৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:০৯:২৩ অপরাহ্ন


নির্বাচন অর্থবহ করতে সাত দায়িত্বের খসড়া
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৫
নির্বাচন অর্থবহ করতে সাত দায়িত্বের খসড়া প্রতীকী ছবি


নির্বাচন ঘোষিত সময়ের মধ্যে হবে কি হবে না-তা নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে এখনো সময় চলছে। নির্বাচনের চিৎকার শোনা যায়, কিন্তু এজন্য প্রস্তুতি বড়ই কম। তাহলে দেশ কি প্রস্তুতি নিচ্ছে-২০১৪, ২০১৮ কিংবা ২০২৪ সালের মতো নির্বাচন? প্রশ্নটা রাখলাম বাংলাদেশ আওয়ামী সরকার বিগত দিনে নির্বাচনকে ‘ছেলের হাতের মোয়া’ বানিয়েছিল। নির্বাচন একটা শব্দ ও একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। যেন নির্বাচনের দিনটি পার হলেই নির্বাচন শেষ। এখনো কি সে রকম নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে? যে বিষয়গুলো নির্বাচন নিয়ে জনগণের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহির সম্মুখীন করতে হয় তার মধ্যে রয়েছে-১. নির্বাচনের ইশতেহার, ২. নির্বাচনের বিধিবিধানের প্রতি অঙ্গীকার ৩. নির্বাচনের পরবর্তী কর্মসূচি ও ৪. নির্বাচনের রাজনৈতিক অঙ্গীকার।

এসবের মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব বিষয় নির্বাচনের শর্তাধীন করা জরুরি তা স্বাভাবিক নির্বাচনের সংস্কৃতির চেয়ে ভিন্নতর হওয়া অনেকটা জরুরি। 

১. বাংলাদেশে একটি আন্দোলনের মুখোমুখি হয়ে বিগত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে চলে যেতে হয়েছে; কিন্তু সে হাসিনা সরকারের পেছনে রয়েছে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতীয় সরকারের মদত। এ বিষয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তির প্রতিশ্রুতি কি? 

২. বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা আন্দোলন করেছে স্বাধীনতাযুদ্ধে শরিক হয়ে। স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাক্কালে স্বাধীনতা ঘোষণায় পরবর্তী সময়ে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণাকে মুজিবনগর সরকার বৈধ রূপ দিয়েছে। সে ঘোষণা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ পরবর্তী সরকারগুলো নেয়নি। আগামী দিনে সে ঘোষণা বাস্তবায়নের কোনো প্রতিশ্রুতি থাকবে কি না? 

৩. বাংলাদেশে পরবর্তী সময়ে ১৯৯০ সালেও দুর্দান্ত আন্দোলন হয়েছে। সে আন্দোলনে পতন হয়েছে আরেক স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের। সে পতনের জন্য তিন জোটের রূপরেখা হয়েছিল। সে জোটের রূপরেখার কোনো হদিস পরবর্তী সরকার রাখেনি। বরং সে রূপরেখাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে একাংশ আরেকাংশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি রেষারেষি, বিচারের নামে অবিচারের প্রশ্রয় দিয়ে ভণ্ডুল করে দিয়েছে। সে ভণ্ডুল করা বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি থাকবে কি না? 

৪. এরপর ২০০৬ সালের আন্দোলন ও ২০০৭ ও ২০০৮ সালের সেনাবাহিনীর মদতে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে দেশের চালচিত্র পরিবর্তন করলো তার হিসাবের কোনো প্রতিশ্রুতি থাকবে কি না? 

৫. এর পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে যে ‘নন-ইনক্লুসিভ’ নির্বাচন কিংবা বিএনপিকে বাইরে রখে নির্বাচন হলো তার বিষয়ে তদন্তের কোনো প্রতিশ্রুতি পরবর্তী সরকার নিচ্ছে কি না বা বর্তমান সরকার তাদের ওপর সে দায় বর্তাবে কি না? 

৬. ২০১৮ সালের ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচনে যেভাবে ভোট লুণ্ঠনের মহোৎসব হয়েছে, নির্বাচনের আগের রাতে সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাবের হস্তক্ষেপে আওয়ামী লীগের লুণ্ঠন বাহিনী ভোট হাতিয়ে বিএনপিকে মাত্র সাতটি আসন দিয়েছে। তার বিষয়ে হিসাব নেওয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি নির্বাচিতদের কাছ থেকে আদায় করা হবে কি না? 

৭. ২০২৪ সালে ভিন্নপথে একদলীয় শাসন কায়েম করার লক্ষ্যে গণতন্ত্রকে বেহাল করে নির্বাচনের নামে বাছাই করার দানবীয় বস্তুগুলোকে ব্যবহার করে কোটার নামে, মুক্তিযুদ্ধের নামে, ক্ষমতায় আস্ফালন দেখিয়ে এ বিষয়ে ২০১৮ সালের দেওয়া প্রতিশ্রুতিকে পদদলিত করে হাজার মানুষকে অবলীলায় হত্যা করে, শত শত লোকের চোখ উৎপাটন করে আরো হাজার মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কর্তন করে, যেভাবে কালীর সামনে ‘গালগল্পের’ নরবলির মতো মানুষ বলি দেওয়া হয়েছে, তার হিসাবনিকাশের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাবে কি না? অন্তত এ সাতটি সাধারণ কুকীর্তির বিচার পরবর্তী সরকারের কাছে চাপাতে হবে। আর তা যদি না হয়, তাহলে নির্বাচন করা বা না করার মধ্যে বাংলাদেশের কিংবা বাংলাদেশের জনগণের কোনো স্বার্থ নেই। 

বর্তমানের অন্তর্বর্তী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার না নিজেরা এর সমাধানের কূলকিনারা করতে পারছে। না এসব দায়িত্ব ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর চাপানোর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে তার কোনো হদিস নেই। বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে চলছে সংস্কারের নামে বাচালতা, নির্বাচনের নামে ক্ষমতা দখলের মহড়া, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ আর আওয়ামী লীগকে পুনর্বহালের প্রতিযোগিতা, আলোচনা চলছে, কারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বহাল করার কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। নটিনর্তকীও মানুষের রক্তপিপাসুদের মঞ্চে দেখা যায় আওয়ামী দোসরদের। বাংলাদেশ কেন-এ প্রবাসেও দেখা যায় বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলেট বা অন্যান্য দূতাবাসে মানুষ হন্তাদের কীভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে? সম্ভবত সর্বত্রই একই অবস্থা। বাংলাদেশে দুরাচাররা আজ স্থান করে নিয়েছে। যারা স্থান করতে পারেনি। তাদের সেনাবাহিনী নিরাপদে রক্ষা করেছে। পাচার করেছে বিদেশে। বাংলাদেশে চলছে নির্বাচন আর অনির্বাচনের খেলা। বাংলাদেশের জুলাই-পরবর্তী যেভাবে যে আশা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, সে আকাক্সক্ষা আজ অনেকেই পোষণ করে না। তার বিরুদ্ধে নিজপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছাড়া অদ্যাবধি অন্য কোনো নিন্দাবাদ না উঠলেও তার প্রতি মানুষের মনে ভালোবাসায় চিড় ধরেছে। এ অবস্থায় সরকার পরিবর্তন জরুরি। আর এ কারণে নির্বাচনের বিকল্প কিন্তু নির্বাচনই, অন্যকিছু নয়। তবে ভবিষ্যতে সরকারের কাছে উপরোল্লিখিত সাতটি মর্মবেদনার দায়িত্বভার কীভাবে তুলে দেওয়া যায়, তার হিসাব কষা জরুরি।

দিন যত যাচ্ছে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রূপ বদল হচ্ছে। গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার লাশ পোড়ানো হয়েছে। তার দরবারের একজনকে হত্যা করা হয়েছে। যে কারণে লাশ পোড়ানো হয়েছে, তার বীভৎসতার ফতোয়া যে দিয়েছে তাদের নাম তৌহিদী জনতা। তবে খুনের রায়টাও দিয়েছে তৌহিদী জনতা। দুটি কাণ্ডের মধ্যে কোনটা কোন শরিয়তের তার কি হদিস আছে? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাকে রাতে তার কামড়ায় ঢুকতে না দেওয়া কোন শরিয়তের বিধান। কিশোরকে ৪০ জন মিলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা লোহার তার দিয়ে পিটিয়ে মারা কোন শরিয়তের বিধান। মহিলাদের বলাৎকার করা কোন শরিয়তের বিধান, শরিয়ত পরিপন্থী বলে বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোন শরিয়তের বিধান। এ সরকারকে তার জবাব দিতে হবে।

শেয়ার করুন