০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:০৭:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নিউইয়র্কে ‘ফ্লাড দ্য জোন’ অভিবাসন অভিযান : আতঙ্কে প্রবাসী সম্প্রদায়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৭-২০২৫
নিউইয়র্কে ‘ফ্লাড দ্য জোন’ অভিবাসন অভিযান : আতঙ্কে প্রবাসী সম্প্রদায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বর্ডার প্রধান টম হোমান


নিউইয়র্ক সিটিকে ‘ফ্লাড দ্য জোন’ বা ব্যাপকভাবে অভিবাসন নজরদারির আওতায় আনার হুমকির এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো পর্যন্ত সেই ধরনের বড়সড় কোনো অভিযান শুরু হয়নি। তবে প্রশাসনের হুমকির পর উদ্বেগ ছড়িয়েছে প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন-এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তা হবে নজিরবিহীন এক অভিবাসন অভিযান। হুমকিটি আসে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোমানের কাছ থেকে। তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে অতিরিক্ত সংখ্যক ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্ট পাঠানোর ঘোষণা দেন। এ সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এক সীমান্ত কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা, যেখানে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি ছিলেন অপরাধমূলক রেকর্ডধারী অনিয়মিত অভিবাসী। হোমান এ ঘটনার জন্য নিউইয়র্ক সিটির ‘সাংচুয়ারি আইন’ বা অভিবাসীবান্ধব নীতিকে দায়ী করেন।

অভিবাসী অধিকারকর্মীরা কর্মীদের মতে, ‘ফ্লাড দ্য জোন’ মানে হতে পারে শত শত আইস এজেন্ট পাঠানো, প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি, কর্মস্থল বা নির্মাণস্থলে অভিযান কিংবা এমনকি সামরিক ঘরানার উপস্থিতি। লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতিমধ্যেই এরকম একটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যেখানে প্রায় ৩ হাজার অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, নিউইয়র্কে এর চেয়েও বড় পরিসরে অভিযান হতে পারে, কারণ সদ্য পাস হওয়া অভ্যন্তরীণ নীতিমালায় অভিবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য ১৭০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ওই নতুন আইনের আওতায় ১০ হাজার নতুন আইস এজেন্ট এবং ৮০ হাজার নতুন ডিটেনশন বেড স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। যদিও এখনো নিউইয়র্ক সিটিতে স্থান সংকটের কারণে বড়মাপের ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করা সহজ নয়, তবুও প্রশাসন দ্রুত সে পরিকল্পনার দিকে এগোচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৫৬ হাজার ৮০০ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন ডিটেনশনে রয়েছে এবং প্রশাসন সেটি দ্বিগুণ করার চেষ্টা করছে।

নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার অনিয়মিত অভিবাসী বসবাস করেন বলে জানা গেছে। নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের প্রেসিডেন্ট মুরাদ আওয়াদে বলেন, আমরা যেমন প্রস্তুতি নিচ্ছি, তেমনি আমাদের কমিউনিটিগুলোকে সচেতন ও প্রস্তুত করছি। অন্যদিকে মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, শহরের কিছু আইন পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন, যেগুলো বিপজ্জনক অপরাধীদের বিচার ব্যবস্থার হাত থেকে বারবার বেরিয়ে যেতে সহায়তা করছে। তবে অধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রমে প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ভয় ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

জ্যাকসন হাইটসের ভোসেস লাতিনাস সংগঠনের সিইও নাথালি রুবিও-টোরিও বলেন, মানুষ আতঙ্কে আছে, অনেকেই আমাদের সেবা নেওয়া থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে এবং আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপদ পরিসর তৈরির চেষ্টা করছি।

অভিবাসন আইনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অভিযান আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, বিশেষ করে যেসব শহর ইতোমধ্যেই ফেডারেল আইনের বিরুদ্ধে স্থানীয় সুরক্ষা আইন জারি করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই নিউইয়র্ক সিটির এই ‘সাংচুয়ারি’ আইনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

নিউইয়র্ক সিটিতে সম্ভাব্য ‘ফ্লাড দ্য জোন’ অভিবাসন অভিযান ঘিরে উদ্বেগ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যদিও এখনো পর্যন্ত সেই অভিযান বাস্তবায়িত হয়নি, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কবে হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে প্রশাসনিক হুমকি, অতিরিক্ত তহবিল এবং রাজনৈতিক বক্তব্য প্রবাসী সম্প্রদায়ের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অভিবাসী অধিকারকর্মী, নীতিনির্ধারক এবং স্থানীয় সংগঠনগুলো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে এ অভিযান বাস্তব হলে তা শুধু অভিবাসীদের জীবনেই নয়, নিউইয়র্ক সিটির সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশেও গভীর প্রভাব ফেলবে। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও অভিবাসী সুরক্ষা নিয়ে সামনে বড় প্রশ্ন উঠে আসছে, যার উত্তর এখনো অনিশ্চিত।

শেয়ার করুন