০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৫:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমেজে একের পর এক নতুন দল : বিভাজন না অন্য কিছু
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৫
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমেজে একের পর এক নতুন দল : বিভাজন না অন্য কিছু শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গণভবনে ছাত্র-জনতার উল্লাস


আরেকটি নুতন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে এই রাজনৈতিক দলটি এপ্রিলে আত্মপ্রকাশ করার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের নিয়ে একের পর নতুন দলের খবরে নতুন নতুন প্রশ্নও দেখা দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে একের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ছাত্রদের নিয়ে নতুন দল কি দেশ গঠনে? না নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে আত্মপ্রকাশ হচ্ছে। না-কি এমন বার্তা দিচ্ছে যে তাদের নিজেদের মধ্যে মতভেদ, মতদ্বৈতা এখন চরমে? 

কি হবে নতুন দলের এজেন্ডা?

গণমাধ্যমের খবরে দেখার যায় যে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা আলী আহসান জুনায়েদ ফেসবুক পোস্টে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আনার ঘোষণার সঙ্গে একটি পোস্টার তুলে দিয়েছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের আগে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক দুই নেতা আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত। সরকার পতনের আন্দোলনে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে আসে। সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিতে তারা ভালো পদ পাননি। এমন পরস্থিতিতে তারা এনসিপি’তে না থাকার কথা জানান। আর তার অল্প কয়েকদিন পরেই এবার তাদেরই নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। দল গঠনের ব্যাপারে তাদের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা হচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের আকাংখার জায়গাটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সেটাকে বাঁচিয়ে রাখতেই তাঁদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে থাকবেন তারা।

নতুন নতুন দল গঠন নিয়ে বির্তক যে কারণে

দলটির সর্ম্পকে প্রাথমিক খবরে জানা গেছে যে এরা ২০২৪‘এর জুলাইয়ে যে অভূতপূর্ব ঐক্য তৈরি হয়েছিল, সেটাকে ধরে রাখতে নতুন প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা থেকে দলটি গঠন করতে যাচ্ছে। তবে আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের একাংশের উদ্যোগে একটি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। এই প্লাটফর্মে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী জামায়াতের অঙ্গসংগঠন শিবির ‘ট্যাগিং’-এর কারণে এনসিপিতে অনেকের জায়গা হয়নি। কারো কারো মতে, সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুত ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ পূরণের সম্ভাবনা না থাকায় এনসিপিতে যোগ দেননি তারা। আর এজন্য বলা হচ্ছে বঞ্চিতদের নিয়ে হবে নয়া প্লাটফর্ম। আবার বলা হচ্ছে নতুন দলটি দলটির গঠনেও সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে একের পর এক ফ্রন্ট কেনো?

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের আগে অনেক আশার বাণী শোনানো হয়েছিল। এখনো যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র সে আশা আকাংখার জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে তা মনে করেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ও এদের আপোষহীন লড়াইয়ের ফসল হচ্ছে ২০২৪‘এর জুলাই। যে-ই ফসল তুলতে তারা একসাথে মরণপন লড়াই করেছিল। এবং একসাথে দেশকে গড়ার শপথ নেয়। কিন্তু বর্তমানে বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। ২০২৪‘এর জুলাইয়ে সে-ই চেতনা এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া খোদ প্রথম সারির নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। কারো কারো মতে, দেশ গড়ার চেতনা খান খান হয়ে তা এখন ব্যক্তি স্বার্থের দিকেই ছুটছে। আবার বিপরীত খবর হলো নানান ধরনের কোন্দল-ও দেখা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের মধ্যে। প্রায় প্রতিদিনই হাতাহাতি মারামারির খবরই আসছে। কারো কারো গায়ে দামি পোশাক, কেউ কেউ চড়ছেন বিলারবহুল গাড়িতে-যা নিয়ে নানান কৌতুহল। আর এমন পরিস্থিতিতেই গঠন করা হচ্ছে একের পর এক ফ্রন্ট। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কৌতুহল সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করছে কারা? বা করার চেষ্টা করছে? এমন পক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত কারা? বিষয়টি অনেক রাজনীতিবিদদের চোখও এড়ায়নি। তা-ইতো বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী’র কন্ঠে বলতে শোনা যায় ‘গত ১৫ বছর ১৬ বছরের আন্দোলন আর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করা হচ্ছে। রুহুল কবির রিজভী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমি উপদেষ্টা সাহেবদেরকে বলব- আপনারা এ ১৫ বছর ১৬ বছরের আন্দোলন আর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করছেন কেন? এটা তো সব রক্তস্রোত একই সমুদ্রের মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে। মোহনার এ মিলিত স্রোতেই শেখ হাসিনা আজকে পালিয়ে গেছেন।’ 

রিজভীর এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন হচ্ছে নতুন নতুন ফ্রন্ট তাহলে কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনাকে ধবংস বা চিরতরে শেষ করে দিতে কারো গোপন তৎপরতা? তাহলে কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যনারে জুলাই-আগস্টে শিশু-তরুণ-কিশোররা যে জীবন দিয়েছে তা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাবে? এমন বিভাজনের প্রেক্ষাপটে সামনে কি হতে যাচ্ছে তা-ই দেখার বিষয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

শেয়ার করুন