৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৩৮:৩৩ অপরাহ্ন


নিউইয়র্ক সিটির আবাসন সংকট সমাধানে মেয়র প্রার্থীদের পরিকল্পনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২৫
নিউইয়র্ক সিটির আবাসন সংকট সমাধানে মেয়র প্রার্থীদের পরিকল্পনা নিউইয়র্ক সিটি


নিউইয়র্ক সিটি এক গভীর আবাসন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ৬০ বছরের মধ্যে শহরের খালি অ্যাপার্টমেন্টের হার এখন সর্বনিম্ন। রেন্টের দাম বেড়েই চলেছে, আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে এবং নতুন বাড়ি নির্মাণের গতি চাহিদার তুলনায় অনেক পিছিয়ে। এই পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালের মেয়র নির্বাচনে প্রার্থীরা আবাসন সংকটকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং ভোটারদের কাছে একেকজন তুলে ধরেছেন নিজেদের সাহসী পরিকল্পনা।

জোহারান মামদানি, কুইন্স থেকে নির্বাচিত প্রগ্রেসিভ অ্যাসেম্বলি সদস্য, ২ লাখ ভর্তুকিপ্রাপ্ত আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা পেশ করেছেন। তার লক্ষ্য পরিবারের বার্ষিক আয় ৭০ হাজার ডলার বা তার কম হলে যেন তারা এই ঘরে থাকতে পারে। এই পরিকল্পনার মোট খরচ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার যা অন্যসব প্রার্থীর পরিকল্পনার চেয়ে অনেক বড় এবং অর্থায়নের দিক থেকে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী।

ডেমোক্রে‍টিক প্রাইমারির অন্যতম প্রার্থী ব্রুকলিনের স্টেট সিনেটর জেলনর মাইরি বলছেন, শহরের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কত দ্রুত ও ব্যাপকভাবে ঘর তৈরি করা যায় তার ওপর। তিনি ১০ বছরে ১০ লাখ নতুন অথবা সংরক্ষিত ইউনিট তৈরি করতে চান। তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- মিডটাউন ম্যানহাটন ও ব্রুকলিন মেরিন টার্মিনালে সম্পূর্ণ নতুন আবাসিক পাড়া গড়ে তোলা। মাইরি শুধুই নির্মাণ নয়, বরং কম আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ও স্থায়ী ঘর নিশ্চিত করতে চান, যাতে শহরের ট্যাক্স আয় ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস, সিটি কাউন্সিলের স্পিকার, তার পরিকল্পনায় ৫ লাখ ঘর তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি কুইন্সের একটি পুরোনো রেসট্র‍্যাককে পুনঃউন্নয়নের মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় রূপান্তর করতে চান। তিনি শহরের প্রতিটি বরোর নেতাদের বোঝাতে পেরেছেন যেন তারা নিজেদের এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন, যা তার রাজনৈতিক কৌশলের প্রমাণ বলে গণ্য হচ্ছে।

ব্র‍্যাড ল্যান্ডার, নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার, তার পরিকল্পনায় ৫ লাখ ইউনিট নির্মাণের লক্ষ্য রেখেছেন এবং ১০ বছরে শহরের আবাসন ব্যবস্থায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলেছেন। তার দৃষ্টিভঙ্গিতে গলফ কোর্স, স্কুল ও গ্রন্থাগারের ওপর নির্মাণ সম্ভব। তিনি গাওয়ানাস এলাকার বিতর্কিত উন্নয়ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা সামনে তুলে ধরেছেন।

মাইকেল ব্লেক, প্রাক্তন স্টেট অ্যাসেম্বলি সদস্য, তার পরিকল্পনায় ৬ লাখ নতুন ইউনিট নির্মাণের কথা বলেছেন। তিনি শহরজুড়ে পরিত্যক্ত ও কম ব্যবহৃত জমি উন্নয়নের মাধ্যমে নির্মাণ চান।

প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো, যিনি এখন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে এগিয়ে আছেন, তিনিও ৫ লাখ ঘর তৈরির পক্ষে। তবে তিনি নিম্ন-ঘনত্বের এলাকাগুলোকে আরো উন্নয়ন না করে শহরের উচ্চ-ঘনত্বপূর্ণ এলাকাকে প্রাধান্য দিতে চান। তিনি বলেন, যে এলাকায় সম্প্রতি পুনঃজোনিং হয়েছে, আগে সেসবের ফলাফল দেখা উচিত। কুমো তার সময় প্রভাবশালী রিয়েল এস্টেট লবির সঙ্গে কাজ করে আইন পাস করিয়েছেন এবং প্রগতিশীলদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তিনি অতীতের বিতর্কিত ট্যাক্স ইনসেনটিভ প্রোগ্রাম পুনরায় ফিরিয়ে আনার পক্ষে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক ফেডারেল প্রসিকিউটর জিম ওয়ালডেন পরিত্যক্ত সরকারি জমি, যেমন ব্রক্সের বারটো স্টেশন ও কুইন্সের নেপনসিট হেলথ কেয়ার সেন্টারকে আবাসিক প্রকল্পে রূপান্তরের পরিকল্পনা করছেন। তিনি চান নতুন নির্মাণের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ঘর কম আয়ের মানুষের জন্য সংরক্ষিত হোক।

বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, যিনি আবারও স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছেন, তার ‘সিটি অব ইয়েস’ পরিকল্পনার মাধ্যমে আগামী দশকে ৮০ হাজার নতুন ঘর তৈরির পথ তৈরি করেছেন। তিনি মনে করেন, এটি সাহসী ও ভবিষ্যৎপ্রসারি পদক্ষেপ, যা আজ ও আগামী প্রজন্মের জন্য কাজে আসবে।

স্কট স্ট্রিঙ্গার, প্রাক্তন সিটি কম্পট্রোলার, তার অতীত কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তিনি ম্যানহাটনের বোরো প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ওয়েস্ট হারলেমসহ কয়েকটি এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি বলেন, ঘর শুধু বানানোর জন্য নয়, যারা সবচেয়ে বেশি দরকার তাদের জন্য বানাতে হবে। জেসিকা রামোস, ডেমোক্রেটিক স্টেট সেনেটর, রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া যেন না বাড়ে তা নিশ্চিত করতে রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ডের ওপর প্রভাব রাখতে চান, যেমনটা মামদানি, ল্যান্ডার, মাইরি এবং অন্যরাও বলেছেন।

এদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া বলছেন, ভর্তুকিপ্রাপ্ত আবাসনের ভাড়া এমনভাবে নির্ধারিত হওয়া উচিত, যাতে নিউইয়র্কবাসীর দৈনন্দিন অর্থনৈতিক বাস্তবতা যেমন- ঋত, বিদ্যুৎ বিল, চিকিৎসা খরচ বিবেচনায় থাকে।

সব পরিকল্পনাই বাস্তবায়নে নির্ভর করবে সিটি কাউন্সিল, স্টেট লেজিসলেচার ও ফেডারেল সরকারের সহযোগিতার ওপর। বেশির ভাগ প্রার্থী নির্দিষ্টভাবে বলেননি তারা এই প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ কোথা থেকে আনবেন, যদিও কিছুজন রাজস্ব থেকে, আবার কেউ কেউ ট্যাক্স ইনসেনটিভ বা সরকারি ভর্তুকির কথা বলেছেন।

তবে এক বিষয়ে সবাই একমত। নিউইয়র্ক সিটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আবাসন সংকট কত দ্রুত ও কত কার্যকরভাবে সমাধান করা যায় তার ওপর। এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেই দিকেই এক নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

শেয়ার করুন