১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:৫৩:০৫ অপরাহ্ন


জনরোষ বিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৮-২০২২
জনরোষ বিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে


সাতক্ষীরা থেকে সিরাজগঞ্জ। গত সপ্তায় দেশের একটা বিশাল অংশ চষে বেড়িয়েছি। দুবার করে পদ্মা সেতু ও যমুনা সেতু পেরিয়েছি। ব্যাপক জনগণের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশেছি, জনজীবনের সুখ- দুঃখ নিয়ে আলোচনা করেছি। উন্নয়ন সম্ভাবনা সম্মক উপলব্ধি করতে চেষ্টা করেছি। সামগ্রিকভাবে মনে হয়েছে নিত্য প্রয়োনীয় দ্রব্যাদি সামগ্রিক মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে, শাসক গোষ্ঠীর প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যাবস্থাপনা নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সবার মাঝে। প্রচন্ড গরমের মাঝে ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোড শেডিং, জ্বালানি সংকট অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।অভিঘাতে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুর সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবন অসহনীয় করে তুলেছে। ক্রমশ ফুসছে মানুষ। ব্যাপক অস্বস্থি।


বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সহ প্রতিটা বস্তর দাম যদি হঠাৎ করেই আকাশ ছোয়া হয়ে যায়- মানুষ কিভাবে সেগুলো সামাল দেবে। মানুষের আয় রোজগার বাড়েনি। খরচটা বেড়েছে প্রায় দিগুণ। এক শ্রেণীর মুনাফালোভীদের কারণে এ অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। জ্বালানী তেলের সঙ্গে যুক্ত দ্রব্যাদির যতটুকু বাড়ার সেটুকু না হয় ঠিক আছে কিন্তু অতিরিক্ত বৃদ্ধি এটা সবার কাছেই অস্বাভাবিক। এ ব্যাপারে সঠিক তদারকির ভীষণ অভাব। যার যা ইচ্ছে বৃদ্ধি করছে দাম। মানুষ প্রতিনিয়ত নাজেহাল হচ্ছে। বসচা হচ্ছে। এতে জনরোষ তৈরি হচ্ছে একটু একটু করে। যা জন বিস্ফোরণে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

খুব সকালে কলাবাগান থেকে বিলাসী বাহনে চড়ে পদ্মা সেতু পেরিয়ে বৃহত্তর ফরিদপুর, বাগেরহাট, খুলনা পেরিয়ে সাতক্ষীরা পৌঁছানো ছিল স্বস্তিদায়ক।  বিশেষত দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোর ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা পরিবেশ মোহনীয় ছিল। দেখলাম বিপুল বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সবুজ উন্নয়নের এক ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সড়ক যোগে ভ্রমণ আরামদায়ক হলেও সড়ক সংলগ্ন স্থানে আন্তর্জাতিক মানের মানসম্মত স্বাধসম্মত বিশ্রামাগার বা খাবার হোটেল এখনো সেভাবে গড়ে উঠেনি। ব্যাপক অঞ্চল উন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও এখনো বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রাপ্তি নিশ্চিত না হওয়ায় ভারী, হালকা শিল্প কারখানা তেমন গড়ে উঠেই নি। 

আর তাই ব্যাপক জনগোষ্ঠী এখনো শহরগুলো থেকে নিত্য মহানগর যাতায়াত করছে। কিছু কিছু অঞ্চলে দেশের প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জমি কেনার লক্ষণ দেখা গেলেও সেখানে পরিবেশ সম্মত সবুজ শিল্পায়নের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সবাই মনে করছে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প কারখানাসমূহের বিস্তার ঘটে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল যেন ঢাকা, চট্টগ্রাম বা অন্যান্য বড় শহরগুলোর মতো ইট পাথরের জঙ্গলে পরিণত না হয়।  ভাঙা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে নিচু ভূমি, জলাশয়ে ব্যাপক মাছ চাষ হচ্ছে, সবজি,ফল চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। কিন্তু সেই তুলনায় দাম কিন্তু সহনীয় পর্যায়ে নেই। হয়তো যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে শহর গ্রামের উৎপাদিত দ্রব্যাদি মহানগরগুলিতে চলে যাওয়া সহজতর হওয়ায় এবং জ্বালানি উচ্চমূল্যের কারণে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিট মানুষগুলোর সঙ্গে আলাপ করে মনে হয়েছে সবাই একধরনের অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগে সময় কাটাচ্ছে।

আমি গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চলের সরকারি কর্মকর্তা, সাধারণ জনসাধারণের সঙ্গে আন্তরিকভাবে আলোচনা করেছি। সবাই দেশে বিরাজমান বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দিনে রাতে মিলিয়ে অন্তত চারবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কথাও সময় মাফিক নিয়ম মেনে লোড শেড়িং-এর কথা শুনিনি। অনেকেই এটি ভাগ্যের বিধান হিসাবে মেনে নিলেও ক্ষোভের আগুন অনুভব করতে অসুবিধা হয়নি। প্রথম দিন পৌঁছে সড়কপথে গেলাম ভোমরা স্থল বন্দর এলাকায়। 

সেখানে ১৯৭১ স্বাধীনতা সংগ্রাম সময়ে কেটেছিল সংগ্রাম মুখর কিছু দিন। ৫১ বছরে কিছু কিছু পরিসংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জীবন যাত্রার পরিবর্তন দেখা গেলেও জীবনযাত্রার মান তেমন পরিবর্তন হয়েছে মনে হলো না। সুযোগ হলো সেখানে সীমান্তরক্ষী বাহিনী, স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলার। নবপ্রজন্মের সাথীরা স্মৃতিচারণ ধারণ করলেন নানা মাধ্যমে। সন্ধ্যায় স্থানীয় সার্কিট হাউসে আমাদের সফর আয়োজকদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলাপ হলো নাগর উন্নয়নের নানা বিষয়ে। ইতিমধ্যে সফর সঙ্গী বেতার টিভি প্রখ্যাত ভাষ্যকার শামসুল ইসলাম যোগ দেয়ায় আলোচনা ভিন্ন মাত্রা পেলো।

১৯ আগস্ট ২০২২ সাতক্ষিরা ভাষ্যকার ফোরামের দুটি আয়োজন মাইল ফলক হয়ে থাকবে।সাতক্ষিরা স্টেডিয়ামে স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনের গুণীজন, জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে গুণীজনসহ আমাদের সম্বর্ধনা দেয়া হলো। সুযোগ হলো স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গন, উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করার। ইতিমধ্যে আকাশ ভেঙে নামলো স্বস্তির বারিধারা।  দুপুরে স্থানীয় একটি চমৎকার মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায়ের পর উপাদেয় দুপুরের খাবার খেলাম। ঝড়ো হাওয়া আর ভারী বর্ষণ উপেক্ষা করে অপরাহ্নে প্রতন্ত অঞ্চলে ফুটবল খেলায় ব্যাপক উৎসাহী দর্শক দেখে দেশের ফুটবল সম্ভাবনা নিয়ে উৎসাহ জাগলো। অনেক দিন পর শামুসল ইসলামের সাথে খেলার ধারাবিবরণী দিলাম।

বৃষ্টিতে অনেকটা কাক ভেজা হয়ে ফিরলাম, কিছু সময় পর স্থানীয় অধিবাসী প্রখ্যাত ফিফা রেফারী তায়েব হাসানের আতিথেয়তায় মনোরম পরিবেশে রাতের খাবার খেলাম। সাতক্ষিরা তথা বাংলাদেশের খেলাধুলার সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলো। পরদিন কালীগঞ্জ, শ্যামনগর হয়ে সুন্দরবন যাবার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ বৈরী আবহাওয়ার কারণে সূচি বাতিল করে ফিরলাম ঢাকায় আরো এক আরামদায়ক সড়ক ভ্রমণ শেষে। আর যাই হোক পদ্মা সেতু সেতু সড়ক যোগাযোগ স্বস্তিদায়ক করেছে মানতেই হবে। তবে ঢাকা পৌঁছে গুলিস্তান এলাকায় ব্যাপক যানজট আর অব্যবস্থাপনা পীড়াদায়ক বলতেই হবে।কিভাবে যে কেটে গেলো বিমূর্ত সময় বলতে পারবো না। সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট অঞ্চলে সবুজ শিল্পায়ন, সৌর বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থার আনুসাঙ্গিক সুবিধাদির ব্যাপক উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখলাম। মনে হলো প্রথম প্রয়োজন জনগণকে উন্নয়ন সচেতন আর দায়িত্ব শীল করে তোলা। পরিবেশ নিয়েও কাজ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে শিল্পের বিষয়সহ কৃষি ভিত্তিক বিকাশের অবারিত সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনার। দক্ষিণ বাংলা উন্নয়ন সংস্থা নাম কিছু গড়ে তুলে এর মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন করা যায় কিনা ভাবতে হবে। কোনো ভাবেই যেন উন্নয়নের যাঁতাকলে সবুজ শান্ত পরিবেশ যেন ধূলি ধূসর মলিন না হয় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যেন বিদ্যুৎ,জ্বালানি নিয়ে অঞ্চলের মানুষদের ভাবতে না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। 

একদিন বিরত নিয়েই ছুতে গিয়েছিলাম টাঙ্গাইল হয়ে সিরাজগঞ্জ। যাত্রা পথে একজন উদীয়মান মেধাবী তরুণী আরিশার পরিবারের সঙ্গে দেখা হলো। ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী আরিশা ইতিমধ্যে গান, কবিতা নিয়ে ব্যাপক পরিচিতি ও নাম করেছে স্থানীয় আর জাতীয় পর্যায়ে। আলাপে বুঝলাম প্রকৌশলী হতে চায়। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। স্বপ্ন আছে আকাশ ছোয়ার। আশীর্বাদ করি দিগন্ত ছুঁয়ে যাক আরিশার প্রতিভা।

যমুনা সেতু পেরিয়ে অপরাহ্নে পশ্চিম অঞ্চল গ্যাস কোম্পানির অতিথি ভবনে উর্ধ্বতন কর্মকর্তদের সঙ্গে মূল্যবান সময় কাটলো।পর দিন কর্তাদের সঙ্গে বিদ্যমান বিশ্ব জ্বালানি সংকট বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ আর করণীয় বিষয়ে মত বিনিময় করলাম। অনেক কিছু জানলাম, শুনলাম। তবে বিদ্যমান জ্বালানি সংকট নিয়ে সবাইকেই উৎকণ্ঠিত মনে হলো। দুপুরে আবাসিক এলাকায় আমের ছাড়া রোপন করে সবুজ চত্বরকে আরো সবুজ করলাম। পশ্চিম অঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের দক্ষ নেতৃত্বে কোম্পানিটি সার্বিকভাবে উন্নয়ন সুসমন্বিত এবং পরিবেশ সম্মত রেখেছে দেখে ভালো লাগলো।

তবে কয়েক দিনের ঝটিকা সফরে বিদ্যমান জ্বালানি সংকটের শাশ্রয়ীর অশুভ অভিজ্ঞতা আমার ভালো লাগে নি। অস্বাভাবিক জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে সবকিছুর ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি জনজীবন অসহনীয় করে তুলছে। আমি আবারও বলছি, সরকারের বিভিন্ন ব্যবস্থা আশু পরিবর্তন না আনলে অচিরে জনরোষ বিস্ফোরণে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।


শেয়ার করুন