যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অর্থবিলে মধ্যবিত্ত ও খণ্ডকালীন শ্রমজীবীদের জন্য বড় ধরনের করছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। বিলটি অনুযায়ী, করদাতারা এখন থেকে বছরে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত বকশিশ (টিপস) এবং সাড়ে ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ের আয় (ওভারটাইম) করমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করতে পারবেন। ফলে বার্ষিক সর্বোচ্চ সাড়ে ৩৭ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করের আওতার বাইরে থাকবে। এই করছাড় মূলত খাবার সরবরাহ, রেস্টুরেন্ট, বার, হোটেল, ট্যাক্সি ড্রাইভার, ও খুচরা বিক্রেতা খাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে। কারণ এই খাতে কর্মরতরা প্রায়শই বকশিশ ও অতিরিক্ত সময়ের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। ২০২৫ করবর্ষ থেকেই এই সুবিধা কার্যকর হবে এবং ২০২৮ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে উচ্চ আয়ের করদাতারা ধাপে ধাপে এই সুবিধা থেকে বাদ পড়বেন। অর্থাৎ নির্ধারিত একটি আয়সীমার ওপর যাদের বার্ষিক আয়, তারা পুরো করছাড়টি উপভোগ করতে পারবেন না।
এই সুবিধাটি মাসিক আয় বাড়াবে না। বরং বছরে একবার ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট আয়কর ফর্মে উল্লেখ করে করছাড় হিসেবে গ্রহণ করা যাবে। ফলে এটি কর রিফান্ডের পরিমাণ বাড়িয়ে করদাতাদের কিছুটা আর্থিক স্বস্তি দিতে পারে। অর্থবিলটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো স্ন্যাপ বা খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির জন্য নতুন যোগ্যতা নির্ধারণ। এখন থেকে ৬৫ বছরের নিচে কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্কদের মাসে অন্তত ৮০ ঘণ্টা কাজ, স্বেচ্ছাসেবা বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই বিধিনিষেধের ফলে আগামী এক দশকে স্ন্যাপ খাতে প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় সাশ্রয় হবে।
বিলটির লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে কর্মক্ষম নাগরিকদের শ্রমবাজারে সক্রিয় রাখা। তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই নিয়ম সমাজের প্রান্তিক ও নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করবে এবং তাদের সহায়তা পাওয়ার পথ কঠিন করে তুলবে।
নতুন বাজেট বিলের আওতায় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে বিপুল অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)-এর জন্য ২ বিলিয়ন ডলার, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর জন্য ২৯.৯ বিলিয়ন ডলার এবং ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া মহাকাশ গবেষণা, পারমাণবিক প্রতিরোধ এবং যুদ্ধজাহাজ নির্মাণেও কয়েক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এই বিল নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দ্বিধাবিভক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ডেমোক্র্যাটরা করছাড়ের অংশটিকে মধ্যবিত্তের জন্য ‘সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানালেও স্ন্যাপের কঠোর শর্তকে ‘সহানুভূতিশূন্য’ বলে সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা বলছেন, এটি সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং করদাতাদের আর্থিক স্বস্তি দেওয়ার একটি বাস্তবমুখী উদ্যোগ।
অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের মতে, করছাড়ের এই সিদ্ধান্ত পরিষেবা খাতে শ্রমিকদের কাজের আগ্রহ বাড়াতে সহায়ক হবে। তবে স্ন্যাপ সংক্রান্ত শর্ত কঠোর হওয়ায় সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য তা চাপ সৃষ্টিকারী হতে পারে। সার্বিকভাবে, নতুন অর্থবিলটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা খাতের নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনছে। করছাড় মধ্যবিত্তের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও সামাজিক সহায়তা খাতে কড়াকড়ি নিয়ে বিতর্ক এবং রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
সোশ্যাল সিকিউরিটির করছাড় পুরোপুরি বিলুপ্ত করেনি নতুন বিল
মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া সাম্প্রতিক ‘ওয়ান বিগ, বিউটিফুল বিল’ আইনটি সোশ্যাল সিকিউরিটির ওপর কর পুরোপুরি তুলে নেয়নি। তবে এই আইন অনুসারে ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব প্রবীণদের জন্য অতিরিক্ত ৬ হাজার ডলার করছাড়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। আইনের শর্ত অনুযায়ী, একক করদাতাদের বার্ষিক আয় হতে হবে ৭৫ হাজার ডলার বা তার কম এবং যুগ্ম করদাতাদের জন্য আয়সীমা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা তার কম। এই সীমার ওপরে গেলে ধাপে ধাপে কর ছাড়ের পরিমাণ কমে যাবে।
তবে কংগ্রেস যদি করছাড় সংক্রান্ত বিধানগুলো সম্প্রসারণ না করে, তাহলে আগামী ২০২৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেয়াদ শেষে এই সুবিধাগুলো বাতিল হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন থেকে এই বিষয়ে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রবীণরা আশা করছেন, করছাড়ের এই সুবিধাগুলো দীর্ঘমেয়াদি হবে এবং তাদের আর্থিক নিরাপত্তায় সহায়তা করবে।