২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৪২:২০ পূর্বাহ্ন


প্রিয় ফরম্যাটে ক্যারিবিয়দের বাংলাওয়াশ
জয় জয়ের জননী
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৭-২০২২
জয় জয়ের জননী


প্রত্যাশায় ছিল টেষ্ট ও টি-২০ এর ব্যার্থতাটুকুতে কিছুটা হলেও আড়াল করা যায় কি-না। আপাতত সেটাতে সফল। নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে ওয়েস্টইন্ডিজকে তাদের মাটিতে বাংলাওয়াশ করেছে তামিমরা। গায়ানায় প্রভিডেন্স মাঠে উপর্যুপুরি তৃতীয় ওডিআই’র এ ম্যাচে ৪ উইকেটে জয়ী হয়ে স্বাগতিক দলের বিরুদ্ধে। ফলে এটা বাংলাদেশের উপর্যুপুরি চতুর্থ ওডিআই  সিরিজ জয়। এছাড়ও ধারবাহিক ভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১১ ওডিআই  জয়। ক্রিকেট বিশ্ব আবারো দেখলো অন্তত ওডিআই ফরম্যাটে বাংলাদেশ যে কোনো দলের জন্য আতঙ্কের নাম। নিজেদের দিনে যে কোনো দলের সঙ্গে চোখ রেখেই কথা বলে এখন তারা।

রাত জাগা পাখির চোখে আবারো আনন্দ উল্লাস। সাবাস বাংলাদেশ  দলকে । সাবাস তামিমকে। তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সাগরে দক্ষ নাবিক হয়ে সঠিক দিক দর্শনে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সিরিজ জয় করা। সাবাশ বাংলাদেশের তরুণ বর্তমান প্রজন্মের নাসুম , মেহেদী ,সোহানদের।  দক্ষিণ আফ্রিকাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজেকে ওদের মাঠে হারানোয় কৃতিত্ব বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। সাকিব ,মুশফিক নেই ,সাইফুদ্দিন আসতে পারেনি। ইয়াসির এসেও খেলতে পারে নি। এর পরেও এভাবে সিরিজ জয় বিশাল অর্জন। 

সাবাস বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ জলে পুড়ে ছারখার হলেও মাথা নোয়ায় না। হৃদয়ে গভীর ভাবে ধারণ করি জয় জয়ের জননী।  সদ্য শেষ হওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিপর্যস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রয়োজন ছিল একটি মাত্র জয়ের। টেস্ট সিরিজ ধবল ধোলাই আর টি- ২০ সিরিজ বিপর্যয়ের পরেও আশার প্রদীপে সলতে নিভু  নিভু জ্বলছিল নিজেদের প্রিয় ওডিআই সিরিজে ব্যাঘ্র বিক্রমে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। প্রতিশ্রুতি মতোই প্রথম দুই ম্যাচ অনায়েসে  জয় করে সিরিজ নিজের করে নিয়েছিল। আজ দেখার ছিল। 

এ সিরিজে পর পর তৃতীয় বার টস জিতলো তামিম। স্পিন সহায়ক উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিং করতে পাঠানো অনুমিত ছিল। দলে বিজয় থাকলে খুশি হতাম। হয়তো তরুণ শান্তকে আশাহত করতে চায়নি টীম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তার পরেও অভিজ্ঞ বিজয়কে যখন দলে নেয়া হয়েছে ওকে সুযোগ দেয়া উচিত ছিল। তাজুল সুযোগ পেয়েই জাত চিনিয়েছে।  আমি মনে করি তাইজুল দলের সবচেয়ে আন্ডার রেটেড বোলার। যে উইকেটে স্পিন সহায়তা থাকে সেখানে তাইজুল যেই কোনো ফরম্যাটেই উইকেট টেকিং বলার। বাংলাদেশের সাঁড়াশি স্পিন আক্রমণের মুখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং সামর্থ পর্যাপ্ত ছিল না। নিয়মিত বিরতিটিতে বাংলাদেশ স্পিনার্সরা উইকেট তুলে নিয়েছে। এর মাঝেও নিকোলাস পুরান খেলেছে চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যানের মতো।  ওর ৭৩ রান এবং তরুণ কার্টির সঙ্গে ৬৭ রান দলকে লড়াই করা পুঁজি এনে দেয়। তাইজুলের ৫/২৮,নাসুম ২/৩৯ ,মুস্তাফিজ ২/২৪ দাঁড়াতেই দিলো না। 

তবে এই উইকেটে ১৭৮ চেজ করার চ্যালেঞ্জ ছিল। এই ধরণের লম্বা সফর শেষে কিছুটা জড়তা আসে। বাংলাদেশ কিন্তু লক্ষের প্রতি অবিচল ছিল। উইকেটে কিন্তু যথেষ্ট টার্ন ছিল। শান্ত তার উপর রাখা আস্থার প্রতিদান দিতে পারে নি। ১৩ বলে ১ রান করা ইনিংসে জড়তা ছিল। কি ক্ষতি হতো বিজয়কে সুযোগ দিলে। তামিম (৩৪) ছিল স্বীয় ভূমিকায় দেদীপ্যমান , লিটন (৫০)  আবারো প্রমান করলো বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান হবার পথে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ওদের যোগাযোগে ৫০ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি জয়ের ভীত গড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু সহায়ক উইকেটে ভালো বোলিং করছিলো স্থানীয় তরুণ গুরুকেশ মতি আর আলজারি জোসেফ। ১১৬/৫ উইকেট পতনের পর চাপ হয়েছিল কিছুটা। ধীর স্থির রিয়াদ ক্রমাগত ভালো খেলতে থাকা সোহানকে সঙ্গী করে ৫ম উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দেয়। রিয়াদ ২৬ রানে ফায়ার গেলেও সোহান (৩২*) এবং মেরাজ ( ১৬*) অবিচ্ছিন্ন ৩২ রান করে জয়ের বন্দরে ভাড়ায় বাংলাদেশের রণতরী। 

আমি মনে করি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। বাংলাদেশের অর্জনগুলো সসংহত করতে হবে। বাংলাদেশ জয়ের মোমেন্টাম ধরে রেখে যদি জিম্বাবুয়েতে আরো একটু গুছিয়ে নিতে পারে এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টে সুযোগ পাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপে ফেলতে। 

নাসুম ,লিটন,সোহান ,মেরাজ সিরিজে প্রাপ্তি। ভুলে গেলে চলবে না ওডিআই উইকেট গুলো বাংলাদেশের মতোই ছিল। তবুও বাংলাদেশ যেভাবে ব্যাটিং বোলিং করে নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফায়ার পেয়েছে সেটি সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা হবে বলেই মনে করি।


শেয়ার করুন