জাতীয় স্পোর্টস কাউন্সিল ফারুক আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে এক সময়ের তুখোড় ক্রিকেটার ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে। আমিনুল বর্তমানে আসিসি ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করছেন। ইতিপূর্বে দীর্ঘসময় এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিলে কৃত্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। সবাই জানেন, আমিনুল তাঁর অনন্য প্রতিভা, কর্মনিষ্ঠা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে একটি স্থান অর্জন করেছেন। ব্যক্তিগত যোগাযোগের কারণে জানি আমিনুলের সংস্পর্শে আফগানিস্তান, ওমান, ইউএই, নেপাল, চীনের ক্রিকেট অঙ্গনে পরিবর্তনের সুবাতাস বইছে। আমিনুল কোচ এবং আম্পায়েরদের প্রশিক্ষণ কাজে সম্পৃক্ত আছেন। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমিনুল বিসিবির বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বল্প সময়ে কতটা পরিবর্তন আনতে পারবেন সেটি আগ্রহের সঙ্গে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি প্রাক্তন অধিনায়ক এবং একসময়ের প্রধান নির্বাচক ফারুখ আহমেদকে সরকার পরিবর্তনের পর জাতীয় স্পোর্টস কাউন্সিল তাদের কোঠায় পরিচালক নির্বাচন করেছিল। স্মরণে থাকতে পারে বিসিবি গঠনতন্ত্র্রের সংস্থান অনুযায়ী সংস্থাটির পূর্ববর্তী বোর্ডে জালাল ইউনূস এবং সাজ্জাদুল আলম ববি জাতীয় স্পোর্টস কাউন্সিল মনোনীত পরিচালক ছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের স্থানে নাজমুল আবেদীন ফাহিম এবং ফারুক আহমেদকে মনোনয়ন দেয়। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচিত সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন পরিচালক পদত্যাগ করেন। এমতাবস্থায় অবশিষ্ট পরিচালকবৃন্দ সম্মিলিতভাবে ফারুক আহমেদকে সভাপতি মনোনীত করে। বিগত সময়ে ফারুক নেতৃত্বের সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়, দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে। বিসিবির তহবিল বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কিছু ব্যাংকে একক সিদ্ধান্তে হস্তান্তর, বিপিএল ২০২৫ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ। এবার অবশ্য ৮ জন পরিচালক সম্মিলিতভাবে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। এতেই সুযোগ হয়েছে আমিনুলকে সভাপতি করার বিষয়।
এখানে সরকার সব কিছু আয়োজন করেছে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই। এতে করে আইসিসি সাধুবাদ জানিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেটের মান ছিল নিম্নমুখী। এটা উদ্বেগজনক আইসিসির জন্য। বুলবুলকেও বেশ ভালোই চেনা আইসিসির। তার কাছে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রন আইসিসিও ভেতরে ভেতরে ভীষণ খুশি। কোনো সন্দেহ নেই এ মুহূর্তে সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি বাংলাদেশে নেই। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আমিনুল তার অভিজ্ঞতা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ এবং দেশপ্রেম দিয়ে ক্রিকেটের কঠিন সময়ে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারবেন বলে আবিশ্বাসের ছাপ সর্বত্র।
বুলবুলের আত্মবিশ্বাস
দায়িত্ব গ্রহণের পর শুভেচ্ছায় ভাসছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এরই মধ্যে ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন ক্রিকেটের প্ল্যান পরিক্রমা নিয়ে কথা বলতে। বুলবুল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাদের ডেকেছিলেন। তার উদার চিন্তাধারা আমাকে অভিভূত করেছে। আমাদের লক্ষ্য এখন ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ। তিনিও এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে শতভাগ একমত। তিনি বলেছেন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সার্ভিস সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের নিজেদের জন্য একটি চার্টার্ড পরিকল্পনা তৈরি করেছি, যেটির সঙ্গে তার ধারণা শতভাগ মিলে গেছে। এতে আমরা অত্যন্ত খুশি।’
বুলবুল বলেন, ‘আমরা আমাদের পরিকল্পনায় ক্রিকেটকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। যেন গ্রামের প্রতিভাবান এক খেলোয়াড় উপজেলা, সেখান থেকে জেলা, তারপর বিভাগীয় পর্যায় পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে উঠতে পারে। আমরা সেই পথ তৈরি করছি।’ স্কুল ক্রিকেটের পুনর্বিন্যাস, পারফরম্যান্সে উন্নতির আশা দেখছেন নতুন বোর্ড সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা স্কুল ক্রিকেটকে নতুনভাবে সাজাচ্ছি। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স উন্নত হবে। সেখান থেকে হাই পারফরম্যান্স ক্রিকেটারের জোগানও বাড়বে।’
বর্তমানে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স নিম্নমুখী হলেও আশা হারাচ্ছেন না বুলবুল, ‘পারফরম্যান্স গ্রাফ তো সব সময় ওপরে-নিচে যায়। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সবার ক্ষেত্রেই সত্যি। আমি মাত্র দুই দিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। পুরো চিত্রটা একটু দেখে নিই, তারপর বিশ্লেষণ করা যাবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, সঠিকভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের পারফরম্যান্স আবার উন্নতির পথে যাবে।’
আইসিসি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন বুলবুল। তিনি বলেন, ‘আইসিসির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো। কোনো বিরোধ থাকলে তারা আমাদের জানাতো। এখন পর্যন্ত তেমন কিছু শোনেনি।’
দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্রিকেটারদের সঙ্গে সরাসরি এখনো কথা হয়নি বললেন বুলবুল, ‘আমাদের একজন পরিচালক এখন পাকিস্তানে আছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম ভাই। তিনি বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে ক্রিকেটারদের ওপর কোনো চাপ দিতে চাই না। আমার কাজ হচ্ছে পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলা। সময় হলে ক্রিকেটারদের সঙ্গেও অবশ্যই বসবো।’
এ মুহূর্তে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ব্যস্ত। সে কারণেই এখনই তাদের সঙ্গে আলোচনায় না যাওয়াকেই ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তিনি। বললেন, ‘টুর্নামেন্টের মাঝপথে তাদের পরিকল্পনার মাঝে না যাওয়াই ভালো। সময় মতো আলোচনা হবে।’