হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি গত ৩০ এপ্রিল বাজেট রিকনসিলিয়েশন বিল অনুমোদন করেছে। এই বিল যদি আইনে পরিণত হয়, তাহলে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অভিবাসনবিরোধী বৃহত্তম অর্থ বরাদ্দের বিলে পরিণত হবে। এই অর্থের মাধ্যমে সীমান্তে কঠোরতা অবলম্বন করা হবে, যাকে ইমিগ্র্যান্টরা আমেরিকায় পরিণত করতে না পারে। প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন খাতে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হবে, যার মধ্যে ৪৫ বিলিয়ন ডলার যাবে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর ডিটেনশন কার্যক্রমে এবং ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ থাকবে আইস-এর পরিবহন ও প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের জন্য। এর পাশাপাশি, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের জন্য প্রায় ৬৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে ৫১.৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ ছাড়াও হাউস জুডিশিয়ারি বিলটি মানবিক অভিবাসন সুবিধার ওপর বাধ্যতামূলক ফি আরোপ করতে চায়, যেগুলো বেশির ভাগ আবেদনকারীর নাগালের বাইরে হয়ে যাবে। ‘রিকনসিলিয়েশন’ হলো একটি বার্ষিক কংগ্রেসনাল বাজেট পদ্ধতি, যা সিনেটে ফিলিবাস্টারের নিয়ম বাইপাস করে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে বাজেট পাসের সুযোগ দেয়। যদিও বর্তমানে হাউস ও সিনেট রিপাবলিকানদের মধ্যে বিলের নির্দিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, তবুও এই প্রস্তাব জিওপির বাজেট আলোচনা প্রক্রিয়ার সূচনাবিন্দু হিসেবে কাজ করছে।
যদি এই অর্থ বরাদ্দ অনুমোদিত হয়, তাহলে আইস আগামী কয়েক বছরে গণহারে বহিষ্কার অভিযান এমন মাত্রায় বাড়াতে পারবে যা পূর্বে কখনো দেখা যায়নি। এতে আইস পরিণত হবে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ অর্থায়নপ্রাপ্ত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায়। এর ফলে হাজার হাজার অফিসার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করতে পারবে এবং বেসরকারি কারাগার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলিয়ন ডলার প্রদান করে নতুন বন্দিশিবির স্থাপন ও প্রত্যাবাসন ফ্লাইট বাড়ানো হবে। এ বিল অনুযায়ী, আইস সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৯ পর্যন্ত ডিটেনশনের জন্য ৪৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারবে, যা তাদের বর্তমান ৩.৪ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের তুলনায় বার্ষিক ৩৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি। তুলনায়, ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজনসের বর্তমান বাজেট ৮.৩ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ আইস-এর ডিটেনশন বাজেট ফেডারেল কারাগার ব্যবস্থার চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি হবে।
আইস-এর পরিবহন ও প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমান ৭২১ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় বার্ষিক ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি। একই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরে ১০ হাজার নতুন আইস অফিসার নিয়োগের জন্য বরাদ্দ থাকবে ৮ বিলিয়ন ডলার এবং ৮৫৮ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে সাইনিং বোনাস ও কর্মকর্তাদের ধরে রাখার জন্য। এই মাত্রার গণহারে নিয়োগের জন্য মানবসম্পদ কর্মী নিয়োগে অতিরিক্ত ৬০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হবে। অন্যদিকে অভিবাসন আদালতের বাজেট বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ৩০ শতাংশ, যা বর্তমানের মামলাজট নিরসনের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে নতুন ডিটেনশন সেন্টার তৈরি হলেও যথেষ্ট সংখ্যক বিচারক না থাকায় মানুষদের দীর্ঘদিন আটক রাখা হবে বিচার ছাড়াই।
এই বিলের প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো শুধু অভিবাসন প্রয়োগ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অভিবাসীদের অধিকার, মানবিক বিবেচনা ও ন্যায়বিচারের নীতি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না, বরং তা যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ-স্বাধীনতা, মানবতা এবং সুযোগের দেশ হিসেবে পরিচিতির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। বিলটি যদি আইন হিসেবে পাস হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি করবে, যেখানে অর্থ ছাড়া অভিবাসনের পথ প্রায় সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে পড়বে। মানবিক সংকট মোকাবিলার বদলে অভিবাসন ব্যবস্থাকে একটি দমনমূলক ও বাণিজ্যিক কাঠামোয় রূপান্তর করার এই উদ্যোগ নিয়ে এখন গভীর বিতর্ক ও পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে।
সবকিছু মিলিয়ে এই হাউস বিলটি আমেরিকান সমাজ ও অভিবাসীদের জন্য বিচার প্রক্রিয়ার কাঠামোকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করবে। আইস হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং আশ্রয় পাওয়া শুধু ধনীদের নাগালে থাকবে। অভিবাসন আদালতে নিজেকে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে এমন লোকদের জন্য, যাদের পক্ষে এসব নতুন ফি বহন করা সম্ভব নয়। যদি এই বিল পাস হয় এবং আইসকে অসংখ্য নতুন বন্দিশিবির স্থাপনের ক্ষমতা দেওয়া হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে আর ‘ল্যান্ড অব ফ্রিডম’ হিসেবে চেনা কঠিন হয়ে যাবে।