গ্রীষ্মকালে বিদেশের মাটিতে সবজি চাষ এখন আর শখের কোনো বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে বসবাসকারী অভিবাসী বাংলাদেশি অনেকে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। দুই ঋতুর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এপ্রিল-মে মাসে শীতের তীব্রতা যখন কমে আসে ধীরে ধীরে, গ্রীষ্মের আগমনী বার্তায় মানুষ উজ্জীবিত হয়ে উঠে তখন সবজি চাষিরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন চারা বোপণে। ধরুন, আপনি চারা সংগ্রহ করতে একটি দোকানে গেলেন, মধ্যস্বত্বভোগী দোকানিরা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে চড়া দামে চারা বিক্রি করে থাকেন। অতিরিক্ত মূল্য ছাড়া পছন্দের নানা জাতের চারা সংগ্রহ থেকে অনেকেই বঞ্চিত হন। বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে বসবাসকারী জনট্রিয় ইউটিউবার ওয়াহিদা মিয়া। সবজির চারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের একই ছাদের নিচে নিয়ে এসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ওয়াহিদা। এতে সবজি চাষিরা সুলভ মূল্যে যেমন পছন্দের চারা সংগ্রহ করতে পারছেন, তেমনি চারা বিক্রেতারাও কম সময়ের মধ্যে বেশি চারাগাছ বিক্রি করতে সক্ষম হচ্ছেন।
সম্প্রতি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ওয়াহিদা মিয়া জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আয়োজন করেন সবজি চারা মেলা। চারাপ্রেমী হাজার হাজার নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে উৎসবে রূপ নেয় মিশিগানের ওয়ারেন শহরের বৃহত্তম হেলমিচ পার্কটি। চারা মেলায় সম্পূর্ণ ফ্রিতে অংশ নেন চারাগাছ বিক্রেতারা। দেশি চারা বিক্রেতাদের পাশাপাশি অনেক বিদেশি চারা বিক্রেতারা যোগ দিয়ে চারা বিক্রি করেন। মেলায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে ফ্রিতে মেহেদী পরানো হয়। অনেক তরুণীকে মেহেদীতে হাত সাজাতে দেখা যায়। শিশুদের জন্য ছিল ফেস পেইন্টিং। লম্বা লাইন ধরে শিশুরা ফেস পেইন্টিং করে। ভোজন রসিকদের জন্য ছিল খাবারের স্টল। এছাড়া এক ডলারের র্যাফেল ড্রতে ছিল একাধিক পুরস্কার। র্যাফেল ড্র থেকে সংগ্রহকৃত অর্থ মসজিদের উন্নয়নের জন্য সংগ্রহ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কারণে বিভিন্ন শহর থেকে চারা প্রেমিকরা মেলায় উপস্থিত হন। এনারবার্গ শহর থেকে ছুটে এসে পছন্দের চারা সংগ্রহ করলেন জান্নাতুল ফেরদৌস নামের তরুণী। তিনি বলেন, আমার মা সামারে সবজি চাষ করতে খুব পছন্দ করেন, তাই পছন্দের সব চারা কিনেছি। কেন্টনের বাসিন্দা অরুণা ব্যানার্জি বলেন, এই মেলা থেকে কম সময়ে কম দামে ভালো ভালো সবজির চারা কিনলাম। ধন্যবাদ মেলার আয়োজনকারী ওয়াহিদাকে। হ্যামট্রামিক শহর থেকে মেলায় উপস্থিত হয়েছেন দুই সহোদর হারুন খান ও রিপন খান। তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, এই মেলা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় উপকৃত হয়েছেন। আমরা মেলা থেকে বেগুন, মিষ্টি লাউ, কুমড়া গাছের চারা ক্রয় করেছি।
চারা বিক্রেতা মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, চার শতাধিক বিভিন্ন জাতের চারা নিয়ে এসেছিলাম। সব বিক্রির পর আরো চারা নিয়ে এসেছি। চারা বিক্রেতা সিতারা বেগম বলেন, এখানে বেশি দাম-দর ছাড়া চারা বিক্রি করছি।
মেলার আয়োজনকারী ওয়াহিদা মিয়া বলেন, বিষয়টি উপলব্ধি করে বিগত দুই বছর ধরে চারা মেলার আয়োজন করে আসছি। মৌসুমের এই সময়টায় শাকসবজিতে সবার বাগান ভরে উঠুক। নিজেদের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি শাকসবজি বিক্রি করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করুক এই ভাবনা থেকে মেলার আয়োজন করেছি। এ বছর মেলায় অন্তত দুই হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে। চারা মেলাটি উৎসবে পরিণত হয়।