নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক পাবলিক অ্যাডভোকেট প্রাইমারি নির্বাচনে এক অস্বাভাবিক, অসম এবং বিতর্কময় লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছেন ইমিগ্র্যান্টদের বন্ধু বর্তমান পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানে উইলিয়ামস এবং কুইন্সের অ্যাসেম্বলি সদস্য জেনিফার রাজকুমার। যদিও রাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে উইলিয়ামস অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে জেনিফার রাজকুমারের আক্রমণাত্মক প্রচার, উচ্চ তহবিল সংগ্রহ এবং জাতিগত ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল লড়াইকে আলোচনায় রেখেছে। নির্বাচনের প্রাথমিক পর্বে এ পর্যন্ত তিনটি উল্লেখযোগ্য জরিপ তথ্য সামনে এসেছে। প্রথমটি পরিচালনা করেছে পাবলিক পলিসি পোলিং (পিপিপি), যা এপ্রিল ২০২৫-এ প্রকাশিত হয়। ওই জরিপ অনুযায়ী, জুমানে উইলিয়ামস পান ৫১ ভাগ ভোটার সমর্থন, যেখানে জেনিফার রাজকুমারের সমর্থন ছিল মাত্র ৬ ভাগ। বাকিরা ছিলেন অনিশ্চিত বা উত্তর দেননি।
দ্বিতীয় জরিপটি পরিচালিত হয় রাজকুমারপন্থী একটি স্বাধীন ব্যয়কারী সংস্থা কমন সেন্স নিক নিউইয়র্ক সিটি এর পৃষ্ঠপোষকতায়। এই জরিপটি ছিল স্পষ্টতই পক্ষপাতদুষ্ট প্রশ্নভিত্তিক এবং রাজকুমারপন্থী। যদিও প্রশ্নগুলো উইলিয়ামসের দুর্বলতা তুলে ধরার কৌশলে তৈরি করা হয়েছিল, তারপরও জরিপে দেখা যায়, উইলিয়ামস এগিয়ে আছেন ১১ শতাংশ পয়েন্টে এবং প্রায় ১৮ শতাংশ ভোটার ছিলেন অনির্ধারিত। রাজকুমারপন্থীরা দাবি করেন, এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ, তবে বিশ্লেষকরা বলেন এই ব্যবধান যথেষ্ট বিস্তৃত।
তৃতীয় জরিপটি অভ্যন্তরীণ ছিল, পরিচালিত হয় জেনিফার রাজকুমারের নিজস্ব প্রচার শিবিরের পক্ষ থেকে, কিন্তু তা জনসমক্ষে পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি। রাজকুমার দাবি করেছেন, সে জরিপে তিনি আরো ভালো অবস্থানে ছিলেন, তবে প্রমাণস্বরূপ পূর্ণ ডাটা বা পদ্ধতি এখনো গণমাধ্যমের সামনে আসেনি। তহবিল সংগ্রহের দিক থেকেও রাজকুমার বেশ এগিয়ে। মার্চ ২০২৫-এর শেষ পর্যন্ত ফাইলিং অনুসারে, রাজকুমার উইলিয়ামসকে তহবিল সংগ্রহে ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি নিউইয়র্ক রাজনীতিতে একজন পরিশ্রমী প্রচারক হিসেবে পরিচিত। তিনি তার প্রচারণায় অভিনব কৌশল গ্রহণ করেছেন উইলিয়ামসকে ব্যঙ্গ করে কার্টুন প্রকাশ। এই কার্টুনগুলোতে উইলিয়ামসকে অলস, ঘুমকাতুরে, অনুপস্থিত এবং কর্মে অযোগ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকজন রাজনীতিক এসব চিত্রায়নকে বর্ণবাদী বললেও রাজকুমার তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহির আওতায় আনা বর্ণবাদ নয়।
উইলিয়ামস একজন অভিজ্ঞ বামপন্থী রাজনীতিক, যিনি ২০১৯ সাল থেকে নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার প্রধান পরিচয় একজন ‘অ্যাকটিভিস্ট ইলেকটেড অফিসিয়াল’ হিসেবে, যিনি বরাবরই সামাজিক ন্যায়বিচার, অভিবাসীদের অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার। তিনি নিউইয়র্ক সিটির অন্যতম প্রগতিশীল দুটি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন- ‘হাউ মেনি স্টপস অ্যাক্ট’ (নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কত বার নাগরিকদের থামাচ্ছে তা নথিভুক্ত ও প্রকাশ করার আইন) এবং একাকী বন্দিত্ব (সোলিটারি কনফাইনমেন্ট) নিষিদ্ধকরণ আইন। উল্লেখযোগ্যভাবে এ দুটি আইনই মেয়র এরিক অ্যাডামস ভেটো করেছিলেন, কিন্তু সিটি কাউন্সিল তা ওভাররাইড করে পাশ করায় উইলিয়ামসের প্রভাব ও জনপ্রিয়তা স্পষ্ট হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং তাদের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে নিজের অফিসকে সক্রিয় রেখেছেন, যা তার প্রগতিশীল অবস্থানকে আরো সুসংহত করেছে। অন্যদিকে রাজকুমার নিজেকে ‘লিগ্যাল পাওয়ার হাউস’ হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তিনি বলেন, আমি পাবলিক অ্যাডভোকেট অফিসকে আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণের পক্ষে একটি শক্তি করে তুলবো।
নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হলো ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ। উইলিয়ামস গাজার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এবং ইসরায়েলের নীতির সমালোচনায় ইহুদি ভোটারদের একাংশের ক্ষোভের শিকার হয়েছেন। রাজকুমার অভিযোগ করেছেন, তিনি ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেননি। তবে উইলিয়ামস বলেছেন, তিনি বারবার ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এই ইস্যুতে রাজকুমার পেয়েছেন নিলি রোজিক, স্যাম বার্গার, ও ডেভিড উইপ্রিনের মতো ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতাদের সমর্থন।
সব মিলিয়ে যদিও এই পদটি বেশির ভাগ সময় প্রতীকী ধরনের, এটি একটি রাজনৈতিক লঞ্চপ্যাডও বটে। এই পদ থেকে অতীতে বিল ডি ব্লাসিওর মতো নেতারা মেয়র হয়েছেন। তাই রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষার দিক থেকেও এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। একজন ‘অ্যাকটিভিস্ট’ ও ‘বাম ঘরানার’ প্রার্থী বনাম একজন ‘আইনি দক্ষতা সম্পন্ন মধ্যপন্থী’ রাজনীতিক- এই দ্বন্দ্বের ফলাফল ঠিক করবে নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ।
এখন পর্যন্ত প্রকাশিত সব জরিপে জুমানে উইলিয়ামস এগিয়ে থাকলেও জেনিফার রাজকুমার তার কৌশল, পরিচিতি এবং বিতর্কিত প্রচারণা-বিশেষ করে গাজার বিরুদ্ধে অবস্থানে নির্বাচনী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। শেষ পর্যন্ত এই অস্বাভাবিক ও অসম নির্বাচনী লড়াইয়ের ফল নির্ভর করবে ভোটারদের অংশগ্রহণ, জাতিগত ও ধর্মীয় ভোটব্যাংক প্রভাব এবং ইসরায়েল-গাজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রচার কৌশলের সফলতার ওপর।