৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১৬:৪৯ অপরাহ্ন


জর্জটাউনের অধ্যাপক ড. বাদর খান সূরির মুক্তি
নতুন ভিডিওতে মাহমুদ খালিলের বেআইনি গ্রেফতারের প্রমাণ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৫-২০২৫
নতুন ভিডিওতে মাহমুদ খালিলের বেআইনি গ্রেফতারের প্রমাণ মাহমুদ খালিল ও ড. বাদর খান সূরি


গত মার্চ মাসে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন আবাসিক ভবনের ভেতরে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা বিনা ওয়ারেন্টে প্রবেশ করে খালিলকে গ্রেফতার করে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, খালিল পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে নতুন প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ সেই দাবি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা প্রমাণ করেছে।

এই ভিডিও ফুটেজ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ক্যামেরা থেকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি খালিলের স্ত্রী, মার্কিন নাগরিক ডা. নূর আব্দাল্লার পূর্বে ধারণকৃত মোবাইল ভিডিও এবং বিবৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে। খালিলের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই ফুটেজ স্পষ্ট করে যে আইস কর্মকর্তারা শুধু বেআইনিভাবে গ্রেফতারই করেনি, বরং মিথ্যা অভিযোগ এনে আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে। এই প্রেক্ষাপটে তার আইনজীবীরা আবারও মামলাটি বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন।

আইনজীবীরা আরও বলেন, এই ভিডিও প্রমাণ করে যে খালিলের গ্রেফতার ছিল বেআইনি এবং এটি ছিল তার মতপ্রকাশের অধিকার, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণে সরকারের প্রতিহিংসামূলক প্রতিক্রিয়া।

খালিলের আইনজীবী জনি সিনোডিস বলেন, এই ভিডিও দেখার পর আর কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। আইস শুধু বেআইনিভাবে গ্রেফতারই করেনি, বরং আদালতেও মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছে। তিনি আরও জানান, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অধীনস্থ নাগরিক অধিকার দপ্তর সিআরসিএল২০২৫ সালের মার্চ মাসে বিলুপ্ত হওয়ার আগেই এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছিল, যা হোমল্যান্ড সিকিউরিটির-এর অভ্যন্তরীণ উদ্বেগেরই প্রমাণ। গ্রেফতারের পরপরই খালিলকে তার গর্ভবতী স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ১,৪০০ মাইল দূরের লুইজিয়ানার একটি আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি তার সন্তানের জন্মের সময়ও পাশে থাকতে পারেননি। আগামী ২২ মে বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি নির্ধারিত হয়েছে।

মাহমুদ খালিলের পক্ষে আইনি সহায়তা দিচ্ছে-ড্র্যাটেল লুইস, সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস, ক্লিয়ার, ভ্যান ডার হাউট এলএলপি, ওয়াশিংটন স্কোয়ার লিগ্যাল সার্ভিসেস, নিউ ইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ), এসিএলইউ অফ নিউ জার্সি এবং এসিএলইউ অফ লুইজিয়ানা। ক্লিয়ার-এর সহ-পরিচালক রামজি কাসেম বলেন, “সরকার স্বীকার করেছে যে খালিলের বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেন্ট ছিল না। এই ভিডিও ফুটেজ আইসিইর মিথ্যার শেষ পেরেক-ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মাহমুদ সম্পূর্ণ শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত ছিলেন। নিউ ইয়র্ক সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন -এর আইনজীবী ভেরোনিকা সালামা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মিথ্যা বলতেই পারে, কিন্তু এই ভিডিও ফুটেজ মিথ্যা বলে না। ১০ মিনিটের সেই ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় মাহমুদ শান্তভাবে সবকিছু মেনে নিচ্ছেন এবং স্ত্রীকে বলছেন, ‘হাবিবি, ঠিক আছে।’ এটি প্রমাণ করে যে গ্রেফতারটি সম্পূর্ণ বেআইনি ও অমানবিক ছিল। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন অফ নিউ জার্সির নির্বাহী পরিচালক আমল সিনহা বলেন, এই গ্রেফতার ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত-মতপ্রকাশের অধিকারকে দমন করার একটি চেষ্টা। খালিলকে মুক্তি দেওয়া এখন সময়ের দাবি। আইনজীবী অ্যামি গ্রিয়ার বলেন, সরকারের চিরাচরিত কৌশল হলো দোষ ঢাকতে ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ করা। কিন্তু এবার আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে মাহমুদ শান্তভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাজ করেছেন। এখন সরকারের উচিত মামলা বাতিল করে তাকে মুক্তি দেওয়া।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার সংগঠন এবং অভিবাসন অধিকার কর্মীদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, এটি শুধু একজন ব্যক্তির ওপর নিপীড়ন নয়-বরং এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর একটি গুরুতর আঘাত।

জর্জটাউনের অধ্যাপক ড. বাদর খান সূরির মুক্তি

ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) কর্তৃক বেআইনিভাবে আটক থাকার পর, ফেডারেল আদালতের আদেশে গত ১৪ মে মুক্তি পান জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. বাদর খান সূরি। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে আবেগঘনভাবে পুনর্মিলিত হন।

মুক্তির মুহূর্তে অনুভূতি প্রকাশ করে ড. সূরি বলেন, যেদিন আমি বন্দিশালার দরজা পেরিয়ে বাইরে এলাম, সেদিন প্রথমবারের মতো মুক্তির নিঃশ্বাস নিলাম। গত দুই মাস ধরে এই চাওয়াটা আমার কাছে ছিল এক অসম্ভব স্বপ্নের মতো। এত সাধারণ একটি কাজ হঠাৎ করেই অসাধারণ হয়ে উঠেছিল। চারপাশে তাকিয়ে আমি যাদের ভালোবাসা ও সংগ্রামের কারণে আজ এখানে, তাদের মুখ দেখলাম। সেই মুহূর্তে আমার চোখে জল এসে গেল-যন্ত্রণা থেকে নয়, নিখাদ আনন্দ থেকে। এটা ছিল মুক্তির অনুভূতি-আশা ও সংহতির আলিঙ্গন।

তিনি আরও বলেন, দুই মাসের দুঃখ, যন্ত্রণা আর অনিশ্চয়তার পর যখন আমি আমার সন্তানদের জড়িয়ে ধরলাম, সেটা যেন মরুভূমিতে একটি ওয়াসিসের খোঁজ পাওয়ার মতো অনুভূতি ছিল। সেই আলিঙ্গনেই যেন আমি আবার জীবন ফিরে পেলাম। এই মুক্তি সম্ভব হয়েছে আমার আইনজীবীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার অটুট বিশ্বাসের কারণে। এখন আমার সবচেয়ে বড় কামনা, মাহমুদ খালিল যেন খুব শিগগিরই তার নবজাতক সন্তানকে কোলে নিতে পারেন এবং এখনো আটক থাকা প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন তাদের প্রিয়জনের কাছে ফিরে যেতে পারেন।

শেয়ার করুন