১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৩:৫৪:০৪ পূর্বাহ্ন


আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের নেপথ্যে অনেক খেলা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৫-২০২৫
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের নেপথ্যে অনেক খেলা


বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে নানান ধরনের রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ শুরু হয়ে গেছে। কি কারণে অন্তর্বর্তী সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। এর পেছনে কি রহস্য কাজ করছে তার চুলচেরা পর্যবেক্ষণও হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কারো কারো মতে, এমন নাটকীয়কতার পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের যেমন হাত রয়েছে, তেমনি বিএনপিও যে কেবল সাইড লাইনে বসে খেলা দেখেছে বিষয়টা তেমনও না। কারো কারো মতে, আওয়ামী লীগের পক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তদবিরকারীদের কোণঠাসায় রাখতে পুরো সপ্তাহ জুড়ে সারা দেশে এমন নাটকীয়তা প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। আবার কারো কারো মতে, পতিত আওয়ামী লীগ নিয়ে ছোট-বড় সব দলের নানান ধরনের গোপন তৎপরতা, কামড়াকামড়ি ঠেকাতেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কাজ করেছে। রাজনৈতিক মাঠ ঘুরে এমনটাই আভাস মিলেছে। 

কি ঘটে গেলো?

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা মো. আবদুল হামিদ গত সপ্তাহের ৭ মে বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে যান। তার নামে মামলা থাকলেও কীভাবে দেশ ছাড়েন সেই প্রশ্ন তোলেন জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র নেতারা। কেননা জুলাই অভ্যুত্থানে হামলা ও গুলির অভিযোগে কিশোরগঞ্জে আবদুল হামিদের নামে মামলা রয়েছে। এনিয়ে দেশব্যার্পী তোলপাড় বয়ে যায়। তবে তার দেশত্যাগ নিয়েও চারদিকে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তার দেশ ছাড়া নিয়ে চলছে তোলপাড়। ‘তিন সংস্থার সমন্বয়ে দেশ ছাড়েন হামিদ!’- এমন শিরোনামে গণমাধ্যমে একটি খবর প্রকাশিত হয়, যদিও এব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ধরেই নেয়া যায় যে, খুব প্রভাবশালি চ্যানেল আর অকাতরে অর্থ ছিটিয়ে এমন মহান কাজটি সম্পাদন হয়েছে। 

এদিকে ঘটনাটি জানাজানির পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে মিছিলও হয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে তিন দিন ধরে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ছাত্র-জনতা। এমন পরিস্থিতিতে গত ১০ মে শনিবার রাতে জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। শেষমেষ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় গত শনিবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে। যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শান্তি দিতে পারবে।

ঘটনার আগে প্রতিক্রিয়ায় কে কি বললো

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্তটি যখন আসি আসি ভাব ঠিক তখনই ‘গোপন বন্দিশালা আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতার পুনর্বাসন দেশের মানুষ চায় না’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যা ছিল বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। কেননা তখনই ধরে নেয়া হয় যে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কিছু একটা হচ্ছেই। এই সময়ে তারেক রহমান আরও বলেন, যারা দেশে অবৈধ সংসদ ও সরকার গঠন করেছিল, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলে বসেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে যারা এখন মাঠে আছে কেবল তারা নয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না।

ঘটনা ঘটার পর বিএনপিসহ অন্যদের প্রতিক্রিয়া

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত ইতিবাচকভাবে দেখছি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। হাসনাত আরও বলেন, ১২ মে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আজকে আপনারা বাসায় ফিরে যান। 

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্তটি আসার পরপরই বিএনপি’র নেতাদের প্রতিক্রিয়া আরও ইঙ্গিতপূর্ণ ছিল। আইনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি নেতারা প্রতিক্রিয়া জানান, যা ছিল আসলে ধরি মাছ না ছুই পানির মতো অবস্থা। দলটির নেতারা জোর গলায় বলেন, একমাত্র বিএনপিই আইন-আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিচার চেয়েছে। দেরি হলেও সরকার সেই পথে এগিয়েছে। এসময় বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কিছু বাড়তি তথ্য দেন। ১১ মে রোববার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে দীর্ঘ কয়েক মাস আগেই এই দাবিটা লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিলাম- আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার অপরাধের দায়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তখন প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি যদি আমলে নিতেন তাহলে সরকারকে গত ২ দিনের মতো এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।’ 

নেপথ্যে কি

প্রশ্ন হচ্ছে কি হতে কি হলো? কিন্তু কেনো হলো? এমন বিষয়টির বিশ্লেষণে অনেক কিছুই বেড়িয়ে আসে। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি টি আসলে কে কাকে কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলো তা নিয়ে চলছে নানান ধরনের আলোচনা। কারো কারো মতে, একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা প্রতিবেশী দেশের সাথে গোপন শলাপরামর্শ করে আওয়ামী লীগকে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বন্দোবস্ত করছে-এমন খবর বিএনপি’র হাইকমান্ডের কাছে চলে আসে। কেননা বিএনপি পর্যবেক্ষণ হচ্ছে হঠাৎ করে ওই দলটি নির্বাচন তাড়াতাড়ি হয়ে যাক এমন দাবিতে সোচ্চার হয়েছে।

কেননা একসময় বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দাবি করে কুলকিনারা করতে পারছিল না ও-ই দলটির কারণে। তারা আগে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারে দাবি তুলে বসে। এই অবস্থায় বিএনপি বলা যায় রাজনৈতিকভাবে কিছুটা বেকায়দা পরে। কিন্তু ওই দলটি হঠাৎ বলা শুরু করে যে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে তাদের আপত্তি নেই। এসময় সারাদেশে খবর রটে যায় ওই দলটি গোপনে একটি প্রতিবেশী দেশের সাথে গোপন যোগাযোগ করে পতিত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করতে তাদের নির্বাচনে এনে বিরোধী দলের আসনে বসাতে যায়। এতেই বিএনপি দ্রুত মত পাল্টায়। বলা যায় এমন পরিকল্পনা ভুণ্ডুল করে দিতে বিএনপি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির পালে হাওয়া দিতে থাকে। তাই কারো কারো মতে, এক্ষেত্রে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার মত মৃদু পদক্ষেপ নিয়ে আপাতত দলটিকে বাকবন্দী করে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে মাত্র। 

দেশী-বিদেশী তদবিরকারীদের কোণঠাসা রাখতে

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে আরও কারণ রযেছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। বলা হচ্ছে, দেশী-বিদেশী তদবিরকারীদের প্রচন্ড চাপ সুপারিশে অন্তর্বর্তী সরকার রীতিমত হাপিয়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিদেশী কূটনীতিকরা যেমন চাপ দিচ্ছে তেমন দেশের ভেতরেও কোনো কোনো শক্তি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে এনে অংশগ্রহণমূলক করার পক্ষে শক্তভাবে কাজ করে যাচ্ছিল। 

জানা গেছে, কূটনীতিকদের অনেকেই পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। এতে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকবারই বিব্রতকর অবস্তায় পড়তে হয়েছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিদেশী কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্থ করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে আগামীকে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। যদি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই থাকে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা সেক্ষেত্রে সে-ই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাদ পড়বে কিভাবে? 

এবিষয়টি নিয়ে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে। কেননা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার একটি বড় ধরনের প্রতিবাদ আসতে পারে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সংশ্লিস্টদের ধারণা। সেক্ষেত্রে এখন দৃঢ়তার সাথে নির্বাচনে অংশগ্রহণে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের উদাহরণটি টেনে আনতে পারবেন নোবেল শান্তিতে পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সহজেই বিদেশী কূটনীতিকদের শান্তি করতে পারবেন এই বলে যে, যে দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে আসলে কি অবস্থা..। বিদেশী কূটনীতিকদের সহজেই বুঝিয়ে দেওয়া হবে যে, দেশের ভেতরে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ওই দলটিকে (আওয়ামী লীগ) নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে প্রচন্ড চাপ আছে। এখন থেকে বিদেশী কূটনৈতিকদের সাথে বৈঠকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হবে যে, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার পক্ষের কথা বিবেচনা করেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়।

নির্বাচনের মাঠ নিরাপদ করা হলো বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকার

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি নেওয়ার পেছনে বিএনপি-ও কিছু সুবিধা পাবে বলে কারো কারো মতে। কারো কারো ধারণা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে মাঠ আসলে প্রকৃতপক্ষে কোন দিকে যাবে তা বলা অনেক কঠিন। কারো কারো মতে, রাজনৈতিক অঙ্গনে মাঠ বিএনপি’র নিয়ন্ত্রণে যতোই বলা হোক না কেনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণান সাথে সাথে জনতার স্রোত আসলে কোন দিকে যাবে তা-নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের চেতনা নিয়ে গড়ে উঠা নতুন দল এনসিপি’তেও দুশ্চিন্তা রয়েছে। কারো কারো মতে, এ দু’টি দলের নির্বাচনের মাঠকে মসৃন রাখতেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি নেওয় হয়েছে। 

জামায়াতকে চাপে ফেলা হলো?

সন্ত্রাস দমন আইনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার হয়েছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের বিচারের পথ খুললে ৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান কী হবে? আওয়ামী লীগের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাস দমন আইনে। সেক্ষেত্রে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামির বিচারের বিষয়টির বিা কি হবে? এমন প্রশ্ন পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনেকে কাপাচ্ছে। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে নেওয়া সিদ্ধান্তটি কি জামায়াতের বিপক্ষে চলে গেলো না। তা-না হলে কেনো কি কারণে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি যেদিন নেওয়া হয় ঠিক তখনই কেনো তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এ-ই প্রসঙ্গটি আনলেন। উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, ’৭১-এর প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিন্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। আবার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম এমন চরম বিবৃতির মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা কেনো আবার একিই ধরনের প্রসঙ্গটি টেনে আনে। কেননা যারা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, তাদের নিজ রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত ১২ মে সোমবার দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দীন সিফাত স্বাক্ষরিত ‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্কে এনসিপির অবস্থান’ শীর্ষক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এসব কিছুর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াতের রাজনীতি করা ও তাদের সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নানা ধরনের বির্তকের বেড়াজালে রয়েছে। দেশে বিদেশে প্রচার আছে অন্তর্বর্তী সরকার জামায়াতকে প্রশয় দিচ্ছে। তা-ই কারো ধারণা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা বা একধরনের চাপে রাখতেও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি নেওয় হয়েছে। কেননা এধরনের পদক্ষেপটি যখন নেওয়া হলো ঠিক তখন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আংশিকশ্রুত আপিলটি গত মঙ্গলবার (১৩ মে) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছিল। এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর করা আপিলের শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। ১৪ মে বুধবার ফের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগ আমলে আপিল মামলাটি খারিজ (আইনজীবী হাজির না থাকায়) করে দেয়। এরপর আপিলটি পুনরুজ্জীবনের জন্য আবেদন করা হয়। গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালত বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি শুনানির জন্য রিস্টোর করেছেন। অর্থাৎ পুনরুজ্জীবন করেছেন। এখন দেখা যাবে যে প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে সেই আলোকে জামায়াতকে কতটা সুযোগ দেওয়া হয়। কেননা গত ৫৪ বছর ধরে এদেশের মানুষ একাত্তরের গণহত্যার দায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেও বিচার করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো সরকার এই উদ্যোগ নেয়নি। ফলে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে- এমন সিদ্ধান্তের পেছনে অনেক হিসাবই কাজ করছে, যা দেথতে আরও কিছু সময় লাগবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।

শেয়ার করুন