১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৭:২৫:২৫ পূর্বাহ্ন


নামাজিদের ওপর হামলার অভিযোগে মার্ক অ্যালেন গ্রেফতার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৫
নামাজিদের ওপর হামলার অভিযোগে মার্ক অ্যালেন গ্রেফতার সান্তা ক্লারা কাউন্টির জেলা অ্যাটর্নি সংবাদ সম্মেলনে রমজান মাসে মরগান হিলে মুসলিম উপাসকদের ওপর হামলার ঘটনায় ঘৃণাজনিত অপরাধের অভিযোগ ঘোষণা করছেন


ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা কাউন্টির মরগান হিল শহরে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ওপর ইসলামবিদ্বেষী হামলার ঘটনায় ৫৯ বছর বয়সী মার্ক অ্যালেনকে গত ২২ এপ্রিল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সান্তা ক্লারা কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস তার বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধের গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযুক্ত নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আরো তদন্ত চলছে।

ঘটনাটি ঘটে ৭ মার্চ সন্ধ্যায় যখন মুসলিম সম্প্রদায় মরগান হিল কমিউনিটি অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারে রমজান মাস উপলক্ষে তারাবির নামাজ শেষে বের হচ্ছিলেন। সাউথ ভ্যালি ইসলামিক কমিউনিটির সদস্যরা প্রতি বছর রমজান মাসে এখানেই তারাবির নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় অভিযুক্ত মার্ক অ্যালেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং হঠাৎ মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে ইসলামবিদ্বেষী ও ফিলিস্তিনবিরোধী গালিগালাজ শুরু করেন। তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন: ‘তোমরা কি ফিলিস্তিন থেকে এসেছ?’ এবং ‘তোমরা কি হামাস?’ - এই ধরনের প্রশ্ন ছুড়ে দেন। এরপর তিনি এক বয়স্ক মুসল্লিকে জোরে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন, যা শারীরিকভাবে স্পষ্ট হামলার ঘটনা।

ঘটনার পর মরগান হিল শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় মুসলমানরা জানান, ধর্মীয় স্থানে এমন হামলা শুধু তাদের নিরাপত্তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং ধর্মীয় স্বাধীনতার উপরও আঘাত হানে। অনেকে বলছেন, এখন নামাজে যাওয়া বা প্রকাশ্যে মুসলিম পরিচয় দেওয়ার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

মানবাধিকার আইনজীবী বিসমাহ জাফর বলেন, এই ধরনের ঘটনা আমাদের ভেতরে থাকা নিরাপত্তাহীনতা আরও গভীর করে তোলে। ইসলামফোবিয়া ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণাগুলো এখন আরো উগ্রভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি মনে করেন, এই হামলা শুধু একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়, বরং এটি সামগ্রিকভাবে মুসলিম কমিউনিটির বিরুদ্ধে একটি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিফলন।

সান্তা ক্লারা কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জেফ রোজেন বলেন, কেউ কেউ ভাবতে পারেন এটি একটি সাধারণ ঘটনা-একটি ধাক্কা মাত্র। কিন্তু না, এটি একটি পুরো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের আচরণ আমাদের সমাজ এবং আমেরিকান মূল্যবোধের পরিপন্থী। তিনি আরো জানান, ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত ১৫টি ঘৃণাজনিত অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি এবং অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

এই ঘটনার পর স্থানীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার সংস্থা এবং সমাজের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মরগান হিলে একতা, সহানুভূতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা ছড়িয়ে দিতে একটি প্রতিবাদ সভারও আয়োজন করা হয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন,যেন ভবিষ্যতে এমন হামলা প্রতিরোধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং ইসলামফোবিয়া এখনো যুক্তরাষ্ট্রের মতো উদার সমাজেও একটি বড় হুমকি হয়ে রয়ে গেছে, যা শুধু নির্দিষ্ট সম্প্রদায় নয়, বরং সামগ্রিক সামাজিক সহনশীলতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে যে, বৈচিত্র‍্যময় সমাজ হলেও ঘৃণা ও ধর্মীয় বিদ্বেষ এখনো বাস্তবতা। এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সহনশীলতা বজায় রাখা এখন সময়ের দাবি।

শেয়ার করুন