৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৫৭:৪৭ অপরাহ্ন


ধর্মীয় নেতারা এখন উপাসনালয়ে প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারবেন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৭-২০২৫
ধর্মীয় নেতারা এখন উপাসনালয়ে প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারবেন


ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস) গত ৭ জুলাই একটি নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘোষণা করেছে, এখন থেকে ধর্মীয় নেতারা তাদের উপাসনালয়ে সরাসরি রাজনৈতিক প্রার্থীদের সমর্থন জানাতে পারবেন, তবুও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর করমুক্ত সুবিধা অক্ষুণ্ন্ন থাকবে। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে উপাসনালয়ে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করলে সে করমুক্ত সুবিধা বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকতো। এ সিদ্ধান্ত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে, যেখানে প্রার্থীরা এখন সরাসরি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে নতুন এ সিদ্ধান্ত ঘিরে নিউইয়র্ক সিটির ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ অনুমতি রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপের দরজা খুলে দিতে পারে এবং উপাসনালয়গুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য এবং ডেমোক্রেটিক দলের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি সম্প্রতি হারলেমে রেভারেন্ড আল শার্পটন আয়োজিত এক সমাবেশে অংশ নিয়ে বাইবেলের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, রাত্রিতে কান্না থাকতে পারে, কিন্তু সকালে আনন্দ আসে। একটি বার্তা যা ব্ল্যাক চার্চসমূহে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আইআরএসের নতুন নীতিমালার ফলে, এখন তিনি এবং অন্যান্য মেয়র প্রার্থীরা ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে সমর্থন পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন, কর আইনের কোনো ঝুঁকি ছাড়াই। যদিও এখনো কোনো পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করা হয়নি। বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতা রেভ. এআর বার্নার্ড সতর্ক করে বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত যাজকদের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আমি উদ্বিগ্ন, ধর্মপ্রচারকরা যদি প্রার্থীদের পক্ষে কথা বলেন, তাহলে ধর্মীয় পবিত্রতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও আইআরএসের এ সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক বড় পরিবর্তন না-ও আসতে পারে, এটি রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় নেতাদের মাঝে সম্পর্কের নতুন এক দিক উন্মোচন করতে পারে। আগে যেসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ‘জনসন সংশোধনী’ নামে পরিচিত আইনের আওতায় রাজনৈতিক সমর্থন থেকে বিরত থাকতো, এখন তারা কার্যত সে বাধা থেকে মুক্ত।

নিউইয়র্কের বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো, দুজনই অতীতে ব্ল্যাক চার্চ ও সিনাগগের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমর্থন পাওয়ার কৌশল কাজে লাগিয়েছেন। এরিক অ্যাডামস ব্ল্যাক খ্রিস্টানদের মধ্যে ব্যাপক জনসংযোগ গড়ে তুলেছিলেন, এমনকি দুর্নীতির অভিযোগের পরও তিনি চার্চের মঞ্চ ব্যবহার করে নিজের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির মসজিদ ও ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টারগুলোর মধ্যে তার সমর্থন বাড়াতে সক্রিয় ছিলেন।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনসের নিউইয়র্ক শাখার নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাসের বলেন, এ নীতির ফলে মসজিদগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের মুসলিম সম্প্রদায় রাজনীতিতে আরো সক্রিয় এবং সচেতন হচ্ছে। তবে অনেকে এখনো এই নীতির প্রয়োগ ও ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। রেভ. আল শার্পটন বলেন, এ আইনের আরো স্পষ্টতা দরকার। আমরা আরো আইনি পদক্ষেপ বিবেচনা করছি, যাতে নির্দিষ্ট ‘গার্ডরেল’ নির্ধারণ করা যায়। এ নতুন আইআরএস নীতির ফলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও প্রার্থীদের সম্পর্ক কতটা বদলাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে এটি স্পষ্ট যে, নিউইয়র্ক সিটির ধর্মীয় অঙ্গনে এটি এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

শেয়ার করুন