরন থেকে অ্যাসোসিয়েশনের দুই দফা ন্যায্য দাবি আদায়ে আগামী ৪ মের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে পরের দিন অর্থাৎ ৫ মে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

শেয়ার করুন